সিটিভি নিউজ।। লাইফস্টাইল।। উম্মে নুসাইবা
এলাচ ঃ ভারতীয় উপমহাদেশের রসনা বিলাসের অন্যতম উপাদান মশলা। এলাচ তার অন্যতম। বেদ এ উল্লেখ আছে ‘দ্রাবিড়ীণাং ফলং’ অর্থাৎ এলাচ দানার কথা। এটি দ্রাবিড় অঞ্চলে হয়ে থাকে বলে এর নাম দ্রাবিড়ী। উত্তরবঙ্গ ও সিকিমেও পাওয়া যায় এ মশলাটি। ফল বহণকারী পুষ্পমঞ্জরীদুটি ‘এলাইয়া পড়ে’ বলে এর নাম ‘এলাচ’ হয়েছে বলে মনে করেন অনেক গবেষক। দ্রাবিড় ভাষায় একে বলে ‘এলা’। পৌরানিক আমল ¬েথকে সুপরিচিত এই মশলার কিছু ভেষজ গুনাবলীর কথা আজ জানা যাক-
এলাচ বাটা বা গুড়া ও তেল ব্যবহার করা হয় নানা কাজে।
১. পেটে বায়ু জমে নিঃসারিত না হলে এলাচের কাত্থ (বাটা) এক কাপ সকালের দিকে একবার খেলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
২. হজমের গোলযোগেও খালি পেটে এলাচ বাটা পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
৩. কোষ্ঠবদ্ধতায় এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ এলাচের কাত্থ একবার খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৪. শ্বাসকষ্টে বা এজমা থাকলে ২টি ছোট এলাচের এবং ২টি বড় এলাচের কাত্থ করে এক কাপ সেবনে উপশম পাওয়া যায়।
৫. হাঁপানি বা কার্ডিয়াক এজমার জন্য সমপরিমাণ পিপুল ও ছোট এলাচ চূর্ণ অল্প ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার হয়।
৬. গা-হাত-পায়ে ব্যথায় বা যন্ত্রণায় বড় এলাচের কাত্থ দিনে দুবার খেলে উপশম হয়।
৭. খিঁচুনি ধরা ব্যথায় এবং চুলকানির মত সমস্যায়ও এলাচ কার্যকরি ঔষধীর ভূমিকা রাখতে পারে।
হলুদ
হলুদ বা হলদি হলো হলুদ গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত এক প্রকারের মশলা। ভারত, বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রান্নায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি আদা পরিবারের অন্তর্গত একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। হলুদ গাছের আদি উৎস দক্ষিণ এশিয়া। এটি ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে জন্মে থাকে। হলুদ গাছের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাতের দরকার হয়। বছরে সাধারণত একবার হলুদ গাছের শিকড় তোলা হয়। পরের বছর পুরানো শিকড় থেকে নতুন গাছ গজায়।
হলুদ গাছের শিকড়কে কয়েক ঘণ্টা সিদ্ধ করা হয়, তার পর গরম চুলায় শুকানো হয়। এরপর এই শিকড়কে চূর্ণ করে গাঢ় হলুদ বর্ণের গুঁড়া পাওয়া যায়। এই হলুদ গুড়া দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশের খাদ্য প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়। তবে ঐতিহ্যগতভাবে এই শিকড় ভালোভাবে ধৌতকরণের পর শিল-পাটায় পানি সহযোগে বেটে নিয়ে হলুদের লেই তৈরি করা হয় যা সরাসরি রান্নায় ব্যবহার করা হয়।
এবার আসুন জেনে নেয়া যাক হলুদের গুনাবলিঃ
১. সাধারণ কাঁটা ছেঁড়ায় হলুদ এন্টিসেপ্টিকের কাজ করে।
২. মুখে জ্বালা-পোড়া করলে গরম পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে কুলকুচি করলে উপকার হয়।
৩. শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে লাগালে উপশম হয়।
৪. সূর্যের তাপে গা জ্বলে গেলে হলুদের পাউডারের মধ্যে বাদামের চূর্ণ এবং দই মিশিয়ে লাগালে ভাল অনুভব হয়।
৫. সর্দি-কাশি হলে হলুদ খেলে উপকার হয়। কাশি কমাতে হলে হলুদের টুকরা মুখে রেখে চুষলে আরাম বোধ হয়। এছাড়া এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে হলুদের গুঁড়ো এবং গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
৬. আয়ুর্বেদিক মতে, হলুদ রক্ত শুদ্ধ করে। হলুদের ফুলের পেস্ট লাগালে চর্ম রোগ দূর হয়।
৭. এটি চেহারার সৌন্দর্য বাড়াতেও সাহায্য করে। হলুদের সঙ্গে চন্দন মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হয়। এর মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লোহা প্রভৃতি নানা পদার্থ রয়েছে। তাই হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা জন্মায়। লিভারের ক্ষেত্রে হলুদ খাওয়া খুবই ভালো।
৮. হলুদের মধ্যে ফিনোলিক যৌগিক কারকিউমিন রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৯. হলুদ মোটা হওয়া থেকে বাঁচায়। হলুদে কারকিউমিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা শরীরে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যায়। শরীরের কলাগুলোকে বাড়তে দেয় না।
১০. গা ব্যথা হলে দুধের মধ্যে হলুদ মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। জয়েন্টের ব্যথা হলে হলুদের পেস্ট তৈরি করে প্রলেপ দিলে উপশম হয়।
১১. যখন ফুলকপির সাথে হলুদ মিশিয়ে খাওয়া হয় তখন তা গ্লান্ড ব্লাডারে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
১২. ব্রেস্ট ক্যান্সার লাঞ্চ পর্যন্ত যাতে ছড়াতে না পারে তা প্রতিরোধ করে হলুদ।
১৩. এটা শৈশবে লিউকমিয়ার ঝুঁকি কমায়।
১৪. চাইনিজরা বিষন্নতা কমাতে অনেক আগে থেকেই হলুদের ভেষজ চিকিৎসা করে আসছে।
১৫. ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক বা যাদের ত্বকে অ্যালার্জির প্রকোপ বেশি তা কমাতে এবং নতুন কোষ গঠনেও হলুদ উপকারী।
১৬. লিভার ড্যামেজ যা একসময় সিরোসিসে রূপ নেয় তা প্রতিরোধে হলুদের উপকার অনস্বীকার্য।
১৭. রিসার্চে প্রমাণিত হয়েছে, হলুদের মাধ্যমে পুর্ব চিকিৎসা নেয়া হলে তা ক্যান্সার সেল কে দুর্বল করে দেয় এবং এতে করে ক্যান্সার সহজে ছড়াতে পারেনা।
১৮. এছাড়া হলুদ ফেস প্যাক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। কাঁচা হলুদ বেটে অথবা পাউডার হলুদ মিক্স করেও ফেস প্যাক বানানো যায়।
দারুচিনি
দারুচিনি কম বেশি আমরা সবাই চিনি। যাকে গরম মসলা বলা হয়ে থাকে। পোলাও, কোরমা এবং মিষ্টি খাবার, অর্থাৎ সেমাই বা পায়েস জাতীয় বিশেষ খাবারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে দারুচিনি, সাধারণত সুগন্ধের জন্যই। বিশেষ করে যে কোন মাংস রান্নায় দারুচিনির গুঁড়ো কিংবা আস্ত দারুচিনি আমরা ব্যবহার করে থাকি কারন এই মশলা খাবারের স্বাদ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। দারুচিনি যখন এত ব্যবহার করি আমরা কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে আমাদের দেহেও দারুচিনির অনেক উপকারিতা আছে। চলুন তাহলে জেনে নেই দারুচিনির কিছু বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
১. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে রাখেঃ বেশ কিছু গবেষণায় এসেছে যে দারুচিনি আমাদের দেহের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দারুচিনি খুব উপকারী।
২. পেটের যে কোন সমস্যা দূর করেঃ আপনার পেটে যদি কোন সমস্যা হয়ে থাকে তার জন্য সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া সবাধান হল দারুচিনি কারন এই মশলা আমাদের দেহে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। দারুচিনি চা, দারুচিনি গুঁড়ো, দারুচিনি তেল আমাদের পেটের সমস্যার জন্য খুবই ভালো।
৩. ক্যানসার প্রতিরোধ করেঃ দারুচিনির নানাবিধ উপাদান আমাদের দেহের গ্যাস্ট্রিক, ক্যানসার, টিউমার এবং মেলানমাস রোগ প্রতিরোধ করে।
৪. বাতের ব্যথা দূর করেঃ দারুচিনিতে আছে ম্যাঙ্গানীজ্ যা আমাদের দেহের মজবুত হাড়, রক্ত ও দেহের অন্যান্য টিস্যু গঠনে সাহায্য করে থাকে। যে সকল মানুষের বাত ব্যথার সমস্যা আছে তারা যদি দারুচিনির তেল বা চা পান করে তাহলে বাতের ব্যথার সমস্যা দূর হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
৫. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহঃ দারুচিনির প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ আমাদের দেহের জন্য অনেক বেশি উপকারী এবং পৃথিবীর শীর্ষ ৭ টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপদানই আছে দারুচিনির মধ্যে। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলো আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখেঃ দারুচিনি আমাদের দেহের রক্ত তরল করতে সাহায্য করে এবং দেহের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ও উন্নয়নে সাহায্য করে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখে।
৭. পেশীর ব্যথা দূর করেঃ দারুচিনি তেল দিয়ে দেহের ব্যথাযুক্ত জায়গায় মালিশ করলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায় এবং ব্যথাও কমে যায়।
৮. মাথা ব্যথা দূর করেঃ দারুচিনি দিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে খান দেখবেন মাথা ব্যথা নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।
সংবাদ প্রকাশঃ ১১–৬–২০২০ইং । (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTV NEWS24 এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন। সিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)