কুমিল্লায় ২৪ হাজার ইয়াবাসহ ৯ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে র‍্যাব

সিটিভি নিউজ।।     মোঃ আবদুল আউয়াল সরকার,  সংবাদদাতা জানান ==,কুমিল্লা। ===
র‌্যাব-১১ এর সিপিসি-২ কর্তৃক কুমিল্লার কোতয়ালী থানাধীন আমতলী বিশ্বরোড হতে অভিনব কায়দায় পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পরিবহনের সময় ০৯জন মাদক বহনকারী গ্রেফতার, ২৩,৯৯০ পিস ইয়াবা উদ্ধার। পেটের ভেতর  প্রায় ২৪ হাজার পিস ইয়াবা বহন করে নিয়ে আসার পথে কুমিল্লা থেকে র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছে ৯ তরুণ শিক্ষার্থী। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল  ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোতয়ালী থানাধীন আমতলী বিশ্বরোডে চেকপোস্ট বসিয়ে ঐ ৯ শিক্ষার্থীকে একটি বাস থেকে আটক করতে সক্ষম হয়। এরপর স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে উক্ত ৯ শিক্ষার্থীর শরীর এক্সরে করলে তাদের প্রত্যেকের  পেটে ইয়াবার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শে বিশেষ পদ্ধতিতে উক্ত নয় শিক্ষার্থীর পেটের ভিতর থেকে ২৩,৯৯০ পিস অক্ষত ইয়াবা আনুমানিক ৪০০ পিস ভাঙ্গা ইয়াবা বের করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো ১। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার চরপাড়াতলা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মোঃ তোফায়েল আহমেদ (১৯), এইচএসসি ১ম বর্ষ; ২। ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার দত্তের বাজার গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে মোঃ মিনহাজুল ইসলাম রিফাত (২২), এইচএসসি পরীক্ষার্থী; ৩। পটুয়াখালী জেলার পটুয়াখালী সদর থানার পশুরবুনিয়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে মোঃ সোহেল (২১), এসএসসি উমুক্ত; ৪। নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার পিজাহাতি গ্রামের কামরুল হাসানের ছেলে মোঃ মিতুল হাসান মাহফুজ (২২), ডিগ্রী পরীক্ষার্থী , ৫। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার চরপাড়াতলা গ্রামের মাজাহারুল ইসলাম এর ছেলে মোঃ আশিকুল ইসলাম (১৯) এইচএসসি পাশ (গতকাল রেজাল্ট দিয়েছে); ৬। গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার আমবাগ(কোনাবাড়ী) গ্রামের মৃত মাসুদ ইসলামের ছেলে মোঃ সিয়াম ইসলাম (১৯) এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ৭। ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাকশি (পাঠানবাড়ী) গ্রামের ফখরুদ্দিন পাঠানের ছেলে মোঃ রিশাত পাঠান (২২) ডিগ্রী পরীক্ষার্থী; ৮। ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার নয়াবাড়ী গ্রামের মোঃ আসাদ মিয়ার ছেলে মোঃ গোলাপ (২২) ডিগ্রী পরীক্ষার্থী এবং ৯।  ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাগশি গ্রামের রতন মিয়ার ছেলে মোঃ সেলিম (২২)  এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত ৯ তরুণ জানায়, তারা সকলেই শিক্ষার্থী ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।  সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয়ের শিকার হয়ে তারা এ পথে নেমেছে। গ্রেফতারকৃতদের বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে অন্ধকার এ জগতের অনেক লোমহর্ষক গল্প। গ্রেফতারকৃত তরুণদের দেয়া তথ্য অনুয়ায়ী ময়মনসিংহের জনৈক এক বড় ভাই মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত এবং এই পদ্ধতি অনুসরন করেই সে টেকনাফ থেকে ইয়াবা বহন করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করত। তার গ্রুপের কয়েকজন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে গ্রেফতার হয়। পরবর্তীতে সে এলাকার তরুণদের টার্গেট করে এবং প্রথমে আসামী সেলিম কে ম্যানেজ করার পর আসামী সেলিমের মাধ্যমে আসামী রিফাত, গোলাপ, রিশাদ, তোফায়েল ও আশিককে এ কাজে আসতে বাধ্য করে। অপরদিকে জনৈক মাদক ব্যবসায়ীর মহাখালীর বন্ধুর মাধ্যমে প্রথমে আসামী সোহেলকে এবং আসামী সোহেলের মাধ্যমে  আসামী মিতুল ও সিয়াম কে মাদক পরিবহনের কাজে সম্পৃক্ত করা হয়। প্রথমে তাদেরকে গাঁজা ও ইয়াবা ফ্রি তে সরবরাহ করা হয় এবং মাদকের আসরে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে তাদেরকে ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত করে ফেলা হয়। পরবর্তীতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রলোভন এবং উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখানো হয়। অপরদিকে মাদকাসক্ত হয়ে এই তরুণেরা মাদকের টাকা সংগ্রহ করার জন্য জনৈক মাদক ব্যবসায়ীর দেয়া প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায়। গত জানুয়ারি ২০২১ এ প্রথম পেটের ভিতরে করে ইয়াবা বহন করে সফলভাবে তা ডেলিভারী দিতে সক্ষম হয় তারা। তবে তাদেরকে প্রাপ্ত টাকা না দিয়ে অর্ধেক টাকা ট্রাক্স হিসেবে রেখে দেয় জনৈক মাদক ব্যবসায়ীরা। তাই এই তরুণরা এই কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পূর্বের কাজের ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পুনরায় এই কাজ করতে তাদেরকে বাধ্য করা হয়।
ইয়াবা বহনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে গ্রেফতারকৃত তরুণরা র‌্যাবকে জানায়- মাদক কারবারীদের নির্দেশে তাদের আব্দুল্লাপুর এর একটি বাস কাউন্টারে যেতে বলা হয়। সেই কাউন্টারে আগে থেকেই উক্ত তরুণদের জন্য কক্সবাজার জেলার টেকনাফগামী বাসের টিকিট কেটে রাখা হয়। বাস টেকনাফ গিয়ে থামলে সেখানে থাকা জনৈক মাদক কারবারী তাদের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায়। এবং হোটেলের যে কক্ষে তাদের রাখা হয় সে কক্ষটি সারাদিন বাইরে থেকে তালা মেরে রাখা হয়। সন্ধ্যা নাগাদ জনৈক মাদক কারবারীর ২ থেকে তিনজন লোক হোটেলে এসে ঐ তরুণদের সাথে দেখা করে এবং ইয়াবা পেটে বহন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এক্ষেত্রে প্রথমে কলার রস দিয়ে খেজুরের মতন ছোট ছোট পলিথিনে মোড়ানো ইয়াবার পোটলাগুলো পিচ্ছিল করে তারা গিলে ফেলে। এরপর নাইটকোচে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। পথে সার্বক্ষণিক মাদক কারবারীরা তাদেরকে নির্দেশনা দিতে থাকে। মাদক কারবারীদের নির্দেশনা অনুযায়ী ইয়াবাগুলো কখনো নরসিংদী,কখনো আশুলিয়া আবার কখনো মহাখালীতে নির্ধারিত স্পটে মাদক কারবারীদের নিকট পৌছে দিতে হয়। আটককৃতরা র‌্যাবকে আরো জানায় গত ১ বছরে অসংখ্যবার তারা এ প্রক্রিয়ায় টেকনাফ থেকে ঢাকায় ইয়াবা এনেছে।
পারিবারিক দৈন্যদশা, বেকারত্ব, ও মানসিক অবসাদের কারণে মাদক কারবারীদের ব্লাকমেইলিংয়ের ফাঁদে পা দিতে হয়েছে তাদের বলেও জানান তারা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় রাজধানী ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ, সহ বিভিন্ন এলাকায় এমন আরো কয়েকটি তরুণ শিক্ষার্থীদের গ্রুপ এ পন্থায় মাদক কারবারীদের নির্দেশনায়  ইয়াবা আনা নেয়া করে থাকেন। এই প্রক্রিয়ায় ইয়াবা বহন করায় যেকোনো সময় মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।সংবাদ প্রকাশঃ  ১৬-০২-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ