ঘুরে এলাম প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন==

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন
সিটিভি নিউজ   ।।    মোঃ আবদুল আউয়াল সরকারঃ   লেখক।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হচ্ছে সেন্টমার্টিন, যার চারপাশে সাগর আর আকাশের নীল মিলেমিশে একাকার। খোলা-মেলা বালুকাময় সমুদ্র সৈকত আর সমুদ্রের বিরামহীন গর্জন যেন নীল রঙের রাজ্যে পরিণত করেছে সেন্টমার্টিন। প্রকৃতি দুই হাত মেলে যেন সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে এখানে।
‘দক্ষিণের স্বর্গ’ নামে পরিচিত এই দ্বীপে সারি সারি নারিকেল গাছ, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে চলা গাঙচিল। সৈকতে বসে স্নিগ্ধ বাতাসে গা জুড়িয়ে নেওয়া, কেয়া বন আর সাগরলতার মায়াময় স্নিগ্ধতায় মন জুড়িয়ে যায় নিমিষেই। বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল ধ্রুবতারা নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ অবকাশ যাপনের জন্য পছন্দের শীর্ষে রেখেছিলেন অনিন্দ্য সুন্দর এই দ্বীপকে। দেশের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে পরম আরাধ্য একটি পর্যটন গন্তব্য হচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। সেন্টমার্টিনের প্রতিবেশ ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হলো প্রবাল। সাগরের ছোট-বড়, মেরুদণ্ডী-অমেরুদণ্ডূ অধিকাংশ প্রাণী ও উদ্ভিদকে আগলে রাখে এসব প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ।
ভাটায় জেগে ওঠা নান্দনিক প্রবাল প্রাচীর, উড়ে চলা গাঙচিল, পশ্চিম বিচ থেকে দেখা সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য, স্নিগ্ধ বাতাস আর অগভীর সাগরের স্বচ্ছ নীল জলে দল বেঁধে বাধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠার লোভে প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে লাখ লাখ পর্যটক পদচিহ্ন আঁকেন এ দ্বীপে।
বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্বদক্ষিণের শেষ স্থান সেন্টমার্টিন দ্বীপ। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য অবলোকনের ও ভ্রমণের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে গড়ে ওঠা ছোট দ্বীপ এটি। মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মুখে এর অবস্থান। স্থানীয়রা এটিকে ‘নারিকেল জিনজিরা’ নামে চেনেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। এ দ্বীপের তিন দিকের ভিত শিলা যা জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে। এগুলোকে ধরলে এর আয়তন হবে প্রায় ১০-১৫ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার লম্বা। দ্বীপের প্রস্থ কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার।
দ্বীপটির পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত অগণিত শিলাস্তূপ আছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ সমতল ও সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা থেকে ৩ দশমিক ৬ মিটার ওপরে। মূল ভূখণ্ড ও দ্বীপের মধ্যবর্তী ৯ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার প্রশস্ত প্রণালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের উন্মুক্ত সাগরের তুলনায় অনেক অগভীর। এখানে পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে ১০-১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর।  মূল দ্বীপ ছাড়াও এখানে ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ছেড়াদিয়া বা সিরাদিয়া (ছেঁড়া দ্বীপ) নামে অভিহিত করা হয়। যার অর্থ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ছেঁড়া দ্বীপ হলো বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। দক্ষিণ দিকে এর পরে বাংলাদেশের আর কোনো ভূখণ্ড নেই।
মূল দ্বীপের সঙ্গে ছেঁড়া দ্বীপের সংযোগস্থল (স্থানীয়ভাবে গলাচিপা নামে পরিচিত) সামান্য নিচু হওয়ায় জোয়ারের সময় এটি তলিয়ে যায়। তাই ভাটার সময় হেঁটে ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়া গেলেও জোয়ারের সময় নৌকা নিয়ে যেতে হয়। সবচেয়ে ভালো হয় উত্তর প্রান্ত থেকে পশ্চিম বিচ ধরে সম্পূর্ণ পথ পায়ে হেঁটে গেলে। নির্জন এই পথটা অসম্ভব সুন্দর।
সেন্টমার্টিন দ্বীপটির ভূপ্রকৃতি প্রধানত সমতল। তবে কিছু কিছু বালিয়াড়ি দেখা যায়।
নভেম্বরের ২৪তারিখ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দিলাম।২৪তারিখ বিকেলের মধ্যে অফিস শেষ করে রাত ১০টার বাসে রওনা দিলাম টেকনাফের উদ্দেশে।
পরদিন ২৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় টেকনাফ পৌঁছলাম। নেমেই লঞ্চের টিকিট কেটে নিলাম। এরপর নাস্তা করে আশেপাশে একটু ঘুরে সকাল ৯টায় লঞ্চে উঠলাম। লঞ্চ সাড়ে ৯টায় ছাড়ল। যাত্রাপথে মানুষ-প্রকৃতি-সমুদ্রের পানির খেলা দেখতে দেখতে, দুষ্টুমি করতে করতে কোনো সমস্যা ছাড়াই আনুমানিক সাড়ে ১২টায় পৌঁছে গেলাম। সেন্টমার্টিন বীচের পাশেই রিসোর্ট ‘সী ইন” বুক করে নিয়েছিল। তাই থাকা নিয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি।সেন্টমার্টিনে পৌঁছে আমরা প্রথমে লাঞ্চ করে রিসোর্টে গেলাম। সেখানে গিয়ে ঘণ্টা দুয়েক বিশ্রাম নিয়ে চলে গেলাম গোসল করতে। নীল পানিতে কিছুক্ষণ ঝাপাঝাপি করে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে আবার সন্ধ্যায় বের হয়ে গেলাম। বীচের
আশেপাশে ঘোরাঘুরি শেষে বাজারে গেলাম। বীচের আশপাশ চোখ জুড়ানোর মত সুন্দর। সেখানে সময় কাটনোর পর লঞ্চ যেখানে আমাদের নামিয়ে দিয়েছে, সেই ব্রিজে গেলাম। ঠান্ডা বাতাসের এক অন্যরকম স্বস্তি। মনে হচ্ছে সারাটা জীবন সেখানেই থেকে যাই। অন্ধকার রাতে পানির ঢেউয়ের শব্দ আর বিশুদ্ধ বাতাস, মন ভালো হতে বাধ্য। সেখানে অনেকক্ষণ সময় কাটানোর পর রাতের খাবার খেয়ে রুমে চলে এলাম। ফিরেই আড্ডা মেরে রাত ১২টা নাগাদ আবারও চলে গেলাম সমুদ্রের গর্জন শুনতে। সে এক অন্যরকম শান্তি, থাকলাম রাত আড়াইটা পর্যন্ত। এরপর রুমে এসে ঘুম।
পরদিন সকালে নাস্তা করে সাইকেল নিয়ে বীচের একদিক ঘুরে এলাম। সাদা প্রকৃতি আর নীল পানি, সেটাকে চিকচিক করাতে সূর্যের আলো অদ্ভুত এক কম্বিনেশন, দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। ঘণ্টা দুয়েক সাইকেল চালিয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করার পর নেমে পড়লাম পানিতে। অনেকক্ষণ গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে রুমে চলে এলাম।
বিকেলে আবার বের হলাম। চারিদিক ঘুরলাম আর দেখালাম বিকেলের সুন্দর কিছু দৃশ্য। এরপর রাতে বাজারে ফিরে কিছু কেনাকাটা ও রাতের খাবার খেয়ে চলে এলাম রুমে। আগের দিনের মতই গভীর রাত পর্যন্ত থাকলাম বীচে। অনেক সুন্দর একটি জায়গা ছেড়াদ্বীপ। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে ফিরে এলাম। এরপর আবারও সেন্টমার্টিনের শেষ গোসল করে রিসোর্টে চেক আউট করে বেরিয়ে পড়লাম। সেন্টমার্টিনের ৪ বেলা (সকাল-দুপুর-বিকেল-রাত) অন্যরকম সুন্দর। যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। চার বেলায় চার রকম অনুভূতি পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি মুহূর্তই মন ছুঁয়ে যায়।
দুপুরে লাঞ্চ করে উঠে পড়লাম লঞ্চে। এ কয়েকদিন আমরা শুধু মাছ খেয়েছি। লঞ্চ ছাড়ল বিকেল ৩টায়, ৬টায় পৌঁছল টেকনাফ। ৮টায় রাতের বাস। সকাল ৬টায় কুমিল্লায় ।সংবাদ প্রকাশঃ  ২৮-১১-২০২১ইং । (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email