নিজ উপজেলায় বিএনপি দলীয় নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ কুমিল্লা (উঃ) জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব দেবীদ্বারের তারেক মূন্সী

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি  নিউজ।।   এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ সংবাদদাতা জানান=  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি বিলুপ্ত করে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই আহবায়ক কমিটিতে- বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার নির্বাচনী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সী এবং তার পুত্র সাবেক যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ব্যারিস্টার রিজবিউল আহসান মুন্সীকে রাখা হয়নি। স্ত্রী সাবেক যুগ্ম-সভাপতি বেগম মাজেদা আহসান মূন্সীকে রাখা হলেও তার সমর্থিত ঘনিষ্ঠদের রাখা হয়নি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে ৩ বছর ৮ মাস অর্থাৎ ৪৪ মাস পর ৪১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ আহবায়ক কমিটির উদ্যোগে আগামী ৩ মাসের মধ্যে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান সরকারকে কমিটির আহবায়ক ও এএফএম তারেক মুন্সীকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সোমবার দেবীদ্বারে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪১ তম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় কুমিল্লা (উঃ) জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির বিষয়টি উত্থাপন হলে উক্ত কমিটিকে বিতর্কীত কমিটি আখ্যা দিয়ে বক্তাদের আলোচনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা- ৪ দেবীদ্বার নির্বাচনী এলাকার বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সীকে সভাপতি এবং আক্তারুজ্জামান সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সীসহ পরিবারের ৩ সদস্যই কুমিল্লা (উঃ) জেলা কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। এদের মধ্যে কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সী’র স্ত্রী বেগম মাজেদা আহসান মুন্সী যুগ্ম- আহবায়ক পদে এবং পুত্র ব্যারিস্টার রিজবিউল আহসান মুন্সী যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক পদে ছিলেন। বিএনপি কুমিল্লা (উঃ) জেলার সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ শাহজাহান মোল্লা বলেন, আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মূন্সী আওয়ামী পরিবারের লোক। এএফএম তারেক মূন্সী কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার নির্বাচনী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক উপ-মন্ত্রী ও বর্তমান আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এএফএম ফখরুল ইসলাম মূন্সীর ছোট ভাই এবং কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার নির্বাচনী এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এর আপন চাচা। তারেক মূন্সী বিএনপির পরিচয় দিলেও আদতে বিএনপির বিপক্ষে এবং আ’লীগের পক্ষে কাজ করেছেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে এবং ভাই (সহোদর) এএফএম ফখরুল মূন্সীর পক্ষে কাজ করেছেন। এএফএম তারেক মূন্সীর ভাতিজা রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ২০০৯ সালে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন, তখন নিজ ভাতিজা রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের পক্ষে কাজ করেন। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তারেক মূন্সী নিজেই আওয়ামীলীগের একাংশের সমর্থন নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে পোষ্টার বানিয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালান। ওই নির্বাচনে এএফএম তারেক মূন্সীর বড় ভাই আ’লীগ কেšদ্রীয় উপদেষ্টা ফখরুল মূন্সী ও ভাতিজা রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এমপির সহযোগীতায় মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সীকে ৩৭দিন জেল খাটান। একই নিয়মে ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র এবং ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ভাতিজা রাজী মোহাম্মদ ফখরুলে পক্ষে কাজ করেছেন। ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারী দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে তারেক মূন্সী আ’লীগের একংশের সমর্থনে বিজয়ী হতে বিএনপি থেকে নির্বাচন করেছিলেন। ওই সময় বনকোট ভোটকেন্দ্রে নৌকা পেয়েছিল মাত্র ১৬ ভোট। যে কেন্দ্রটি আ’লীগ দলীয় এমপি এবং আ’লীগ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টার কেন্দ্র ছিল ওই কেন্দ্রটি। কুমিল্লা (উঃ) জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মূন্সী তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব কথা ষড়যন্ত্র। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করা কালে একটি পোষ্টার বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি এডিট করে অপপ্রচার করেছে। চলমান রাজনীতিতে তরুনদের সামনে এগিয়ে আনার প্রত্যয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া আমাকে যোগ্য মনে করেই কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব করেছেন। আমি গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটধিকার রক্ষা এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি রোধে রাজপথে আছি। যারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন, তারা গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমাকে ভোট দেননি, নৌকার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, সাবেক বিএনপি দলীয় সাংসদ আমার রাজনৈতিক গুরু, তিনি আমাকে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি বানিয়েছেন। তার মনোনয়নেই আমি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করেছি। পারিবারিকভাবে এএফএম ফখরুল ইসলাম মূন্সী আমার বড় ভাই, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল আমার ভাতিজা এবং সাবেক বিএনপি দলীয় এমপি মঞ্জুরুল আহসান মূন্সী আমার চাচাতো ভাই। প্রবীণ রাজনীতিক কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার নির্বাচনী এলাকার ৫ বারের নির্বাচিত বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সীসহ তার স্ত্রী, পুত্র এবং ত্যাগী নেতাদের কমিটিতে না রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, আমার বয়স হয়েছে, আমাকে জোর করে কুমিল্লা উত্তর জেলা সভাপতি বানানো হয়েছিল। আমি শহীদ জিয়া এবং দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করি, বিএনপিতে আছি এবং থাকব। এখনকার কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের অনুপস্থিতি থাকা স্বাভাবিক, কারন কমিটিগুলো হয়ই বানিজ্যিকীকরনে। যারা রাতারাতি ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে নেতৃত্বে আসছেন তারা তার জবাব সময়ে পাবেন। ওনার স্ত্রী বেগম মাজেদা আহসান মূন্সীকে আহবায়ক কমিটিতে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, মাজেদা আহসান মূন্সী ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর দলীয় কোন পদে থাকার পক্ষে নন। তিনিও আহবায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করবেন।

সংবাদ প্রকাশঃ  ৩১-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email