দেবিদ্বারে অনিকের মৃত্যুতে সকল শ্রেণী ও মানুষজনের কান্নার মিছিল যেন থামছেই না

সিটিভি নিউজ।।    এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ  সংবাদদাতা জানান ====
ময়নাাতদন্ত শেষে শুক্রবার বেলা আড়াইটায় স্কুল ছাত্র অনিকের মরদেহ নিজ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। অনিকের মরদেহ বাড়িতে আনায় এলাকায় শোকের মাতম শুরু হয়। হিন্দু- মুসলিম পরিবারের সকল শ্রেণী ও বয়সের মানুষজনের কান্নার মিছিল যেন থামছেই না। এ এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।
সন্তানের শোকে মুহ্যমান অনিকের ‘বাবা’ অর্জুণ চন্দ্র বর্মণ, বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। আর একটু পর পর বলছেন ওরা ৪ জন মিলে আমার ছেলেকে কিল- ঘুষি, লাথি মারতে মারতে, বুকের পাজোড়া ভেঙ্গে ফেলেছে। দেহের ভেতরে কিছু অক্ষত রাখেনি। রক্তবমি করতে করতেই আমার ছেলে রক্তশূণ্য হয়ে মারা গেল।
ওর সহপাঠিরা যখন আমার ছেলেকে মার-ধর করছিল তখন ৪ জন মেডাম মোবাইল ফোন আর লুডু খেলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আমার সন্তানের মৃত্যুর জন্য স্কুলের শিক্ষকরাই দায়ী। আমর ছেলে আর রিক্সার পেছনে দাড়িয়ে কাতর স্বরে বলবেনা আর বাবা আমাকে ৫টাকা দাও। পুলিশ বলছে আমার ছেলের জন্ডিস রোগ ছিল। হে ভগবান আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার তোমার কাছেই চাই।
দেবীদ্বার উপজেলার ৩নং রসুলপুর ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামের ‘২২নং জীবনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ গত মঙ্গলবার টিফিন আওয়ারে ওই মারধরের ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, অনিক শান্ত প্রকৃতির ছিল, তাকে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা প্রায়ই মারধর করত। অনিকের বাবা আগে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করতেন। গোমতী নদীতে এখন আর পানি থাকেনা, তাই মাছও পাননা। এখন তিনি অটোরিক্সা চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করতেন। অনিকের বয়স যখন ৬ বছর এবং তার ছোট বোন সুষ্মিতা বর্মণ’র বয়স ৩মাস তখন তাদের মা’ রুপসী রানী বর্মণ মারা যান। তাদের বাবাই মায়ের আদর দিয়ে তাদের বড় করেন। এরই মধ্যে অর্জুণ আরো একটি বিয়ে করেন। ওই সংসারেও দেড় বছরের এক কণ্যা সন্তান রয়েছে।
সহপাঠিদের মার ধরে অনিক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তার তিন বন্ধু দুর্জয়, দিলীপ, দিপক তাকে বাড়ি এনে দিয়ে যায়। অনিক তার বাবাকে বলত বাবা আমি বাঁচতে চাই। গত দু’দিন স্থানীয় ইসহাক মার্কেটের গনী ডাক্তারের চিকিৎসাধীন ছিল। রক্তবমি করতে করতে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত ঢাকায় নেয়ার পথে কাইচপুর ব্রীজের কাছে যাওয়ার পর গত রাত ২টায় মারা যায়। আজ শুক্রবার পুলিশ তার মরদেহ কুমেক হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেন।
নিহত অনিক চন্দ্র বর্মণ(১১) জীবনপুর গ্রামের অটো রিক্সা চালক অর্জুণ চন্দ্র বর্মণের একমাত্র পুত্র। অনিক ‘২২নং জীবনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ত।
প্রতিবেশী পূর্ণীমা রানী বলেন, বিদ্যালয়ে মেডারা আসেন ঠিকই, বাড়ি থেকে কাঁথা নয়ে বিদ্যালয়ে বসেই সেলাই করেন,লুডু খেলেন, মোবাইল দেকেন, গল্প করেন। ঘটনার দিনও টিফিন আওয়ারে তৃতীয় শ্রেণী কক্ষে ঢুকে যখন অনিককে তার সহপাঠিরা মরছিল, মেডামরা তখন বিদ্যালয়েই ছিলেন।
ওই ঘটনায় সহকারী শিক্ষক শারমিন সুলতানা জানান, ঘটনার সময় লেইজার পেরিওড ছিল। আমরা তখন অফিস কক্ষে বসা। অনিকের মা’ এসে অভিযোগ করেন, ৪ জন ছাত্র মিলে তাকে বেধরক মার ধর করেছে। এর বিচার চাই। তখন ছেলেদের ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করি, তারা একজন আর একজন কিল ঘুষি মেরেছে এমনটাই বলল। আমরা মিলিয়ে দেই।
বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী তপন বর্মণ বলেন, তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র জাহিদ অনিকে ঘুষি মারে, জাহিদের পক্ষ হয়ে পঞ্চম শ্রেণীর জুবায়ের, রনী ও চতুর্থ শ্রেণীর জাহিদুল সহ ৪ জনেই অনিককে মারধর করে। বৃহস্পতিবার যখন হেড স্যারের কাছে অনিককে নিয়ে আসা হয়, তখন অনিক ঢলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। হেড স্যার তাকে উল্টো প্রশ্ন করে টয়লেটের পাইপ তুমি ভেঙ্গেছ, তার জরিমানা আট হাজার টাকা দিতে হবে। বিচারের গুরুত্বটা ওনার কাছে ছিলনা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন ভূঁইয়া জানান, অনিক সম্ভবত; আগে থেকেই অসুস্থ্য ছিল, কেউ কেউ বলেন তার জন্ডিস রোগ ছিল। তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন বিদ্যালয়ে এসে লুডু খেলেন, মোইল ফোন দেখেন, কাঁথা সেলই করেন, গল্প করেন। এসব কথার জবাবে প্রধান শিক্ষক বলেন, যারা এসব বলছেন তাদের কথা সঠিক নয়। আগের শিক্ষা ব্যবস্থা আর এখন নেই। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী একে অপরকে মেরেছে, তার আলোকে থানায় রসুলপুর ও সুবিল ইউপি চেয়ারম্যানদের উপস্থিতিতে ছেলের বাবা অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে।
এব্যাপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের সহপাঠিদের সাথে তার হাতাাতি হয়, তার বাবা থানায় অপমৃত্যুর ডায়েরী করেছেন। কারোর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি। ময়নাতদন্ত হয়েছে। রিপোর্ট আসুক আমরাও তদন্ত করে দেখি আসল সত্যটা কি। তার বাবা বলেছেন অনিকের জন্ডিস রোগ ছিল।

সংবাদ প্রকাশঃ  ২২-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ