নারায়ণগঞ্জে স্কুল ছাত্রী জিসা মনির ঘটনায় প্রভাবশালীদের থাবা

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : ভুক্তভোগী খুনও হয়নি, ধর্ষণেরও শিকার হয়নি। কিন্তু তার পরেও আদালতে তিনজন দিয়েছেন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী। ৫১ দিন পর সেই স্কুল ছাত্রী যখন জীবিত ফিরে আসে তখনই ঘটে যায় লংকাকান্ড। নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশব্যাপী আলোচিত হয়ে উঠে এই ঘটনা। ইতোমধ্যে এই ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে। সেই সাথে এক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে বর্তমানে এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি সরকার দলীয় প্রভাবশালী মহল এই পুরো ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৎপর হয়ে উঠেছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের রক্ষায় তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দিনরাত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কথিত আসামীদের পরিবারকে হুমকি ধমকি কিংবা অন্য কোনো উপায়ে ম্যানেজ করার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন।
জানা যায়, শহরের দেওভোগ এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে ৫ম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী জিসা আক্তার মনি (১৫) গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ হয়। মেয়ে নিখোঁজের প্রায় দুই সপ্তাহ পর গত ১৭ জুলাই সদর মডেল থানায় জিডি করেন কিশোরীর মা। পরে গত ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা। পরদিন ওই মামলায় পুলিশ বন্দরের খলিলনগর এলাকার মো. আব্দুল্লাহ (২২), বুরুন্দি পশ্চিমপাড়া এলাকার ইজিবাইক চালক রাকিব (১৯) ও ইস্পাহানী খেয়াঘাটের নৌকার মাঝি খলিলুর রহমানকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সেই সাথে গত ৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আসামিরা। স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, ওই স্কুল ছাত্রীকে নৌকায় করে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন তারা।
কিন্তু তাদের এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর হঠাৎ করেই গত ২৩ আগস্ট দুপুর আড়াইটায় বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকার একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে মা রেখা আক্তারকে ফোন দেয় জিসা আক্তার মনি। সেই সাথে তাকে জীবীত উদ্ধারও করা হয়। আর এই উদ্ধারের পর পরই নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশব্যাপী আলোচিত ঘটনা হয়ে উঠে হত্যা না করেও হত্যার বর্ণনা দেয়া স্বীকারোক্তি।
বর্তমানে এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা নিজেদেরকে আড়াল করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন মহলকে এই কাজে নিযুক্ত করেছেন। যদিও ইতোমধ্যে এই ঘটনায় সদর মডেল থানা ওসি আসাদুজ্জামান ও এস আই শামীমকে শোকজ করা হয়েছে। সেই সাথে এস আই শামীমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়াও সদর থানা পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল হাই ও এস আই শামীম হাইকোর্টে তলব করা হয়েছে। তারপরেও পুলিশ কর্মকর্তারা এই ঘটনায় নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারই অংশ হিসেবে সদর থানা ওসি আসাদুজ্জামান নিজেকে আড়ালে রাখতে আসামীপক্ষের লোকজন যেন কোন অভিযোগ না দিতে পারে সেজন্য কিসলু নামে এক সোর্সের সহযোগিতা নিয়ে মামলার আসামী আবদুল্লাহর বাবা আমজাদকে থানায় গিয়ে কথা বলার অনুরোধ করিয়েছেন।
এ বিষয়ে আবদুল্লাহার বাবা আমজাদ সাংবাদিকদের জানান, আসামীর বড়ভাইকে দিয়ে প্রথম ফোনটি করানো হয় ওসি আসাদুজ্জামানের পক্ষ থেকে। সেই বড়ভাই তাকে বলেন, ওসি সাহেব আমাদেরকে থানায় যেতে বলেছেন আমাদের সাথে কথা রয়েছে বলে। প্রতিত্তরে আমজাদ বলেন, আমার সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনার প্রয়োজন থাকলে আপনি সেখানে যান। এর একটু পরেই পুলিশের সোর্স কিসলু আমাকে ফোন করে বলেন, ওসি স্যার আপনাকে থানায় আসতে বলেছেন কথা আছে। আমজাদ কিসলুকে জানান, আমার সেখানে কোন প্রয়োজন নাই আমি থানায় যাবোনা।
এদিকে কথিত আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহমুদা আক্তার জানান, এই ঘটনায় আমার মক্কেলের পরিবারের সদস্যরা শঙ্কিত। মামলায় তারা জড়িত না ইতোমধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে তারপরেও তাদেরকে আবারও রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হচ্ছে। যদি তাদেরকে জামিনও দেয়া হয় তারপরেও তারা জীবন নিয়ে শঙ্কায় থেকে যাবেন। এ ব্যপারে আমি সকলের সহযোগিতা চাই।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী জানিয়েছেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সরকার দলীয় একজন প্রভাবশালী আইনজীবী এই বিষয়টিকে সহজভাবে নেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আসামী পক্ষের আইনজীবীদেরকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আসামী পক্ষের আইনজীবীরা যেন এই মামলাটিকে নিয়ে খুব বেশি তৎপর না সেজন্য বারবার তাদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে।
যদিও এ প্রসঙ্গে আসামী পক্ষের আইনজীবী মোঃ রোকন উদ্দিন জানিয়েছেন, আমরা কখনও এই বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিব না। যেখানে আমার মক্কেলরা ঘটনার সাথে জড়িতই না সেখানে তাদেরকে ফাঁসির কাঁছাকাছি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আর এই ঘটনায় অভিযুক্তরা ছাড় পেয়ে যাবেন এটা হতে পারে না।
আসামি আব্দুল্লাহর বাবা আজমত হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ওসি জড়িত। এসআই শামীম ওসির নির্দেশ ছাড়া কোথাও যেতে পারে না। তাই ওসির নির্দেশ ছাড়া এ ধরনের মামলা তো সাজাতে পারে না। এ মামলায় ওসির ইন্ধন রয়েছে।   সংবাদ প্রকাশঃ  ৩০২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=

Print Friendly, PDF & Email