কার্যকর স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা ও সূফীবাদী জনতার অধিকার আদায়ের দাবি

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহা সমাবেশে লাখো মানুষের ঢল

“ইসলামী ফ্রন্টের সমাবেশে ১০ দফা প্রস্তাবনা”

সিটিভি নিউজ।।     গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ঢাকা থেকে।। সংবাদদাতা জানান === কার্যকর স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা, অবহেলিত সুফিবাদী জনতার অধিকার আদায় ও জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচনের প্রতিবাদসহ পাঁচ দফা দাবিতে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় পরিষদের ব্যবস্থাপনায় গতকাল ৭ জানুয়ারী (শনিবার) সকালে ঢাকার ঐতিহাসিক গুলিস্তান চত্বরে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মতিন। মহাসমাবেশের ঘোষণাপত্র ১০ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন, দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ স.উ.ম আবদুস সামাদ।

দলের চেয়ারম্যান এম এ মতিন বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ক্ষমতায় থাকার জন্য ও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এ অসুস্থ প্রতিযোগিতার বলী হয় সাধারণ জনগণ। এভাবে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার ভুলুন্ঠিত হচ্ছে বার বার। এ অবস্থা আর চলতে পারে না। আমরা চাই দেশে সুস্থধারার রাজনীতির বিকাশ হোক, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত হোক। এ জন্য চাই স্বচ্ছ ব্যালটবাক্সে ব্যালট পেপারে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য  নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। নতুন আইন পাশ করে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর স্বাধীন করতে হবে। অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক বা দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারেনা এবং নিরপেক্ষ, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পাদনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি যে স্থায়ী সমাধান নয় তা  ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ সূফিবাদী। অথচ সুফিবাদীরা দেশে সবচেয়ে অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত। সুফিবাদী আলেম ও নেতাকর্মীদের হত্যাকাণ্ডের কোন বিচার হয় নি। বায়তুল মুকাররম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ কোথাও সুফিবাদী জনতার প্রতিনিধিত্ব নেই। দেশে উপজেলা পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন ৫৬০ টি মডেল মসজিদের অধিকাংশই আজ স্বাধীনতা বিরোধী উগ্রবাদীদের দখলে। সুফিবাদী জনতার প্রতি আর বৈষম্য বরদাশত করা হবে না। আমরা  সুফিবাদী জনতাকে তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলে প্রেরিত অর্থে প্রণোদনা প্রদানসহ অর্থ পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গীবাদীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মহাসচিব অধ্যক্ষ স.উ.ম আবদুস সামাদ জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষার সংকোচনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ধর্মহীন শিক্ষানীতি জাতিকে পঙ্গু করার নামান্তর। অবিলম্বে প্রত্যেক শ্রেণিতে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। একই সাথে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদন, সীমান্তহত্যা বন্ধ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

মহাসমাবেশে অতিথির বক্তব্য রাখেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআত বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা কাজী মঈনুদ্দীন আশরাফী, কো-চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস সোলাইমান আনসারী, মহাসচিব পীরে তরিকত সৈয়দ মুহাম্মদ মছিহুদ্দৌলা, সাংগঠনিক সচিব অধ্যক্ষ ড. ইছমাঈল নোমানী। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী হারুন, শাহাব উদ্দীন চৌধুরী, অধ্যক্ষ আহমদ হোসাইন আলকাদেরী, অধ্যক্ষ ড. শেখ আফজল হোসেন, এম সোলায়মান ফরিদ, পীরে তরিকত ছাদেকুর রহমান হাশেমী, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী এম এ ওয়াহিদ সাবুরী, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম পাঠোয়ারী, অধ্যক্ষ আবু জাফর মঈনুদ্দিন, অধ্যক্ষ আল্লামা তৈয়্যব আলী, শেখ শাহজাদা গোলাম মুহাম্মদ আবদুল কাদের কাউকাব, অধ্যাপক নাজিম উদ্দিন, শাহজালাল আখঞ্জি, সৈয়্যদ মুজাফফর আহমদ মুজাদ্দেদী, অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল পীরজাদা গোলামুর রহমান আশরফ শাহ প্রমুখ। শেষে মহাসমাবেশের ১০ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মহাসচিব অধ্যক্ষ স.উ.ম আবদুস সামাদ, প্রস্তাবনা সমূহ হলো-

১। তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দেশের জন্য অভিশাপ। নির্বাচনকালীন সময়ে এধরনের  সরকার ব্যবস্থা কোনো সময়ে দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।অবাধ,সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে  সংবিধান সংশোধন করে কার্যকর স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।বিশেষত:  নির্বাচনকালীন সময়ে  স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থ – এ ৫টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সাংবিধানিক পন্থায় নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনে  সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে।

২। ইসলামের প্রকৃত রুপরেখা আহলে ওয়াল জমাআত মতাদর্শীরা রাষ্ট্রীয়ভাবে  অবহেলিত ও চরম বঞ্চনার শিকার।জামাত-শিবির ও জঙ্গিদের হাতে নিহত সংগঠনের নেতাকর্মীসহ কোনো সুন্নী ব্যক্তিত্ব, সুন্নী আলেম হত্যাকান্ডের বিচার কেউ করেনি।ধর্মমন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন,রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় হজ্বকার্যক্রমসহ কোথাও সুন্নি জনতার প্রতিনিধিত্ব নেই।উপজেলা পর্যায়ে নির্মাণাধীন ৫৬০ টি মডেল মসজিদের অধিকাংশই আজ স্বাধীনতা বিরোধী উগ্রবাদীদের দখলে। রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্নীজনতার অধিকার নিশ্চিতকরণসহ শাহাদাতবরণ করা নেতৃবৃন্দ হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দাবি জানাচ্ছে আজকের মহাসমাবেশ।

৩।জনগণের টাকা আত্মসাৎকারী- ঋণখেলাপী,দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় পাচারকৃত অর্থ অবিলম্বে ফিরিয়ে আনতে  ব্যবস্থাগ্রহণ,তাদের পাসপোর্ট জব্দ করাসহ নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। এসব দুস্কৃতকারী ব্যক্তি যাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারে সে ব্যাপারে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণসহ এ ধরনের  কেউ প্রার্থী হলে তার প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে।বিপরীতে দেশীয় অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে ভূমিকা রাখা প্রবাসীদের জন্য প্রণোদনা ন্যূনতম ৩ শতাংশ করার দাবি জানাচ্ছি।

৪।এনসিটিবি কর্তৃক জাতীয় শিক্ষাক্রমে ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন নীতি গ্রহণের প্রতিবাদ জানাচ্ছে আজকের সমাবেশ।ধর্মহীন জাতি পশুত্বের নামান্তর।প্রাথমিক পর্যায় হতে শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।স্কুলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সাথে মাদরাসা পর্যায়ের ইবতেদায়ী ও দাখিল পর্যায়ে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে সরকার কর্তৃক প্রণীত ও জাতীয় সংসদে গৃহীত জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ অনুযায়ী স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম,পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যবই তৈরি করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

৫। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতিতে নাকাল দেশের সাধারণ জনগন।সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দমনপূর্বক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।দুর্নীতিবাজ-জঙ্গিবাদ – সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠাই বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নে কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি ।

৬।মায়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন করতে আমরা জাতিসংঘ,ওএসিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের  দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং  নির্বিচারে মুসলিম গণহত্যার বিচার দাবি করছি।

৭। অবিলম্বে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনে কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণসহ মানব পাচার,চোরাচালান ও সীমান্ত হত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।

৮৷ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১’তৈরির কারণে পাহাড়ি ও বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থায়ীভাবে বিভাজান সৃষ্টি করা হয়েছে।এ আইন প্রণয়নের ফলে বাঙ্গালিরা নিজ ভূমিতে উদ্বাস্তু হবার শংকা করছে। আজকের সমাবেশ  এ কালো আইন বাতিল করে  সমস্যা নিরসনে কার্যকর সমাধান বের করার আহবান জানাচ্ছে।

৯। চট্টগ্রামের দূ:খ কালুরঘাট সেতু নির্মাণে আসন্ন  বাজেটে পর্যাপ্ত  অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিতকরাসহ অবিলম্বে এ গুরুত্বপূর্ণ সেতুর কাজ শুরু করতে হবে।

১০। ৭১ সালে স্বাধীকার আদায় বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোত্তম অর্জন।মুক্তিযুদ্ধে যারা শাহাদাত বরণ করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন সর্বোপরি যারা এমহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছেন – বাঙ্গালী জাতির সেসব মহাত্মা সন্তানদের প্রতি রইলো আমাদের সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা।মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করা দেশি-বিদেশী সংগঠন- সংস্থার প্রতিও রইলো আমাদের পক্ষ হতে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। বিশেষত: অবহেলিত সুন্নী জনতার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজ  যারা উপস্থিত হয়েছেন প্রত্যকের প্রতি রইলো কৃতজ্ঞতা।

সংবাদ প্রকাশঃ ০৭০১২০২৩ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ