না’গঞ্জে মৃত স্কুল ছাত্রী ফিরে আসা পুলিশের গাফলতিকে দায়ি করে হাইকোর্ট বিচারিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : নারায়ণগঞ্জে মৃত স্কুল ছাত্রী কিশোরী জিসা মনি’র জীবিত ফিরে আসার মামলা তদন্তে পুলিশের গাফিলতি ছিল উল্লেখ প্রতিবেদন দাখিল করেছে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি। সেই সঙ্গে গ্রেপ্তার ৩ আসামীর কাছ থেকে নির্যাতনের মুখে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারী) দুপুরে বিচারপতি এম ইনায়েততু রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি দাখিল করেন তদন্ত কমিটির প্রধান নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌস। ২৭ পৃষ্ঠার বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনে ওই ঘটনায় পুলিশের তদন্তে গাফলতির বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে ওই ঘটনায় জবানবন্দি নেওয়া ম্যাজিস্ট্রেটদের কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। যদিও ওই কিশোরী জীবিত ফিরে আসার পর কথিত আসামীদের জবানবন্দি নেওয়া ম্যাজিস্ট্রেটদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছিল। প্রশ্ন উঠেছিল পুলিশ নির্যাতন করে আসামীদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিতে পাঠালেও দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট যদি এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতেন তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না। উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের পর মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৩ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্কুলছাত্রীকে অপহরণ মামলায় তিন আসামির ধর্ষণের পর হত্যার জবানবন্দি ও দেড় মাস পর জিসা মনি নামে সেই স্কুলছাত্রীর ফিরে আসার ঘটনায় বিচারিক তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌসকে।
ফারহানা ফেরদৌস ওই প্রতিবেদনের মতামত অংশে হাইকোর্টকে জানান, বিচারিক অনুসন্ধানে মামলার এজাহার, সাক্ষীদের প্রদত্ত জবানবন্দি, ভিকটিমের ২২ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দি, আসামিদের ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, জব্দকৃত আলামতসহ মামলাটির সার্বিক দিক পর্যালোচনা করা হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৭ ধারা অনুযায়ী আসামিদের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর, ১৬৪ ধারায় আসামিদের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটদের কোনও অনিয়ম বিচারিক অনুসন্ধানকালে প্রতীয়মান হয়নি। তবে পুলিশ হেফাজতে (পুলিশ রিমান্ড) থাকাকালীন তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল-মামুনের বিরুদ্ধে আসামিদের মারধর, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে স্বীকারোক্তি প্রদানে বাধ্য করার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ জুলাই নিখোঁজ হয় দেওভোগের একটি সরকারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জিসা মনি (১৫)। এই ঘটনার একমাস পর ৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন জিসার বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন। গ্রেফতার করা হয় বন্দর উপজেলার বুরুন্ডি খলিলনগর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২২), বুরুন্ডি পশ্চিমপাড়া এলাকার সামসুদ্দিনের ছেলে রকিব (১৯) ও নৌকার মাঝি খলিলকে (৩৬)। নির্যাতনের মুখে আসামিরা আদালতে জবানবন্দি দেয় যে, জিসা মনিকে অপহরণের পর গণধর্ষণ শেষে শ^াসরোধে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর ২৩ আগস্ট সশরীরে ফিরে আসে জিসা মনি। সে জানায়, প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়ে স্বামীর সাথে আত্মগোপনে ছিল এতদিন।
এই ঘটনায় দিনকালসহ স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয় সারাদেশে। বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এরপর আদালত আইনজীবীকে লিখিতভাবে হাইকোর্টে আবেদন করতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২৫ আগস্ট ওই ঘটনায় রিভিশন আবেদন দাখিল করা হয়। রিভিশন আবেদনে সদর মডেল থানায় করা মামলা এবং মামলা পরবর্তী প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা, বৈধতা এবং যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এছাড়া ওই মামলার নথি তলবেরও আবেদন করা হয়। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, মূল মামলার বাদী এবং আসামিদের বিবাদী করা হয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ জীবিত থাকার পরও নারায়ণগঞ্জের স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তি আদায় সংক্রান্ত সদর থানার কার্যক্রমের বিষয়ে বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে এই প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে নির্দেশের ধারাবাহিকতায় গত সোমবার হাইকোর্টে সিলগালা করে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়। আদালত এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৩ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছেন।

সংবাদ প্রকাশঃ  ৫২০২১ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

Print Friendly, PDF & Email