জমির নামজারিকে কেন্দ্র করে রামচন্দ্রপুরের দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষের আশংকা

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি  নিউজ।।      আদিলুজ্জামান চৌধুরী: সংবাদদাতা জানান ===
জমির নামজারিকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া থানার শশীদল ইউনিয়নের অধীন রামচন্দ্রপুর
গ্রামের আবদুস ছালাম ও তার প্রয়াত বড় ভাইয়ের ওয়ারিশদের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের আশংকা বিরাজ
করছে। এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় গ্রামবাসী।
গত ১৫ জুলাই ব্রাহ্মণপাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে একটি হেবানামা দলিল রেজিষ্ট্রি হয়। এর দাতা ছিলেন
দৃষ্টিহীন আলী মিয়া (৮৫) ও রাবেয়া খাতুন (৭৩)। আবদুস ছালাম ছিলেন দলিল গ্রহিতা এবং দাতারা ছিলেন
দলিল গ্রহিতার পিতা ও মাতা। ভুক্তভোগী আল মাজেদের কাছ থেকে জানা যায়, আবদুস ছালাম প্রতারণার
মাধ্যমে এই দলিল সৃজন করে। তাই গত জুলাই মাষের শেষের দিকে আল মাজেদ উক্ত সম্পত্তির বিপরীতে
ব্রাহ্মণপাড়া ভূমি অফিসে আগাম একটি নামজারির আপত্তিনামা করে রাখে। কিন্তু গত ২৬ সেপ্টেম্বর আল
মাজেদ জানতে পারে আবুদস ছালাম ৬৪.৭৪ শতাংশ জমির নামজারির আবেদন করেছে যেখানে, ১৫ জুলাইয়ের
সৃজনকৃত দলিলের ৫৩.৭৪ শতাংশ জমি রয়েছে।
ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসকে ফাঁকি দিতে আবদুস ছালাম এই কারসাজির আশ্রয় নেয়। যাতে করে
ইউনিয়ন অফিস কিছু বুঝতে না পারে এবং দ্রুত নামজারির প্রস্তাবনা পেশ করে। আবদুস ছালাম যেমনটি
চেয়েছে তেমনটি হয়েছে, শশীদল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাছেও এই কারসাজিটি ধরা পড়েনি। ইউনিয়ন ভূমি
অফিস কতৃক নামজারিটি প্রস্তাবিত হয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কাছে পাঠানো হয়েছে, যার
মোকদ্দমা নং ৩৪০/২১-২২। আগাম আপত্তিনামা থাকা স্বত্বেও নামজারিটি প্রস্তাবিত হওয়ায় হতাশ
হয়েছে আপত্তিনামা প্রদানকারী আল মাজেদ।
জমিজমা সংক্রান্ত নানাবিধ সমস্যা নিরসনের লক্ষে ভূমি মন্ত্রণালয় সহকারী কমিশনার (ভূমি)
কর্মকর্তাদের জন্য ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে “সহায়ক পুস্তিকা” নামে দুই খণ্ডের পুস্তক প্রকাশ করে। জুন
২০১৮ খ্রিস্টাব্দে এর দ্বিতীয় সংস্করণ করা হয়। এই সহায়ক পুস্তিকার প্রথম খণ্ডের ১৬ পৃষ্টার
ঘ.১.২.ঢ অনুচ্ছেদে বলা আছে “ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নামজারির নির্ধারিত প্রতিবেদন ফরমে
প্রতিবেদন প্রদানকালে নামজারির আবেদনকারী কিভাবে জমিপ্রাপ্ত হয়েছে, দখলে কে আছে, দাতা জমির
প্রকৃত মালিক কিনা এবং জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া আইনানুগ কিনা, জমিতে সরকারি কোনো স্বার্থ সম্পৃক্ত
কিনা, দাবীকৃত জমি সরেজমিনে আছে কিনা, এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রস্তাব প্রেরণ করবেন।”
ভূক্তভোগী আল মাজেদ মনে করছেন ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্তৃক প্রেরিত প্রস্তাবনাটি সঠিক নয়। যদি
ইউনিয়ন ভূমি অফিস নামজারির ক্ষেত্রে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করতো তা হলে এমনটি হতো না। কেণনা
ওয়ারিশসূত্রে আমরা নিজেরাই জমির দখলে রয়েছি । একদিকে দলিল দাতা দৃষ্টিহীন অন্যদিকে দাতাগণ
বলছে, স্বেচ্ছায় তারা দলিল দেয়নি অতএব, জমির হস্তান্তর প্রক্রিয়াও সম্পূণ বেআইনি। নিরুপায় হয়ে সে,
গত ২৯ সেপ্টেম্বর দলিল বাতিল করার নিমিত্তে আবদুস ছালামসহ তিনজনকে বিবাদী করে কুমিল্লার
দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং ১২৯৭/২০২১। সেই সাথে উক্ত তারিখেই মামলার
নথি যুক্ত করে নামজারি মোকদ্দমা নং ৩৪০/২১-২২ এর বিরুদ্ধে নতুন করে ব্রাহ্মণপাড়া ভূমি অফিসে
আপত্তিনামা জানায়।
দুই পক্ষের নামজারির আবেদন ও আপত্তিনামা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে পারিবারিক কলহ এখন সংঘাত ও
সংঘর্ষের পথে এগুচ্ছে। সাধারণ গ্রামবাসী ও সমাজের বিজ্ঞ জনেরা মনে করছেন, ভবিষ্যৎ সংঘাত ও
সংঘর্ষ এড়াতে হলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সহায়ক
পুস্তিকার ঘ.১.২.ধ অনুচ্ছেদের শেষের দিকে বলা হয়েছে “জরুরী প্রয়োজন না হলে স্বত্বের নামজারি না
করাই উত্তম। এসব নামজারির ক্ষেত্রে দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থাকে।”

সংবাদ প্রকাশঃ  ৪-১০-২০২১ইং । (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email