নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবি ২৯ জনের লাশ উদ্ধার

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যায় ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ এম.এল সাবিত আল হাসান উদ্ধার উদ্ধার করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া প্রায় ১৮ ঘন্টা পর বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় নদীর তলদেশ থেকে টেনে লঞ্চটি নদীর পূর্ব তীরে নিয়ে রাখে। গতকাল সোমবার দুপুর সোয়া বারোটার দিকে যখন লঞ্চটি উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসা হয় তখন ভেতরে কেবল লাশের স্তুুপ দেখা যায়। গতকাল লঞ্চের ভেতর থেকে শিশু, নারী ও পুরুষের ২১ টি লাশ উদ্ধার করা হয়। আর কোন লাশ না পাওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষনা করা হয়। এর আগে রবিবার ডুবে যাওয়ার ৬ ঘন্টার মধ্যে রাত ১২ টার দিকে ৫ নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। এ ছাড়া ভাসমান অবস্থায় আরো ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আরো ৭ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে স্বজনরা দাবী করেছে। নিহতদের মধ্যে নারী ১৬ জন, পুরুষ ৯ জন ও শিশু ৪ জন। রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকায় একটি কোস্টার জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চে প্রায় শতাধিক যাত্রী ছিল। লঞ্চ ডুবির পরপরই ২৯ জন সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয়। ডুবে যাওয়া লঞ্চটি ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে রাত থেকে বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড, দমকল বাহিনী, নৌ ও থানা পুলিশ উদ্ধার অভিযার চালায়।
নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে তারা হলেন, মুন্সীগঞ্জ সদরের নুড়াইতলী এলাকার রুনা আক্তার (২৪), মুন্সীগঞ্জের মোলাকান্দি চৌদ্দমোড়া এলাকার সুমন আলী ব্যাপারীর ছেলে সোলেমান ব্যাপারী (৬০), তাঁর স্ত্রী বেবী বেগম (৬০), মুন্সীগঞ্জ মালপাড়া হারাধন সাহার স্ত্রী সুনিতা সাহা (৪০), মুন্সীগঞ্জ সদরের উত্তর চর মসুরা অলি উল্লাহর স্ত্রী পাখিনা (৪৫), একই এলাকার আরিফের স্ত্রী বিথি (১৮), তাঁদের সন্তান ১ বছর বয়সী আরিফা (১), মুন্সীগঞ্জ সদরের প্রীতিময়ের স্ত্রী প্রতিমা শর্মা (৫৩), মুন্সিগঞ্জের মোল্লাকান্দি চরকিশোরগঞ্জের শামসুদ্দিন (৯০), তাঁর স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫), বরিশালের উজিরপুর উটরা এলাকার হাফিজুর রহমানের স্ত্রী তাহমিনা (২০), মুন্সিগঞ্জের দক্ষিণ কেওয়ার দেবিন্দ্র দাসের ছেলে নারায়ণ দাস (৬৫), তাঁর স্ত্রী পারবতি রানী দাস (৪৫), বন্দরের কামরুজ্জামান, স্বর্ণা দম্পতির শিশু সন্তান আব্দুল জমীর (০২), মুন্সীগঞ্জ সদরের নুরপুর রিকাবি এলাকার শাহ আলম মৃধা (৫৫), মুন্সীগঞ্জ সদরের রতনপাতরের স্ত্রী মহারানী (৩৭), যাত্রাবাড়ি শনিআখড়ার আনোয়ার হোসেন (৫৫), তাঁর স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩০), মুন্সিগঞ্জ সদরের শেয়াগাও পূর্বপাড়া মিঠুন মিয়ার স্ত্রী ছাউদা আক্তার লতা (১৮), শরীয়তপুর নরিয়া এলাকার নুরবকশীর ছেলে আব্দুল খালেক (৭০), ঝালকাঠির কাঠালিয়া এলাকার তোফাজ্জেল হোসেনের মেয়ে জিবু (১৩), বরিশালের স্বরূপকাঠি এলাকার মো. সেকান্দারের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৫০), এবং বন্দরের দক্ষিণ সাবদী এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে মো. নয়ন (২৯), ৭ মাসের শিশু কন্যা মানছুরা। রাত সাড়ে ৭টায় বিকাশ (২২) ও সাদিয়া (১১) লাশ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক জানান, লঞ্চের ভেতর থেকে গতকাল শিশু, নারী ও পুরুষের ২১ টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে রবিবার গভীর রাতে লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর রাতেই উদ্ধারকর্মীরা ৫ নারীর লাশ উদ্ধার করে। নিহতরা হলেন, মুন্সিগঞ্জ সদরের উত্তর চরমসুরার ওয়ালিউল্লাহের স্ত্রী পাখিনা (৪৫), মুন্সিগঞ্জ সদরের প্রীতিময় শর্মার স্ত্রী প্রতিমা শর্মা (৫৩), মালপাড়ার হারাধন সাহার স্ত্রী সুনিতা সাহা (৪০) ও নোয়াগাঁও পূর্বপাড়ার দুখু মিয়ার মেয়ে ছাউদা আক্তার লতা (১৮)। রাতে উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে শুধুমাত্র একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। রাতেই ৫ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্বজনদের দাবি অনুযায়ী লঞ্চ ডুবির ঘটনায় ৭ জন নিখোঁজ রয়েছে। ভাসমান অবস্থায় আরো ১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে গতকাল দুপুর সোয়া বারোটার দিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি তীরে আনা হলে ভেতরে লাশ দেখা যায়। লঞ্চের ভেতর থেকে ২১টি লাশ উদ্ধার করা হয়। নতুন করে আর কোন লাশ না পাওয়ায় বিকেল ৪টায় উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষনা করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ নৌ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শহিদুল আলম জানান, চরসৈয়দপুর এলাকায় নির্মাণাধীন শীতলক্ষ্যা ৩য় সেতুর কাছাকাছি স্থানে এই লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটে। একটি কোস্টার জাহাজের ধাক্কায় এম.এল রাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটি ডুবে যায়। প্রায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে মুন্সিগঞ্জের উদ্যোশে ছেড়ে যায় লঞ্চটি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর ১৬ নম্বর পিলারের নিরাপত্তকর্মী মোহাম্মদ হালিম জানান, এসকেএল-৩ (এম ০১২৬৪৩) নামের একটি কোস্টার জাহাজ লঞ্চটিকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে অন্তত ২০০ মিটার টেনে নিয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে লঞ্চটি যাত্রীসহ নদীতে ডুবে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর ১৬ নম্বর পিলারের নিরাপত্তকর্মী মোহাম্মদ হালিম বলেন, এসকেএল-৩ (এম: ০১২৬৪৩) নামের একটি কোস্টার জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে অন্তত ২০০ মিটার লঞ্চটিকে টেনে নিয়ে যায়। এরপর লঞ্চটি যাত্রীসহ ডুবে যায়।
বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার বলেন, রবিবার সন্ধ্যার যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাশের বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ ঘাট দিয়ে ১৩ জন যাত্রী সাঁতরে উঠেছেন। পশ্চিম পাশের ঘাট দিয়ে আরও ১৬ জন জীবিত অবস্থায় উঠেছেন। রাতে পাঁচজন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি মনিরুজ্জামান রাজা জানান, লঞ্চটিতে অন্তত ৫০ জনের বেশী যাত্রী ছিল। সন্ধ্যা ৫টা ৫৬ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের উদ্যোশে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চটি আনুমানিক সোয়া ছয়টার দিকে দুর্ঘটার কবলে পড়ে। এসকেএল-৩ নামক একটি কোস্টার জাহাজ পেছন থেকে লঞ্চটিতে ধাক্কা দেয়।
ডুবে যাওয়া লঞ্চটির মালিকের নাম আলাল হোসেন। তিনি মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা বলে জানান লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, এই রুটে ২৫টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। আমাদের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর আয়তন ছোট। কোস্টার জাহাজগুলো এই রুটে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। বারবার বলার পরও তারা কোনো সমঝোতা করে চলাচল করে না। কোস্টার জাহাজগুলো যেন নিয়ম মেনে যেন চলাচল করে এ দাবি তোলেন তিনি।
লঞ্চের যাত্রী ছিলেন মুন্সিগঞ্জ সদরের মাটহাটি এলাকার বাসিন্দা মোবারক মাদবর (৪৭) জানান, বড় একটি জাহাজের সাথে ধাক্কা লেগে অর্ধশতাধিক যাত্রীসহ লঞ্চটি ডুবে যায়। তিনি সাতরে তীরে ফিরতে পেরেছেন। তবে বাকিদের কোনো খবর তিনি দিতে পারেননি।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা জানান, নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় টার্মিনাল থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চটিতে আনুমানিক ৫০ জনের বেশী যাত্রী ছিল। ঘটনাস্থলে বিআইডব্লিউটিএ, কোস্ট গার্ড, দমকল বাহিনী, থানা ও নৌ পুলিশের কর্মীরা উদ্ধার অভিযানে নেমেছে। কালবৈশাখী ঝড় ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার অভিযান কিছুটা বিঘœ ঘটে।
দুই তদন্ত কমিটি গঠন ঃ কোস্টার জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববিকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হবে বলেও জানান ডিসি। অন্যদিকে বিআইডব্লিউটির নৌ ট্রাফিক পুলিশের পরিচালক রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সংবাদ প্রকাশঃ  ৫২০২১ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ