নারায়ণগঞ্জে সক্রিয় অটোরিক্সা ছিনতাই ও চোর সিন্ডিকেট : মালিক ও চালকরা জিম্মি

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : হতদরিদ্র মানুষেরা রিক্সা বা ইজি বাইক চালিয়েই জীবন-জীবীকা নির্বাহ করে। এই রিক্সা-চালকের উপর ভরসা করে থাকে তার পরিবার। আর এই হতদরিদ্র মানুষের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, সাধারণ এসব মানুষের জন্য একমাত্র বাহন রিক্সা বা ব্যাটারী চালিত ইজি বাইক ও ব্যাটারী চালিত মিশুক।
শহর ও শহরতলীর মানুষের এই বাহনটি ছিনতাই ও চুরি হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা, বন্দর সহ ৭টি থানা এলাকায়। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যাটারী চালিত রিক্সা, ইজিবাইক ও মিশুক ছিনতাই ও চুরি হয়ে থাকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা এলাকায়। একটি শক্তিশালী চোর সিন্ডিকেট নিরীহ রিক্সা চালককে ভুলভাল বুঝিয়ে অনেক সময় নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে চুরি করছে বাহনগুলো। আবার সেই চুরি যাওয়া রিকশা চোর সিন্ডিকেট প্রকৃত মালিকের সাথে যোগাযোগ করে তা আবার বিক্রি করছে।
প্রতিমাসে সদর উপজেলা থেকে একশটিরও বেশি রিকশা চুরি হয় বলে জানা গেছে। আর এই চোর সিন্ডিকেট প্রতিসাসে মালিক ও চালকদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়। নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে এই চক্রের সদস্যদের নির্মূল করা যায়নি। দিনে দিনে এই চক্রের সদস্য সংখ্যাও বেড়েই চলছে বলে।
সিন্ডিকেটের কারণেই অনেক মালিককে সর্বশান্ত হতে হয়েছে। আবার রিক্সা বা ইজিবাইক চালকরাও প্রতিদিন অজানা আশঙ্কা নিয়ে বাহনগুলো চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করছে। বছরের পর বছর ধরে রিক্সা ছিনতাই ও চোর সিন্ডিকেটের কাছে নারায়ণগঞ্জ জেলা জুড়ে কয়েক হাজার রিক্সা গ্যারেজের মালিক ও চালকরা জিম্মি হয়ে আছে।
সিন্ডিকেটের মূল নাম সর্বস্ব বেশ কিছু প্রভাবশালী রিক্সা মালিক রয়েছে বলে অভিযোগ। চোর একটি রিক্সা চুরি করে সেই রিকশাটি তার গোপন আস্তানায় নিয়ে যায়। পরে চালক তার রিক্সা চুরি যাওয়ার বিষয়ে তার মালিককে অবহিত করে। এরপরই মূলত শুরু হয় চুরি যাওয়া রিকশা ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া।
যে ভাবে চুরি হচ্ছে রিক্সা বা ইজি বাইক:
চুরি করার জন্য একজন চোরকে যাত্রীবেশে রিক্সা, ইজি বাইক বা মিশুকে চড়তে হয়। এরপর ওই চোর রিক্সা বা ইজি বাইক চালককে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায় সে ব্যক্তি। এক পর্যায়ে ১’শ টাকার ভাড়ার স্থলে রিকশা চালককে ২’শ টাকা দেয় চোর সিন্ডিকেটের সদস্য। এতে চালক ওই যাত্রীর প্রতি খুশি হয়।
অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিক্সা চোর রিক্সা থেকে নেমে কিছু দূর হেটে, পুনরায় ডেকে নতুন গন্তব্যে অথবা যেখান থেকে রিক্সা উঠেছিল সেখানে যাওয়ার কথা বলে ওই রিক্সা চালককে। রিক্সা চালক একবার অতিরিক্ত ভাড়া পেয়ে পুনরায় ওই যাত্রীকে তার রিক্সা বা ইজি বাইকে উঠিয়ে নেয়। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মূলত রিক্সা চালককে আকর্ষণ করে সিন্ডিকেটের সদস্য।
এরপর সিন্ডিকেটের সদস্য তার সুবিধা মতো একটি নতুন জায়গায় গিয়ে অবস্থান করে। ওই স্থানে সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরাও তখন অবস্থান করে। এরপর রিক্সার চালককে পান বা সিগারেট অথবা কোনো কোমল পানীয় দোকান থেকে আনার কথা বলেন। রিক্সা চালক ঐ যাত্রীবেশি চোর সিন্ডিকেটের সদস্যকে বিশ্বাস করে তাকে রিক্সায় মধ্যে রেখেই দোকান থেকে কোন পন্য কিনতে যায়।
আর এরপরই ঘটে অঘটন। রিক্সা বা ইজি বাইক চালক তার রেখে যাওয়া রিক্সাটি ফিরে এসে যাত্রীকে আর খুঁজে পাননা। এছাড়াও চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা কখনো রোগী, কখনো পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবার কখনো বড় ধনের কোনো নেতার নাটক মঞ্চস্থ করেও সড়ক থেকে রিক্সা বা ইজি বাইক চুরি করে থাকে বলেও দাবি সূত্রের।
যেভাবে চুরি যাওয়া রিক্সা বা ইজি বাইক উদ্ধার হয়:
রিক্সা বা ইজি বাইক চুরি হওয়ার পর চালক তার মালিককে বিষয়টি অবহিত করে। মালিক প্রথমে দালাল চক্রের একজনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে। এসময় দালালকে যোগাযোগের জন্য তার মোবাইলে প্রথমে কিছু টাকা পাঠাতে হয়। এরপরই মূলত শুরু হয় চুরি যাওয়া রিক্সা-ইজিবাইক বা মিশুক উদ্ধারের কার্যক্রম।
এসময় কোনো স্থান থেকে কখন, কীভাবে চুরি হয়েছে ও চোর সিন্ডিকেট চুরি হওয়ার আগে রিক্সা চালককে কি কি সংকেত দিয়েছিল তাও দালালকে বলতে হয়। সমস্ত ঘটনা শুনে এক অথবা দুই দিন পর চুরি হওয়া রিক্সা বা ইজি বাইকের সন্ধান মালিক পক্ষকে দেন দালাল।
এরপর শুরু হয় দর কষাকষি। পায়ে চালানো রিক্সা চুরি হলে চোর সিন্ডিকেটকে তা ৮/১০ হাজার টাকায় মালিককে বুঝিয়ে দেন। বর্তমান সময়ে ইজি বাইক বা ব্যাটারি চালিক রিক্সা বেড়ে যাওয়ায় চোর সিন্ডিকেটের পোয়াবারো হয়ে গেছে। ইজি বাইক (বড় অটো) চুরি হলে তার দাম হাকা হয় ৬০/৭০ হাজার টাকা (অনেক সময় বড় ইজি বাইক চোর সিন্ডিকেট ফেরত দেয় না)।
ব্যাটারী চালিত রিক্সার দাম হাকা হয় ২৫/৩০ হাজার টাকা। মালিক পক্ষ চোরের দালারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের চাওয়া টাকার মধ্যে কিছু কম বেশি করে অবশেষে চুরি যাওয়া রিক্সা, ইজি বাইক ফেরত পান। অনেক সময় ব্যাটারী চালিত ইজি বাইকের ভালো ব্যাটারী খুলে রেখে ব্যাটারী ছাড়া বাহন টাকা নিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয় বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
কারা চোরাই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ?
অভিযোগ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলার শহর ও শহরতলীর মধ্যে বড় বড় রিক্সা গ্যারেজ বা ছোট কিছু গ্যারেজ মালিক এই রিক্সা চোর সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। ফতুল্লার কাশিপুর, মাসদাইর, সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি আবার কখনো পোস্তাগোলা এলাকার চোরাই সিন্ডিকেটও নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে রিক্সা চুরি করে মাসে কামিয়ে নিচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। জেলার ৭টি থানার মধ্যে সব চাইতে বেশি রিক্সা চুরির ঘটনা ঘটে সদর উপজেলা এলাকায়।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা রিক্সা চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হাওলাদার বলেন, চোর সিন্ডিকেটের কারণে মালিক ও রিক্সা চালকরা সর্বশান্ত হয়ে পড়ছে। কোনোভাবেই এই সিন্ডিকেটকে ভাঙ্গা যাচ্ছে না। যদি প্রশাসন চোর সিন্ডিকেটের ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা চায় তাহালে আমরা তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করবো।
বিগত দিনের তুলনায় বর্তমানে রিক্সা, ইজি বাইক ও মিশুক চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। জেলার সব চাইতে বেশি রিকশা চুরি হয়ে থাকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা এলাকায়। রিক্সা শ্রমিকদের পক্ষে চোর সিন্ডিকেট নির্মূলে যতো ধরনের সহযোগীতা প্রয়োজন আমরা করবো।
এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, রিক্সা চুরি হওয়ার পর মালিক পক্ষ থানায় কোনো অভিযোগ করে না। তারা চোরদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের রিক্সা উদ্ধার করে। যদি কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদ প্রকাশঃ  ০৯-১২-২০২১ইং । (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email