দেবীদ্বারে জাতীয় মৎস সপ্তাহ পালিত হারিয়ে যাওয়া দেশী প্রজাতির মাছগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে

সিটিভি নিউজ ।।     এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ সংবাদদাতা জানান ====
দেবীদ্বারে মৎস সপ্তাহ পালন উপলক্ষে র‌্যালী আলোচনা সভা ও মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।
‘নিরাপদে মাছে ভরব দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’এ- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেবীদ্বারে মৎস সপ্তাহ পালন উপলক্ষে রোবার সকাল সাড়ে ১০টায় একটি র‌্যালী, উপজেলা পরিষদ চত্তরে পরিদর্শন শেষে উপজেলা পরিষদ পুকুরে রুই, কাতল, মৃগেলসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৩০ কেজী মাছের পোনা অবমুক্ত এবং সকার ১১টায় উপজেলা পরিষদ হল রোমে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
দেবীদ্বার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ গিয়াস উদ্দিন এর সভাপতিত্বে এবং মৎস সম্প্রসারন কর্মকর্তা বলাই চন্দ্র ভৌমিক এর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রৌফ, সাবেক সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মোঃ নাসির আহম্মেদ ভূঁইয়া, সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার, উপজেলা খামার ব্যবস্থাপক মোঃ মামুনুর রশিদ, মৎস চাষি আমিনুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান। স্বাগতিক বক্তব্য রাখেন, উপজেলা সিনিয়র উপজেলা মৎস কর্মকর্তা সুব্রত গোস্বামী।
আলোচকরা বলেন, দেশ এখন মাছে-ভাতে সয়ংসম্পূর্ণ। এখন আমরা দেশীয় উৎপাদিত মাছ বিদেশে রপ্তানী করতে পারি। ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, মাছ হবে আমাদের দেশের দ্বিতীয় রপ্তানীযোগ্য অর্থকারী ফসল। আমরা সেলক্ষে এগিয়ে যাচ্ছি।
এক সময় সারা দেশের খাল ও বিলে মিঠা পানির আড়াইশ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে এ সংখ্যা ২১০-এ দাঁড়িয়েছে। ৪০ প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তির তালিকায়। দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদী সংশ্লিষ্ট খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা ও জলাশয় ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থলের অভাব, ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছ ধরে ফেলা, ডোবা-নালা পুকুর ছেঁকে মাছ ধরা, বিদেশি রাক্ষুসে মাছের অবাধ চাষ ও মাছের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটানো।
যেসব মাছের প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মহাশোল, বাঁশপাতা, খইলশ্যা ও ভূতুম। এ ছাড়া পাবদা, টেংরা, বোয়াল, আইড় মাছের চাষ হচ্ছে। পাঙ্গাশের চাষ হচ্ছে আগে থেকেই। কৈ মাছেরও চাষ হচ্ছে। মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, অবাধে লবণ পানি তুলে বাগদা চিংড়ি চাষ, ফসলের খেতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের যথেচ্ছ ব্যবহার এবং মিঠাপানির অভাবে মৎস্য খনি হিসেবে পরিচিত দক্ষিণাঞ্চলে দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। মিঠাপানির সুস্বাদু মাছ এখন আর তেমন মিলছে না। দেশি মাছের বদলে এখন বাজারে জায়গা দখল করেছে চাষ করা পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, ক্রস ও কার্প জাতীয় মাছ। এছাড়াও কৃষি ও চাষাবাদ ব্যবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উজাড় হয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, ডারকা, মলা, ঢেলা, চেলা, শাল চোপরা, শৌল, বোয়াল, আইড়, ভ্যাদা, বুড়াল, বাইম, খলিসা, ফলি, চিংড়ি, মালান্দা, খরকাটি, গজার, শবেদা, চেং, টাকি, চিতল, গতা, পোয়া, বালিয়া, উপর চকুয়া, কাকিলাসহ প্রায় আড়াইশ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ। গ্রামে একসময় পৌষ-মাঘ মাসে পুকুর, খাল, ডোবা, ঘেরের পানি কমতে থাকলে দেশি মাছ ধরার ধুম পড়ত। অথচ এখন অনেক গ্রামেই দেশি প্রজাতির মাছ নেই। শীতকালের বাইরে বর্ষাকালে ধানের জমিতে কইয়া জাল, বড়শি ও চাই পেতে মাছ ধরার রীতিও হারিয়ে গেছে অনেক এলাকা থেকে। যারা একসময় পুকুর, খাল-বিল, ডোবা, নালায় মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা পূরণ করতেন। তাদের অনেকেই এখন বাজার থেকে মাছ কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। দুই দশক আগে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে প্রায় আড়াইশ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ পাওয়া যেত। এখন এগুলো বিলুপ্তির পথে।
আলোচকরা আরো বলেন, ১৫-১৬ বছর আগেও তেমন একটা মাছ কিনতাম না। শুধু ইলিশ মাছ কিনতাম। মাছের প্রয়োজন হলে বাড়ির সামনের খালে বা নদীতে চলে যেতাম। খালে, পুকুরে তখন এত মাছ ছিল কেউ খালি হাতে নেমেও হাতিয়ে মাছ ধরতে পারতেন।
আলোচকরা আরো বলেন, জাল, ডালা, খুচন নিয়ে মাছ ধরতে নেমে যেত ছোট-বড় সবাই। কেউ কেউ হাতিয়ে মাছ ধরত। শোল, গজার, টাকি, চিংড়ি, শিং, কই, টেংরা, পাবদা, ফলিসহ বিভিন্ন জাতের মাছ ধরা পড়ত। তবে এখন পুকুরে চেলা, পুঁটি, বেলে ছাড়া কোনো মাছ নেই। এছাড়াও ধান পচে হাওরের পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হয়ে অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারণেই মাছ মরে যাচ্ছে।

সংবাদ প্রকাশঃ  ২৫-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ