কুমিল্লার দেবিদ্বারে বিলুপ্তির পথে বাঁশ-বেতের কাজ

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ।।    এনামুল হক ,কুমিল্লার দেবিদ্বার থেকে সংবাদদাতা জানান  : লেখা-পড়া জানি না, পারিনা অন্য কোনো কাজও তাই পেটের দায়ে বাপ-দাদার পেশায় পরে আছি। প্লাস্টিকের পণ্যে বাজার সয়লাব হয়ে আছে তাই বাঁশ-বেতের পণ্যের এখন তেমন চাহিদা নেই। সারা দিন পরিশ্রম করে যা তৈরী করি, পাইকারের কাছে তা বিক্রি করে সকল খরচ বাদ দিলে মোট টেকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এই সামান্য টাকায় দুর্মূল্যের বাজারে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকা দায়। এমনই জানালেন দেবিদ্বার উপজেলার দক্ষিণ পুনরা গ্রামের বাঁশ-বেতের কারিগর খোকন মিয়া (৬৫)। স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে নিয়ে ঘরের দাওয়ায় বসে ধান রাখার খারি (টুকরী) বানাচ্ছিলেন। অগ্রহায়ন মাসে ধান কাটার ভর মৌসুমে ওরা, খাড়ি, ডুলির চাহিদা থাকে অনেক। স্বামী-স্ত্রী মিলে তাই দিন-রাত বুনে চলেছেন এসব পণ্য।

একই চিত্র দেখা গেলো দক্ষিণ পুনরার অন্যান্য বাড়িতেও। পৈত্রিক পেশা আঁকড়ে থাকা সকলেই জানালেন তাদের সুখ-দুখের নানা কথা। গ্রামের প্রবীণ কারিগর মোবারক হোসেন (৬৫) এবং সাহেব আলী (৫৫) আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে একি পরিত্যাক্ত বাড়ির গাছের ছায়ায় দলবেধে বসে বুনছিলেন নানা গৃহস্থালী পণ্য। আলাপ কালে তারা জানালেন পরদাদার আমল থেকে বংশ পরম্পরায় তারা সকলে এ পেশায় যুক্ত। এ পেশার আনুমানিক বয়স প্রায় ২শ বৎসর। আগে দক্ষিণ পুনরার প্রায় সকলেই এ পেশায় যুক্ত থাকলেও কাল ক্রমে তা মাত্র ৪০-৫০ পরিবারে এসে ঠেকেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকতে না পেরে ইতিমধ্যে অনেকেই পেশা বদলেছেন। অনেকে পাড়ি দিয়েছেন সুদুর প্রবাসে।

তারা আরো জানালেন শুধু প্লাস্টিকের পণ্যের দৌড়াত্ম নয়, প্রয়োজনীয় বাঁশের সংকট ও উচ্চ মূল্য এবং মাটি কাটার ড্রেজার মেশিনের কারনেও তারা ক্ষতিগ্রস্থ্ আগে মাটি কাটার শ্রমিকদেও জন্য টুকরী বানিয়েও তাদের অনেকে জীবন চালাতো। এখন ড্রেজার আর ভেকু (এস্কেভেটর) দিয়ে মাটি কাটার কারনে মাটি কাটা শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। এতে টুকরীর চাহিদা প্রায় নাই বললেই চলে।

কথা হয় কাতার প্রবাসী মোঃ মাসুমের সাথে। তিনি জানান দেশে থাকতে তিনি দীর্ঘ দিন এ পেশায় যুক্ত ছিলেন। সারাদিন কঠোর পরিশ্যম শেষে যে টাকা আয় হয় তাতে জীবিকা নির্বাহ অনেক কঠিন তাই বাধ্য হয়ে স্বদেশ-স্বজন ফেলে দূও প্রবাসে পাড়ি জমান। বর্তমানে দুই মাসের ছুটিতে দেশে আছেন। তিনি জানালেনন কঠোর পরিশ্রম ও ভাল দক্ষতা থাকলে এক দিনে ১০টা মাছের টুকরী বানানো সম্ভব। পাইকারী বাজারে ১০টা টুকরির দাম ৪৫০ টাকা। অথচ ১০ টুকরির জন্য ২০০ টাকার একটা বাঁশ, ৩০ টাকার প্লাস্টিকের বেত, প্রতিটা টুকরি ২ টাকা কওে ১০টা টুকরির মুরি বান্ধা ২০ টাকাসহ আনুসাঙ্গিক অন্যান্য খরচ বাদেও মোট ২৫০ টাকা খরচ হয়। একজন শ্রমিক দিন শেষে পায় মাত্র ২০০ টকা। তাও বর্ষাকালে কাজকর্ম একদম থাকেই না। তখন সংসারের খাবার জোটানোই কঠিন হয়ে পড়ে। তার পরও একদম বেকার না থেকে অনেকে এ পেশায় লেগে থাকেন। সুযোগ পেলে পেশা বদল করে। একই কথা বললেন, এইচ এসসি পাশ বেকার আ. কাদের।   সংবাদ প্রকাশঃ  ২৯-১১-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email