পৃথিবীর একমাত্র ভূমিবিহীন রাষ্ট্রের খুঁটিনাটি

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ।। বিচিত্র সংবাদ ঃ   পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রেরই একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড থাকে। তবে এমন একটি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রয়েছে যার কোনো ভূমি নেই। পৃথিবীর মাটিবিহীন একমাত্র রাষ্ট্রটির নাম প্রিন্সিপালিটি অব সিল্যান্ড। সংক্ষেপে একে সিল্যান্ডও বলা হয়। মূলত এটির অবকাঠামোটি গড়ে উঠেছে একটি বিশাল ডুবন্ত জাহাজের উপরে।

সিল্যান্ড পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র। প্রকৃতপক্ষে এটি কোনো রাষ্ট্র নয়, একে বলা হয় অনুরাষ্ট্র। পৃথিবীর কোনো সার্বভৌম দেশ বা জাতিসংঘ একে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়নি। কারও স্বীকৃতি না মিললেও দেশটি নিজেদের সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়। দেশটির নিজস্ব পতাকা, জাতীয় সংগীত, মুদ্রা, পাসপোর্টসহ সবই রয়েছে।ইংল্যান্ডের সমুদ্রতীর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে উত্তর সাগরে এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটি অবস্থিত। ক্ষুদ্রতম এই দেশটির মোট আয়তন ৫৫০ বর্গমিটার বা ০.০২৫ বর্গ কিলোমিটার। দেশটির একটি রাজধানীও রয়েছে, যার নাম এইচ এম ফোর্ট রাফস। দেশটিতে প্রচলিত ভাষা ইংরেজি এবং মুদ্রার নাম সিল্যান্ড ডলার। যদিও বাইরের কোনো দেশে এ মুদ্রার প্রচলন নেই। তবে তাদের দাবি, এ মুদ্রার মান আমেরিকান ডলারের সমপর্যায়ের।

বিস্তীর্ণ জলরাশিবেষ্টিত এ দেশটিতে প্রবেশ করলে একটিমাত্র ঘরই চোখে পড়বে। এটিই এ দেশের রাজপ্রাসাদ হিসেবে বিবেচিত হয়। রাজপ্রাসাদের ওপর দেশটির নিজস্ব পতাকাও উড়তে দেখা যায়। এখানকার জনসংখ্যা ২৭ দাবি করা হলেও স্থায়ী জনসংখ্যা চার থেকে পাঁচজন। তারা সবাই বেটস পরিবারের সদস্য।

সাধারণ জ্ঞানের বইয়ে কমবেশি আমরা সবাই পড়েছি পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দেশ হলো ভ্যাটিক্যান সিটি। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দেশ হলো সিল্যান্ড। তবে এ দেশটিকে কোনো সার্বভৌম দেশই স্বাধীনতা দেয়নি, বিধায়ই ভ্যাটিকানকেই ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ধরা হয়।

সিল্যান্ড আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সেনা ও নৌবাহিনী কর্তৃক স্থাপিত একটি সামুদ্রিক দুর্গ। সেসময় ইংল্যান্ডকে বিভিন্ন দেশের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে এরকম কয়েকটি দূর্গ নির্মাণ করা হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে রয়্যাল নেভি ১৯৫৬ সালে এ দূর্গটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সকল জিনিসপত্র নিয়ে চলে যায়। ফলে এই অবকাঠামোটি পরিত্যক্ত হিসেবে পড়ে থাকে বেশ কয়েক বছর।

এরপর ১৯৬৭ সালে এখানে একটি অবৈধ বেতার সম্প্রচারকারী দল অবস্থান নেয়। তারা এই স্থানটি তাদের হেলিকপ্টারের ল্যান্ডিং প্যাড হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। সে বছরই আরেক বেতার সম্প্রচারকারী রয় বেটস তাদের উচ্ছেদ করে এই স্থানটির দখল নেন। বেটস তার স্ত্রীর জন্মদিন ২ সেপ্টেম্বরে একে ‘প্রিন্সিপ্যালিটি অব সিল্যান্ড’ নামে এক সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেন।

এই অবকাঠামোটির অবস্থান আন্তর্জাতিক জলসীমায় হওয়ায় এখানে কোনো দেশেরই একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে যে কেউ এখানে অবস্থান করতে পারবে। এছাড়া এটি সে সময়ের ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাইরে থাকায় রয়েল নেভি এখানে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারেনি।

পৃথিবীর সকল দেশকেই বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করে সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়। সিল্যান্ডও তার ব্যতিক্রম নয়। দেশটি দখল করার চেষ্টা থেমে থাকেনি বাইরের লোকজনের। কিছু বিচ্ছিন্ন গ্রুপ ও চোরাকারবারীদের দল বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সিল্যান্ড দখল করতে পারেনি। তবে ১৯৭৮ সালে একদল ডাচ হীরা ব্যবসায়ী কৌশলে দেশটি প্রায় দখল করেই ফেলেছিল। পরে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বেটস পরিবার পুনারায় সিল্যান্ডের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

সিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা রয় বেটস মৃত্যুবরণ করেন ২০১২ সালে। বর্তমানে সিল্যান্ডের প্রিন্স হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন বেটসের ছেলে মাইকেল। মাইকেল ছাড়াও দেশটিতে আরও থাকেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও তিন সন্তান। তার স্ত্রী মেই শি চিন সেনাবাহিনীর একজন মেজর হিসেবে দায়িত্বপালন করেছিলেন। মাইকেলের তিন সন্তানেরা হলেন- জেমস, লিয়াম ও চারলোট।ইন্টারনেটে সিল্যান্ডের নিজস্ব একটি ওয়েবসাইটও (sealandgov.org) রয়েছে। সেখানে সিল্যান্ডের ডাকটিকিট, মুদ্রাসহ নানা স্মারক জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি কেনা যায় সিল্যান্ডের স্যার, লর্ড, ব্যারন, কাউন্ট প্রভৃতি পদবী। এমনকি সিল্যান্ডের একটি নির্দিষ্ট অংশ স্মারক হিসেবে কেনাও যায়। তবে এগুলো কিনতে পারা গেলেও সেখানে থাকা যায় না। দেশটির স্বার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন জোগাতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।সিল্যান্ড বেড়াতে যেতে চাইলে করতে হবে সে দেশের পাসপোর্ট। যদিও বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে এ পাসপোর্টের কোনো মূল্যই নেই। বর্তমানে সিল্যান্ডের প্রিন্সের আমন্ত্রণ পেলেও ঘুরে আসা যায় সেখান থেকে। তবে এরকম আমন্ত্রণ পাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা খুবই কম। সংবাদ প্রকাশঃ  ১৪২০২১ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

Print Friendly, PDF & Email