নারায়ণগঞ্জে বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় অপহরণকারী চক্রে আতঙ্কে গার্মেন্ট শ্রমিকরা

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের অপহরণ করে একটি চক্র মুক্তিপণ আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা। তাঁরা বলছেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ দিলেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে মুক্তিপণ দিয়েই শ্রমিকদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসছে তাঁদের পরিবার।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বিসিক শিল্পনগরীর কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা আবু রাকিব হোসেন লিপন জানান, তাঁর বাবা লেবু মিয়া (৩৯) বিসিক শিল্পনগরীতে লোড-আনলোডের কাজ করেন। গত ১০ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তাঁর বাবা বাসা থেকে কাজে যান। বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় রাতে তাঁর বাবার মোবাইল ফোনে কল দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন ১১ এপ্রিল সকাল ৯টায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি লেবুর মোবাইল ফোন থেকে কল করে তাঁকে (লিপন)। ওই ব্যক্তি জানায় তাঁর বাবা লেবু তাদের কাছে রয়েছে। তাঁকে ছাড়াতে হলে মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। টাকা না দিয়ে টালবাহানা করলে বা আইনের আশ্রয় নিলে তাঁর বাবাকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
লেবুর ছেলে লিপন ও বেয়াই মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে রাত ১২টায় তাঁরা থানায় জিডি করতে গেলে থানা থেকে পরদিন সকালে যেতে বলা হয়। পরদিন সকালে গেলে তারা জিডি না করে একটি অভিযোগ লিখে এসআই সোহাগ সাহাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয় ও র‌্যাবের কাছে যেতে বলে। তাঁরা কাগজ নিয়ে র‌্যাবের কাছে গেলে র‌্যাব বলে, যে কাগজ নিয়ে তারা এসেছে সেখানে থানার সিল, স্বাক্ষর নেই। থানায় জিডি করে তাঁদের কাছে যেতে বলে র‌্যাব। তাঁরা আবার থানায় গিয়ে জিডি করতে চাইলে পুলিশ জিডি নেয়নি। পরে বিকাশে মুক্তিপণ দিলে লেবুকে ছেড়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
লেবুর খোঁজের দাবিতে ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের আলী আহম্মদ পৌর মিলনায়তনের সামনে বিক্ষোভ করে বিসিক থেকে আসা শতাধিক শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, তিনি বিসিক শিল্পনগরী-সংলগ্ন শাসনগাঁওয়ের পান্না মোল্লার ভাড়াটিয়া। একই বাড়ির ভাড়াটিয়া আশরাফুলকে গত ৯ এপ্রিল অপহরণ করা হয়। অপহরণ করে তাঁকে নির্যাতন করে পরিবারের কাছে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বিকাশে তারা টাকা নেয়। এরপর আশরাফুলকে অপহরণকারীরা ছেড়ে দেয়। তবে তাঁরাও থানায় গিয়ে পুলিশের সহযোগিতা পাননি।
অপহরণকারীদের হাত থেকে ফিরে এসেছেন গার্মেন্ট শ্রমিক সামিউল ইসলাম। তিনিও এসেছিলেন বিক্ষোভে। তিনি জানান, প্রথম রোজায় বেলা ১১টার দিকে তাঁকে বিসিক থেকে অচেতন করে অপহরণ করা হয়। পরে তাঁকে একটি কক্ষে নিয়ে আটকিয়ে প্রচ- মারধর করে পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয়। পরিবারের লোকজন তাঁকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনে।
তিনি জানান, তাঁকে ভয় দেখানো হয় যে, পুলিশকে জানালে তাঁর ও পরিবারের ক্ষতি করা হবে। তাই ভয়ে তিনি পুলিশকে জানাননি। এ ছাড়া পুলিশকে জানিয়ে অন্যদের কোনো লাভ হয় না বলে তিনি জানাতে উৎসাহবোধ করেননি।
বিসিক শিল্পনগরী এলাকার বাড়িওয়ালা পান্না মোল্লা জানান, দুইটি ঘটনা তাঁর বাড়ির ভাড়াটিয়ার। তবে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। যেসব শ্রমিক বিসিক শিল্পনগরীতে বা আশপাশে কাজ করে তাঁদের পঁচানব্বই ভাগ বহিরাগত। ফলে এই অপহরণকারী চক্র তাদের টার্গেট করে মুক্তিপণ আদায় করছে। বিকাশে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিলে গত বুধবার রাতে লেবুকে অচেতন অবস্থায় মাসদাইর কবরস্থানের পাশে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে লেবু মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি ভয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)’র নির্বাহী সভাপতি ও বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, এসব শ্রমিক তাঁদের কাছে আসেনি। যদি এ রকম অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তাঁরা এই চক্রকে ধরতে চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
ফতুল্লা থানার ওসি রিজাউল হক দীপু জানান, লেবুসহ বাকি অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে মন্তব্য করতে হবে। তবে মুক্তিপণ আদায়ের মতো বিষয় এখানে হয় না। গার্মেন্ট শ্রমিকরা নিজেরাই এক শ্রমিক আরেক শ্রমিককে আটক করে টাকা নেয়। এমন অনেক চক্রকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সংবাদ প্রকাশঃ ১৯০৪২০২৩ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like>  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

Print Friendly, PDF & Email