নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে চলছে ঘুষ দুর্নীতির মহোৎসব ঃ দালালরা দিচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন!

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে চলছে ঘুষ দুর্নীতির মহোৎসব। ঘুষ না দিলেই পাসপোর্টের আবেদন হয়ে যায় ত্রæটিপূর্ণ। দালাল ধরে ঘুষ দিলে ত্রæটি থাকলেও বিশেষ সংকেতে গ্রহণ করা হয় আবেদন। দালালদের দৌরাত্ম্য এতই বেপরো, তারা নিজেরাই দিচ্ছেন পুলিশ ভেরিফিকেশন! কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত দালাল চক্র পাসপোর্ট করতে আসা লোকদের কাছ থেকে প্রতিমাসে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, দেশের সবখানেই দালাল। এ অফিসেও দালাল থাকতে পারে
নাম প্রকাশ না করার সর্তে অফিসের জনৈক কর্মকর্তা জানান, , নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে দালাল চক্রের অর্থ বাণিজ্য আর অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের অনিয়ম চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্ট সেবা গ্রহীতাগণ। র‌্যাব ও পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়ে দালালদের গ্রেপ্তার ও পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নাম পরিচয়ে বানানো নকল সিল জব্দ করলেও বন্ধ হচ্ছেনা তাদের দৌরাত্ম্য।
অভিযোগ উঠেছে, দালালের মাধ্যমেই পাসপোর্ট করতে আসা লোকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন অফিসের কর্তারা। প্রত্যেক দালালের আলাদা কোর্ড নম্বর রয়েছে। ফলে আবেদন জমা হলেই অফিস কর্তারা বুঝতে পারেন আবেদনটি কোন দালালের মাধ্যমে জমা হয়েছে। কৌশল করে দালালরা আবেদনকারীকে দিয়ে সরকারি ফি ব্যাংকে জমা করায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ৪৮ পৃষ্টার ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সাধারণত ১৫-২১ কর্মদিবসে ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি (১০ কর্মদিবসে) ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতীব জরুরি (২ কর্মদিবসে) ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ফি ৮ আজার ৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা। ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১২ হাজার ৭৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা। সব ফির সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হবে। ১৮ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী আবেদনকারীরা কেবলমাত্র ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট পাবেন। অতি জরুরি আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদন সঙ্গে আনতে হবে।
নাগরিকদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে সরাসরি অফিসে আবেদন করে পাসপোর্ট পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। পাসপোর্ট অফিসে ছবি তোলা থেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট সব খানেই অনিয়ম। নিয়ম অনুযায়ী সকল কাজ করলেও ঘুষ না দিলে মিলে না সেবা। ত্রæটি ও বিভিন্ন অজুহাতে গ্রহণ করা হয় না আবেদন। দালাল ধরে অতিরিক্ত টাকা দিলে সহজে কাজ হয়ে যায়।
দালাল ছাড়া সরাসরি আবেদন করলে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। ফলে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজন বাধ্য হয়ে দালাল নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। দালালরাও পাসপোর্ট অফিসের সামনে ও আশপাশ এলাকায় কম্পিউটার দোকান খুলে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে বাণিজ্য। অফিসটিতে দৈনিক কমপক্ষে ৪ শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। তার মধ্যে দুতৃতীয়াংশই দালালদের মাধ্যমে। প্রতিটি পাসপোর্ট বাবদ ২ হাজার টাকা করে টেবিল খরচ হিসেবে দৈনিক অন্তত ৬ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যা মাসে দাঁড়ায় কোটি টাকার উপরে।
পাসপোর্ট করতে আসা ফতুল্লা এলাকার রাহিমা আক্তার বলেন, আমি দালাল না ধরে সরাসরি আবেদন জমা দিয়েছি ১ মাস হয়। অফিসে আসলে তথ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তথ্য কেন্দ্রে গেলে দোতলায় যোগাযোগ করতে বলেন। এভাবে একজন আরেক জনের কাছে পাঠায়। পাসপোর্ট কবে পাব তা নিশ্চত নই।
মিজমিজি এলাকার রাসেল নামে একজন বলেন, দালাল ধরে সরকারি ফি বাদে, ২ হাজার টাকা টেবিল খরচ, পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ১ হাজার আর দালালকে দেড় হাজার টাকা দিয়ে মাত্র ১৬ দিনে পাসপোর্ট পেয়েছি। তবে তিনি ওই দালালের নাম বলতে অনিহা প্রকাশ করেন।
এদিকে পরিচয় গোপন রেখে পাসপোর্ট করার কথা বলে এ প্রতিবেদক ইন্টারনেট অনলাইন সেবা নামক কম্পিউটার দোকানের দালাল নাজমুল হকের স্বরণাপন্ন হলে তিনি জানান, ৫ বছর মেয়াদে ১৫ দিনে পাসপোর্ট পেতে সরকারি ফি বাদে, সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিতে হবে। এত টাকা বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২ হাজার টাকা অফিসের টেবিল খরচ, ১ হাজার টাকা পুলিশ ভেরিফিকেশন আর বাকি টাকা অন্যান্য খরচ ও তার নিজের পারিশ্রমিক। পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আপনাকে টাকা দেব কেন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, বেশি বুঝলে ঘুরতে হবে।
দালালরা পুলিশ ভেরিফিকেশন বাবদ টাকা নেওয়ার কারণ খোঁজ করে জানা গেছে, চোখ কপালে উঠার মত তথ্য। তারা নিজেরাই পুলিশের সিল বানিয়ে স্বাক্ষর দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। পাসপোর্ট অফিস তা যাছাই করে না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা অঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দেশের সবখানেই দালাল। এ অফিসেও দালাল থাকতে পারে। আমি চাইলেও দালাল মুক্ত করতে পারব না। কারণ, লোকজন সরাসরি আমাদের কাছে না এসে ছুটে যায় দালালের কাছে। অনিয়ম ও ঘুষের অভিযোগ সরাসরি স্বীকার না করে বলেন, আমার অজান্তে অফিসের কেউ এসব কাজে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদ প্রকাশঃ ১২০৩২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like>  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ