পহেলা বৈশাখে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষ -এমপি বাহার

সিটিভি নিউজ।।      নেকবর হোসেন  কুমিল্লা প্রতিনিধি===আপন জাতিসত্তার গৌরব ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের চেতনায় হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রাণের উচ্ছ্বাসে কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষ বরণ করেছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ সালকে।

বোরবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখের এ দিনটিতে নব নির্মাণের আত্মপ্রত্যয়ী চেতনার দুয়ার মেলে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনগুলো উৎসবমুখর কর্মসূচির মধ্যদিয়ে নববর্ষ উদযাপনে মেতে উঠে। প্রত্মতত্ত্ব সমৃদ্ধ সমতটের প্রাচীন জনপদ কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষ পহেলা বৈশাখের দিনটিতে অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে উঠে।

‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ কালজয়ী গানের মধ্যদিয়ে সমতটের প্রাচীন জনপদ কুমিল্লায় সকাল ৯টায় বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে। বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ সাল বরণ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কুমিল্লা-৬ আসনের এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আকম বাহাউদ্দিন বাহার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমপি বাহার নব প্রত্যয়ে নতুন বছরকে বরণ করে অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক চেতনায় সবাইকে জেগে ওঠার আহবান জানিয়ে বলেন, অন্যায় ও সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াবার শক্তি-সাহস অর্জন করতে হবে। নব উদ্যমে জেগে উঠতে হবে দেশের সমৃদ্ধি অগ্রগতির লক্ষ্যে। বর্ষবরণ উৎসবের মধ্যদিয়ে আমাদের জাতি সত্ত্বার বিকাশ ঘটে। আর এভাবেই সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে বিজয়ের পথে এগিয়ে চলতে অনুপ্রেরণা যোগাবে বাঙালির বাংলা নববর্ষ।এমপি বাহার আরও বলেন, নববর্ষ বাঙালি জাতির চিরায়ত কৃষ্টি আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙলা নববর্ষ উদযাপন নিয়ে বিরোধিতার সুযোগ নেই। আমাদের দৈনন্দিন কাজে নতুন বছরের নতুন প্রত্যাশায় আশার আলো জাগিয়ে তুলতে হবে। তবেই আমাদের আগামির পথচলায় খুলে দেবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা সিটি মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা কুমিল্লাবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাংলা নববর্ষ আমাদের প্রাণের মেলার একটি সমাবেশ। প্রতিবছর বৈশাখ আমাদের চিরায়ত সংস্কৃতিকে মনে প্রাণে লালনের শিক্ষাই দিয়ে যায়। নতুন বছরের নতুন দিনে সকল অসুন্দরকে জলাঞ্জলি দিয়ে সত্য সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

জেলা প্রশাসক মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, বাঙালির জীবনে উৎসবের রঙ ছড়িয়ে দিয়েছে প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। নতুন বছরের নতুন প্রত্যাশায় সকল হিংসা বিদ্বেষ, বিশৃঙ্খলা দূর হয়ে সমাজে জ্বলে উঠবে আশার আলো।

উদ্বোধনী পর্ব শেষে সকাল সাড়ে ৯টায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কুমিল্লার সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরেরর মানুষের অংশগ্রহণে কান্দিরপাড় ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রাঙ্গন থেকে নগরীতে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা বের হয়। বর্ণিল শোভাযাত্রাটি শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।

এসময় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন এমপি আকম বাহাউদ্দিন বাহার, কুমিল্লা সিটি মেয়র ডা. তাহসিন বাহার সূচনা, জেলা প্রশাসক মু. মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার আবদুল মান্নানসহ সাংবাদিক, সামাজিক- সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠান শেষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কুমিল্লা স্টেশন ক্লাবে লাঠিখেলা, মোরগ লড়াই ও সাপখেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ঘুড়ি উৎসব।

কুমিল্লায় বর্ষবরণ উৎসবের আমেজ ঘরের আঙিনা ছেড়ে ছড়িয়ে পড়ে পথ-ঘাট আর মাঠে ময়দানে। শিশু থেকে বুড়ো কেউ বাদ থাকেনি লোকজ সংস্কৃতি ও প্রবাহমান জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে বাঁধা আবনমান পহেলা বৈশাখের উৎসাহ উদ্দিপনা থেকে।

পহেলা বৈশাখের দিনটিতে সকাল থেকেই নগরী ও গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি রাস্তাঘাট লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। রং-বেরংয়ের পোষাক পড়ে শিশু থেকে শুরু করে সব বযসী নারী পুরুষ ঘুরে বেরিয়েছে। যেখানেই বৈশাখের অনুষ্ঠান সেখানেই বৈশাখী সাজে জড়ো হয়েছে মানুষ। নগরীর শিশু উদ্যান ও ধর্মসাগর পাড়ে মানুষের ছিল উপচে পড়া ভিড়।

কুমিল্লা টাউনহল মাঠে নানা পণ্য-পসরা ঘিরে জমে উঠে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। মেলায় ছিল শিশুকিশোর থেকে শুরু করে সববয়সীদের ভিড়। নগর, গ্রাম-গঞ্জের দোকানপাটে হালখাতাও পালন হয়েছে। প্রতিটি দোকান রঙ্গিন কাগজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। হালখাতা ঘিরে দোকানে দোকানে মিষ্টি আপ্যায়নের দৃশ্য পথচারিসহ সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও পান্তা ইলিশে এবারে কুমিল্লায় বর্ষবরণ আয়োজন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।

পহেলা বৈশাখে সকাল থেকে রাজগঞ্জ বাজারের মাছের মেলা মূল বাজার ছাড়িয়ে রাজগঞ্জ ট্রাফিক মোড় ও মোগলটুলির হাইস্কুল এলাকা পর্যন্ত গড়িয়েছে।

এদিকে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট তাদের বর্ণাঢ্য কর্মসূচি সাজিয়ে তুলে এবারের বর্ষবরণ উৎসবে। নগরীর পার্কের জামতলায় সংগঠনটি চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষ সহ বর্ণময় অনুষ্ঠান করে মানুষকে আনন্দ দেয়। পহেলা বৈশাখের সার্বিক আয়োজন ঘিরে কুমিল্লার আইন শৃংখলা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো।

এবারে পহেলা বৈশাখে কুমিল্লার সকল আয়োজনে মানুষের উপস্থিতি, উচ্ছ্বাস আর আনন্দের যে ফলগুধারা প্রবাহিত হয়েছে তা থেকে আবারও প্রমানিত হয়েছে বৈশাখ বাঙালির জীবনে নতুন সম্ভাবনা, নতুন প্রত্যাশা জাগিয়ে তোলে। আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে একাত্ম থাকার ডাক দিয়ে যায়।

সংবাদ প্রকাশঃ ১৪০৪২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like>  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ