নাসিকের ১১তম বাজেটে শত কোটি টাকা কমে আসছে!

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : আসছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এগারোতম বাজেট। সিটি করপোরেশন গঠন পরবর্তী ২০১২ সালে প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট ঘোষনা করা হয়। এই বাজেট ছিল ৩০৭ কোটি টাকা। সবশেষ ১০ম বাজেট ছিল ৬৮৮ কোটি ২৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৬ টাকা। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের নগর ভবন প্রাঙ্গণে ঘোষনা হবে নাসিকের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট। নাসিকের এই বাজেট গতবারের বাজেট তুলনায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা কমে দাড়িয়েছে ৫৮৮ কোটি ৬৯ লক্ষ ১০ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হেমায়েত হোসেন ২০২০-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নগর ভবন প্রাঙ্গণে ঘোষণা করবেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২০২১-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট। এ বছর বাজেট গত বছরের তুলনায় প্রায় একশ কোটি টাকা কমেছে। সিটি করপোরেশনের নতুন অর্থবছরের বাজেট ৫৮৮ কোটি ৬৯ লক্ষ ১০ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। ইতিপূর্বে যে বাজেটের কথা বলেছিলাম সেটা আমাদের রিভাইস বাজেট ছিল। রিভাইস বাজেট বেশি ছিল। এখন বাজেটের পরিমান কমেছে। কারণ, আমাদের ৫ বছর মেয়াদী দুটো প্রকল্প ছিল। এই দুটো এ বছর শেষ হয়েছে। প্রকল্প গুলোর দ্বিতীয় ধাপ আবার শুরু হলে তখন বাজেটও বাড়বে।
২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হিসেবে ঘোষনা করা হয়। ২০০৩ সাল থেকে পৌরসভায় চেয়ারম্যান এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠন পরবর্তীতে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। প্রায় ১৯ বছরে পৌরসভায় থেকে সিটি করপোরেশন গঠন পরবর্তী উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল। তবে নাসিকের পরিকল্পনা আরো সুষ্ঠু হলে এই উন্নয়ন আরো বাড়তে পারত এবং নাসিকের বাজেট গতানুগতিক না করে বাস্তবমুখী করা উচিত বলে মনে করছেন তারা। এ প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলোচনায় আসন্ন বাজেটকে জনবান্ধবমুখী করার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন জেলার কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সুধীজন। একইসাথে নাসিকের বিগত ১০টি বাজেটের বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তাদের অভিমত জানিয়েছেন।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বিগত বাজেট ও আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গে বলেছেন, সিটি করপোরেশনে প্রকল্পের ভিত্তিতে কাজ হচ্ছে। তবে নাসিকের বিগত বাজেট বাস্তবায়ন কতটা হয়েছে সেটা সম্পর্কে অবগত নই। অনেক গুলো বিষয় রয়েছে যেসব ক্ষেত্রে বাজেটে বরাদ্দ রাখা উচিত। আমি মনে করি, পৌর মিলনায়তনের যেকোন অনুষ্ঠানের জন্য যে ভাড়া নেওয়া হয়, সেটা অত্যাধিক। এই ভাড়ার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন থেকে ভতুর্কি দেওয়া উচিত। এবং এটার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা দরকার। আর সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাজেট থাকে না। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বরাদ্দ রাখার দাবি জানাচ্ছি। সাংস্কৃতিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি।
তৃতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপি নেতা এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বিগত বাজেটকে গনমুখী বাজেট নয় বলে মন্তব্য করে প্রসঙ্গে বলেন, শহরকে সৌন্দর্য্য করার কাজ করছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ শীতলক্ষ্যায় ব্রিজ, হকারদের পুনরবাসন করা। যে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, সেই বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন করা। সিটি করপোরেশন অ্যাপার্টমেন্ট বানাচ্ছে। এই অ্যাপার্টমেন্ট করার পিছনেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অ্যাপার্টমেন্ট করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের নাই। এই দায়িত্ব রাজউকের, বাংলাদেশ গৃহায়ন কতৃর্পক্ষের। আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, গনমুখী বাজেট করতে হবে, যেন সাধারণ মানুুষের উপকার হয়। এর আগের বাজেটগুলো গণমুখী ছিলনা। জলাবদ্ধতা, যানযট, বায়ুদূষণ সহ নানা সমস্যার শহর জর্জরিত। নারায়ণগঞ্জের যানযট নিরসন সহ ফ্লাইওভার করা জরুরি। এছাড়া যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদের পুনবার্সনের বরাদ্দ করা রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০ম বাজেট ও মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী তার কার্যক্রমে যথেষ্ট সফল হয়েছে বলে মন্ত্রব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক খররের পাতার সম্পাদক এডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম। সেইসময় থেকে জেলার উন্নয়ন ও সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করেন মাসুম বলেন, নাসিকের বাজেট হতে হবে গনমুখী ও উন্নয়নের বাজেট। ঘরে ঘরে সুপেয় পানির ব্যবস্থা হয় এক্ষেত্রে বাজেটে সবার্ধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সেইসাথে শহরের পরিচ্ছন্নতা সহ যানজট নিরসনের ব্যবস্থায় গুরুত্ব দিতে হবে। একইসাথে মূল শহরের উন্নয়ন দরকার। বাজেটের প্রকল্পে থাকা কাজ গুলো সময়মতো হলে বাজেট বাস্তবায়ন হয়। এছাড়া জনগণের কল্যানের জন্য বাজেটের সম্প্রসারন জরুরী। সিটি করপোরেশনে উন্নয়নমূলক প্রকল্প চলছে। তবে গত ১০ বছরের বাজেট ও নাসিকের সার্বিক উন্নয়নের ধারায় দেখে বলছি সবগুলো বাজেটই যথেষ্ট সফল হয়েছে।
নাসিক মেয়রের সেলিনা হায়াৎ আইভীর তার নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সিটি করপোরেশনে উন্নয়ন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন দ্বিতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত পরাজিত মেয়র প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। সিটি করপোরেশনের বিগত বছরগুলোর বাজেট বাস্তবায়ন সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি ওই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গত বছরের যে বাজেট ছিল তা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মতো এতো বড় সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে অপ্রতুল বাজেট। বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গায় যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে , নারায়ণগঞ্জে সকলদিকে সেভাবে উন্নয়ন হয়নি। ছোট শহর, কিন্তু ব্যাপক যানজট। কিন্তু যানজট নিরসনে পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নাই। শীতলক্ষ্যা নদী পারাপারে দুইপারের মানুষের ভোগান্তির শেষ নাই। সিটি করপোরেশন আবাসন তৈরী করছে। সেই আবাসন নিজস্ব লোকদের কাছে বিক্রি করে সিটি করপোরেশন অর্থের মালিক হচ্ছে। কিন্তু বাজেটে শিক্ষাখাতের জন্য তেমন কোনো বরাদ্দই গুরুত্ব পায় না। এগুলো না করে প্রতি ওয়ার্ডে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে ব্যয় করা উচিত। সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভূক্ত রাস্তা—ঘাট এখনো বেহাল দশায় আছে সেই সাথে আবার একটু বৃষ্টি হলেই তীব্র জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি তো আছেই। খেলার মাঠ করা উচিত। নারায়ণগঞ্জ অধ্যুষিত এলাকা। কিন্তু নাসিকের বাজেটে শ্রমিকদের স্বার্থে চোখে দেখার মতো কোন বরাদ্দ তাদের জন্য রাখা হয়েছে বলে আমার মনে হয়না। শ্রমজীবি মানুষের জন্য হোস্টেল করার ক্ষেত্রে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে গত কয়েকবছরে ভালো উন্নয়ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা পরিষদের প্রশাসক ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। তিনি এই বিষয়ে বলেন, সিটি করপোরেশনে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে শহর সৌন্দর্য্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে তারা কাজ করছে। আমরাও শহর সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি শহরকে যানজট মুক্ত করা সহ পরিবেশ সুন্দর হোক এটাই আমরা চাই। আমরা কর দেই কিন্তু আমরা শহরে সাচ্ছন্দ্যে হাঁটতে পারি না। আশাকরি, সিটি করপোরেশন আমাদের হাঁটার ব্যবস্থা করে দেবে। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাজেটের সম্প্রাসারণ প্রয়োজন।
আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সভাপতি হাজী নূরউদ্দিন সিটি করপোরেশনের বিগত বাজেট ও আসন্ন বাজেটের বিষয়ে বলেন, সিটি করপোরেশনে বিগত সময়ে বেশ কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। এখনো অনেক উন্নয়নমূলক প্রকল্প চলমান রয়েছে। তবে শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার আরো উন্নয়ন করতে হবে। সিটি করপোরেশনের গৃহস্থালি তরল বর্জ্য নদীতে ফেলার আগে ইটিপির (পরিশোধনাগার) মাধ্যমে পরিশোধন করা প্রয়োজন। এছাড়াও নগরবাসীর কাছে সুপেয় পানি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা তরান্বিত করতে হবে। উন্নয়নের স্বার্থে বাজেট বৃদ্ধির প্রয়োজন। আশা করছি সিটি করপোরেশনের বাজেট গত অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় কমপক্ষে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।  সংবাদ প্রকাশঃ  ১৭-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email