কুমিল্লায় রেলওয়ের বন্দোবস্তীয় ভূমি থেকে ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উচ্ছেদের অভিযোগ

সিটিভি নিউজ।। সংবাদদাতা জানান —
কুমিল্লায় রেলওয়ের সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নামে বিনা নোটিশে বন্দোবস্তীয় বৈধ দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছেন বন্দোবস্তীয় ভূমিতে গড়ে উঠা দোকান মালিক, ভাড়াটিয়া ও ব্যবসায়ীরা। সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ডাবল লাইন প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা থেকে ময়নামতি রেলস্টেশন এলাকায় বৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। দিনভর এই উচ্ছেদ অভিযান করে ব্যবসায়ী ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে।
জানা যায়-ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ডাবল লাইন প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা থেকে ময়নামতি রেলস্টেশন এলাকায় বৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এ সময় ধর্মপুর সফিকুর রহমান সফির ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, হুমায়ুন কবিরের গুদাম ঘর, শাহ আলমের ভাড়াটিয়া সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস, ঈমান আলী মোটর পার্টসের দোকান, আমান আলী অটো গ্যারেজ, আরিফ এন্টারপ্রাইজ, জাহিদ ডায়মন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, অটো গ্যারেজ,কামাল ওয়ার্কসপ, খলিল অটো ইঞ্জিনিয়ার, খলিল মিয়ার মুদি দোকান, ভলবো ব্যাটারীর শো-রুম, খোকন মিয়া ফার্নিচার দোকান, খোরশেদ আলম মুদি দোকান, অলি মিয়ার পার্সেল, খোকন মিয়ার মনোহারী দোকান, বাচ্চু মিয়ার দোকান, ট্রাক ড্রাইভার সমিতির অফিস, রাজু মিয়ার সেলুন দোকানসহ প্রায় ১৬টি দোকান ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ব্যাপক ভাংচুর করে গুড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও বাড়ি ঘর ভাংচুর করে। এর মধ্যে মৃত শের আলীর পুত্র মোবারক, মাসুদ, আশিক, আলহাজ্ব বেলাল হুজুর, মৃত আলী আহমেদ বসত বাড়ি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
ক্ষতিগ্রস্ত শফিকুর রহমান সফি প্রতিবেদককে বলেন- সরকার ও রেলওয়ের প্রয়োজনে তাদের ভূমি তারা নেমে এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু অমানবিকভাবে এ আচরন কেন? ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে আমার নাম তালিকাভুক্ত করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন ক্ষতিপূরণ দেয়নি।আমার বন্দোবস্তীয় ভূমির অংশ রেলওয়ের প্রয়োজনে আমাকে জানানো হলে আমি নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নিতাম। আমার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত শাহ আলম প্রতিবেদককে বলেন- সরকারী বিধিমালার আলোকে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে প্রতি বছর সরকারী কর পরিশোধ করেছি। আমার বন্দোবস্তীয় ভূমিতে প্রায় ১০/১২ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছিল। পূর্বে কোন রকম নোটিশ কিংবা ঘোষণা না দিয়ে হঠাৎ করে ড্রেজার দিয়ে অমানবিকভাবে আমার সবকটি প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস। আমার প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। তিনি আরও বলেন- রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দুই দিন আগে স্থানীয়ভাবে পরিদর্শন করে মাত্র ২টি দোকান উচ্ছেদের জন্য দেয়ালে লাল চিহ্ন দিয়ে যান। অথচ ১৫/১৬টি দোকান, ৫টি বাড়ি ঘর উচ্ছেদের নামে গুড়িয়ে দেয়া হয়। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
মাওলানা বেলাল চিশতি এ প্রতিবেদককে বলেন- রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে ছেলে মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে মাথা গোজার একটি ঠাই ছিল। তাও আজ গুড়িয়ে দিল। এখন আমরা খোলা আকাশের নিজে বসবাস ছাড়া কোন উপায় নেই।
আমেনা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন- আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমি কোথায় যাবো। ড্রেজার দিয়ে আমার বসত বাড়িটি গুড়িয়ে দিয়েছে। আমি পূর্বে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিজ নিয়ে প্রায় ৬০ বৎসরেরও বেশি সময় ধরে কর দিয়ে এখানে বসবাস করে আসছিলাম। এখন আমি খোলা আকাশের নিজে বসবাস করছি। ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য নাম তালিকাভুক্ত করা হলেও ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উল্টো এক প্রকার জোড় করে আমার বাড়ি ঘর ভাংচুর ও গুড়িয়ে দেয়।
ফরিদা আক্তার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন-রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে স্বামী, ছেলে মেয়েদের নিয়ে বসবাস করছিলাম। কোন রকম নোটিশ না দিয়ে ড্রেজার দিয়ে আমার ছোট্ট একটি দোকান তাও গুড়িয়ে দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন- ক্ষতিপূরণের জন্য তালিকাভূক্ত করা হলেও কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি।
ব্যবসায়ী ও বাড়ি ঘরর মালিকদের অভিযোগ, পূর্ব পুরুষের আমল থেকে বস্তোবস্তীয় ভূমি থেকে কোন রকম নোটিশ ছাড়াই সোমবার রেলওয়ে কর্মকর্তারা বিপুলসংখ্যক রেল পুলিশ নিয়ে এসে রেলওয়ে স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। এতে ব্যবসায়ীদের মালামালও সরানোর সুযোগ দেয়া হয়নি। এতে বিপুল অংকের টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারগুলো পথে বসার উপক্রম হয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা থেকে ময়নামতি রেলস্টেশন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানে বিক্ষুব্ধরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শাসনগাছা অফিসে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরও জানান ২০১৬ সালে রেল লাইনের পাশে গড়ে উঠা বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হলেও তারা দখল ছাড়েনি। ক্ষতিপূরণের তালিকাভুক্ত করার পরও ক্ষতিগ্রস্তরা কেন তা পায়নি এ বিষয়ে তিনি জানান- বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন।

সংবাদ প্রকাশঃ  ২৩২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ