নওগাঁর মান্দায় ভাগিনাকে ডেকে এনে খালার সাথে বিয়ে দিলেন গ্রামের মাতব্বররা!

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ।।    নওগাঁর মান্দায় ৩৮ বছরের নারীর সঙ্গে জোরপূর্বক বিপ্লব হোসেন কুইক (১৭) নামে এক কলেজছাত্রের বিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহার বিরুদ্ধে।

ওই নারী যুবকের প্রতিবেশী সম্পর্কে খালা। বিপ্লব হোসেন কুইক সিংড়া গ্রামের আফসার আলী মন্ডলের ছেলে এবং মোহনপুর কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। গত ৬ জুন (শনিবার) রাতে উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সিংড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬ জুন দুপুরে বিপ্লব হোসেনকে বাড়ি থেকে একই গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর গ্রামের মাতব্বর আফাজ মাস্টার, তাইজুল, বাক্কার, জাম্মু, রশিদ, মোখলেছুর রহমান, কামরুল, বাচ্চুসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে মারপিট করা হয়। পরে তাকে ধরে নিয়ে গ্রামের একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় এবং ইউপি চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা এসেও নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগী কলেজছাত্র।

দুপুর থেকে রাত অবধি কয়েক দফায় তাকে নির্যাতন করা হয়। এরপর গ্রামের এক স্বামী পরিত্যক্তা তিন সন্তানের জননী ৩৮ বছরের নারীর সঙ্গে তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য প্রক্রিয়া চালানো হয়। ছেলের পরিবারকে বিষয়টি না জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশের রাত সাড়ে ১১টার দিকে গ্রামের মাতব্বরা ওই নারীর সঙ্গে তার বিয়ে দেন। শনিবার রাত থেকেই ওই নারী বিপ্লব হোসেনের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, গত দুই বছর থেকে গ্রামের বাক্কার হোসেন ও জাম্মু বিভিন্নভাবে তাকে বিরক্ত এবং কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি স্বামীকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। অবশেষে আমার স্বামীকে ভুল বুঝিয়ে তালাক (দির্ভোস) দেয়া হয়। তারাসহ আরও কয়েকজন মিলে ষড়যন্ত্র করে সম্পর্কে ভাগিনার সাথে জোরপূর্বক চেয়ারম্যানের নির্দেশে অন্যায়ভাবে বিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি অন্যায়কারীদের বিচার দাবি করছি।

ভুক্তভোগী কলেজছাত্র বিপ্লব হোসেন কুইক বলেন, আমার বয়স ১৭ বছর ৫ মাস। আমাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর গ্রামের একটি বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে নিয়ে গিয়ে গ্রামের মাতব্বর তাইজুল, আফাজ মাস্টার, রশিদ, মোখলেছুর রহমান, কামরুল, বাচ্চু, বাক্কারের নেতৃত্বে নির্যাতন করা হয়। পরে চেয়ারম্যান এসে আমাকে নির্যাতন করে এবং অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক খালার সাথে বিয়ে দেয়া হয়।

ছেলের বাবা আফসার আলী মন্ডল ও মা ফাহিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, তারা আমার ছেলেকে অনেক নির্যাতন করেছে। এরপর জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে বিয়ে দিয়েছে। বিয়ের পর ওই মেয়েকে নিয়ে এসে আমার বাড়ির দরজা ভেঙে জোর করে রেখে যায়। ছেলের তো বয়স হয়নি। আর ওই মেয়ে প্রতিবেশী সম্পর্কে শ্যালিকা হয়। তাকে তো আমরা ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিতে পারি না। ছেলেকে যারা নির্যাতন ও অন্যায় করেছে তাদের বিচার দাবি করছি প্রশাসনের কাছে।

স্থানীয় মাতব্বর আফাজ উদ্দিন মাস্টার বলেন, গোটা এলাকাবাসী জানে ওই নারীর সাথে ছেলেটির সম্পর্ক আছে। যেহেতু ছেলের বয়স হয়নি। আমি তাদের থানায় সোপর্দ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার তাদের বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের আয়োজনসহ সবকিছু চেয়ারম্যান নিজে করেছেন।

তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কাজী আমিনুল ইসলামের সহকারী রমজান আলী বলেন, রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেয়ারম্যান লোক পাঠিয়েছিল। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষের কাগজপত্র দেখে ছেলের বয়স কম দেখা যায়। এরপর আমি বিয়ে না পড়িয়ে চলে আসি। পরে কি হয়েছে জানি না।

মান্দার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই গ্রামের মাতব্বররা অপ্রাপ্ত ছেলের সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে আমার ওপর দায় চাপাতে চাচ্ছে।

মান্দা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদ প্রকাশঃ  ১০২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTV NEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।  CTVNEWS24  See More সিটিভি নিউজ।। =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=

Print Friendly, PDF & Email