ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৯টি ফুটওভারব্রীজ আধুনিকায়নে সওজের ৮ কোটি টাকার প্রকল্প ঘিরে লুটপাট

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পথচারীদের চলাচল নিরাপদ ও আরামদায়ক করার জন্য পথচারি সেতুতে (ফুটওভারব্রীজ) ছাউনি, সিড়িতে টাইলস, রাতের অন্ধকার দূর করার জন্য ইটালিয়ান বাতি, সোলার প্যানেল লাগানো, পুরাতন ভীম পরিবর্তন করে বিদেশে তৈরী ভিম লাগানোসহ আধুনিকায়নের কাজ করানো হয় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে।
সওজ এর সূত্রে জানা যায়, নয়টি পথচারি সেতু আধুনিকায়ন ও একটি নতুন নির্মাণে তিনটি আলাদা প্যাকেজে ৭ কোটি ৯১ লাখ ৭৪ হাজার টাকার কাজ করে ঠিকাদারকে বিলও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত ১৪ মাসেও পথচারি সেতুগুলোতে এক মুহুর্তের জন্যও বাতি লাগেনি, আলোও জ্বলেনি, লাগানো হয়নি টাইলস, বসানো হয়নি কোনো সোলার প্যানেল, একটি সেতুর ভীমও পরিবর্তন করা হয়নি। লাগানো হয়নি প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। অথচ এগুলোর জন্য বিল দেওয়া হয়েছে ৭৬ লাখ টাকার বেশী।
বিদেশী মালামাল কোন দেশের তা-ও জানেন না সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। বাতি জ্বালানোর জন্য বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগের আবেদনও করা হয়নি। এমন দুর্নীতি লাখ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে ।
দরপত্র দলিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনটি আলাদা প্যাকেজে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল, সানারপাড়, মৌচাক, নিউ-টাউন, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া ও মোগড়াপাড়া এই নয়টি সেতু মেরামত ও আধুনিকায়ন এবং কাজলায় একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়।
ঠিকাদারের কাজ শেষ দেখিয়ে বিল দেওয়া হয় ২০২১ সালের ৩০ জুন। এ কাজে বিল দেওয়া হয় মোট ৭ কোটি ৯১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এরমধ্যে শিমরাইলের দুটি এবং মোগড়াপাড়ায় একটি সেতুতে ২৫০ মেঘাওয়াটের ইটালিয়ান তৈরী ৪৮টি বাতি লাগানোর জন্য বিল দেওয়া হয় প্রতিটি ১৭ হাজার ৫৮১ টাকা করে মোট ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৯০৬ টাকা। এই সেতুগুলোর সিড়িতে টাইলস বসানোর জন্য বিল দেওয়া হয় ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪১ টাকা।
শিমরাইল মোড়ের পূর্ব পাশের সেতুর পুরাতন ভীম পরিবর্তন করে বিদেশে তৈরী নতুন ভীম লাগানোর জন্য বিল দেওয়া হয় ২৩ লাখ ৩ হাজার ৯৬৭ টাকা। অথচ এই ভীম নতুন না লাগিয়ে পুরাতনটাকেই রং করে নতুন বানানো হয়েছে। আর এই তিন সেতুতে ইটালিয়ান বাতি ও টাইলস আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। স্থানীয়রা কেউ এই সেতুগুলোতে আলো জ্বলতেও দেখেনি কখনো।
এদিকে অপর প্যাকেজে মৌচাক, সানাড়পাড়, নিউটাউন, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ ও শনির আখড়া এই ছয়টি সেতুতে মোট ৭২টি ইটালিয়ান তৈরী ২৫০ ওয়াটের মেটাল লাইট লাগানোর জন্য প্রতিটি ১৯ হাজার ৯৫০টাকা করে মোট ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪০০ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে।
রায়ের বাগ ও মাতুয়াইল সেতুতে টাইলস লাগানোর জন্য বিল দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার ৮২২ টাকা। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের জন্য বিল দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৯৯২ টাকা অথচ এই সেতুগুলোতে ইটালিয়ান বাতি, বৈদ্যুতিক সংযোগ ও টাইলস কোন কিছুই দেখা যায়নি।
কাজলায় নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ২৫০ ওয়াটের ৩০টি ইটালিয়ান মেটাল লাইট লাগানোর জন্য প্রতিটি ২০ হাজার ৯৩ টাকা করে ৬ লাখ ২ হাজার ৭৯০ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। সোলার প্যানেল বসানোর জন্য ৯৪ হাজার ৪১৬ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে এবং ১০০ বর্গ মিটার টাইল লাগানোর জন্য ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৯ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। অথচ সেখানে সামান্য পরিমান নিন্ম মানের টাইলস লাগানো হয়েছে আর ইটালিয়ান লাইট ও সোলার প্যানেল দেখা যায়নি। বৈদ্যুতিক সংযোগও নেই।
সরেজমিনে এই ৯টি ফুটওভারব্রীজ ঘুরে এবং সেখানকার লোকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে , এসকল পদচারি সেতুতে কোনদিনই আলো জ্বলেনি। এমনকি বাতি জ্বালানোর জন্য বিদ্যুতের সংযোগ পেতে বিদ্যুৎ বিভাগে আবেদনও করা হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক উপ-বিভাগ-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেনের কাছে পদচারি সেতুগুলোতে বাতি জ্বলে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ব্রীজ গুলোতে কাজ করা আছে আর বিদ্যুতের বিষয়টি প্রক্রিয়াকরণ অবস্থায় আছে। এছাড়া টাইলস লাগানোর বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাইলসের বিষয়টি আসলে আমার জানা নেই, এটি আমার একটু দেখতে হবে। পদচারি সেতুর সিড়িতে টাইলস ও ইটালিয়ান বাতি না লাগিয়ে কেন বিল দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর বাহিরে আমার আর কিছু জানা নেই। কোনো বিল সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারি না। এগুলো সব আমি আসার আগে হয়েছে। এছাড়া কথোপকথনের এক পর্যায় তার মিটিং আছে বলে তিনি আর কথা বলতে চান না।

সংবাদ প্রকাশঃ  ০৫-১০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ