ইবাদতে ‘তাকওয়ার’ গুরুত্ব== অধ্যাপক মু. সহিদুল ইসলাম

সিটিভি নিউজ।।    ‘তাকওয়া’ শব্দটি ‘অকয়ুন’-“শব্দ থেকে নির্গত, যার অর্থ বিরত থাকা, বেঁচে থাকা, কাছে না যাওয়া, ইত্যাদি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় আল­াহ তায়ালার সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিজকে বাঁচিয়ে রাখার নাম ‘তাকওয়া’। জাহান্নামের ভয়ে সকল অন্যায় পরিহারকরাই ‘তাকওয়া’।
১। হযরত আবদুল­াহ ইবনে মাসউদ (রা) তাকওয়ার সংজ্ঞায় বলেন ‘আল­াহর নাফরমানী না করা, আল­াহ-কে স্মরণ করা, তাঁকে ভুলে না যাওয়া, তাঁর শুকর আদায় করা কিংবা আল­াহ তায়ালার কুফুরি না করার নাম ‘তাকওয়া’।
৩। তাবেয়ি তালাক-বিন হাবিব (রা) বলেন-“আল­াহ তায়ালার হুকুম মেনে চলা এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করাই ‘তাকওয়া’ ”।
৪। উবাই ইবনে কা’ব (রা) হযরত উমরের (রা) প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন-“কাঁটাযুক্ত, সরু আঁকা-বাঁকা পথ সাবধানে চলতে হয়। নিজকে আট-সাঁট করে সাবধানে চলাই হলো তাকওয়া”- অর্থাৎ জীবনের রন্দ্রে রন্দ্রে পাপ-পঙকিল ‘পথে বাম মাছের’ মতো নিজকে কাঁদা থেকে বাঁচিয়ে জীবন চলার নামই হলো ‘তাকওয়া’।
৫। হযরত ওমর (রা) এর মতে- “মুমেন ব্যক্তির অন্তর্নিহিত নৈতিক গুণাবলী এবং ব্যক্তির সম্মানবোধই হলো ‘তাকওয়া’ ”-মুয়াত্তা ইমান মারেক-৯৮৫।
৬। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেন- ‘ব্যক্তির অভিজাত্য হলো ‘সম্পদ’ আর মহানুভবতা অথবা উদারতা হলো ‘তাকওয়া’ (ইবনে মাজাহ-৪২১৯)।
আর তাকওয়া অর্জনকারীদেরকে কুরআনের ভাষায় ‘মুত্তাকি’ বলা হয়।
‘মুত্ত¡াক্বি’র সংজ্ঞা বিভিন্ন মুফাসসির যেভাবে দিয়েছেন –
১. ‘যারা ‘শিরক’ পরিহার করে আল­াহর আনুগত্য ও নেক আমল করে তারাই মুত্তাকী’-হযরত ইবনে আব্বাস।
২. ‘আল­াহর শাস্তির ভয়ে যারা তাঁর নিষেধ এড়াইয়া চলে এবং আল­াহর আদেশ মেনে চলে তারাই মুত্ত¡াক্বি’-মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক।
৩. ‘যারা যাবতীয় হারাম বর্জন এবং ফরয মেনে জীবন যাপন করে তারাই মুত্ত¡াক্বি’- সুফিয়ান আস সাওরি (রা)।
সুতরাং ‘মুত্ত¡াক্বি’ হলো ব্যক্তির আভ্যন্তরিণ গুণাগুণ অর্জন- যা আল­াহ নির্দেশ দিয়েছেন এবং রাসুল (সা) শিক্ষা দিয়েছেন’। ‘মুত্তাকী’ হওয়ার জন্যই যাবতীয় আমলগুলো সঠিকভাবে পালন করতে হবে। মুসলিম শরিফের ৭২নং হাদিসে পাওয়া যায় রাসুল (সা) সর্বদা দোয়া করতেন ‘হে আল­াহ! আমি তোমার নিকট হিদায়াত চাই, তাকওয়া চাই, তোমার নিকট চাই ক্ষমা! আর চাই কারো কাছে অমূখাপেক্ষী জীবন’। (মুসলিম-৭২)
ইসলামের প্রতিটি ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে তাকওয়াবান বানানো।

১. ‘সিয়াম বা রোযায় তাকওয়া’
১. পবিত্র কুরআনে আল­াহ তায়ালা বলেন-“হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রমযানের সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যা তোমাদের পূর্ববতীদের উপরও ফরয ছিলো যাতে তোমরা ‘তাকওয়াবান’ হতে পারো” (সূরা বাকারা-১৮৩)। বুঝা যায় সিয়াম তথা রোযার মূল উদ্দেশ্য খাওয়া-দাওয়া, অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, পাপ-অপরাধ থেকে মানুষকে বিরত রেখে সত্য ন্যায় ও সঠিক পথে পরিচালনা করা।

২. নামায তথা ‘সালাতে তাকওয়া’
সালাতের বা নামাযের উদ্দেশ্য ‘তাকওয়া’ শিক্ষা দেওয়া।-তাই সূরা আনয়ামের ৭২নং আয়াতে বলা হয়েছে-“তোমরা সালাত কায়েম করো, এতে ‘তাকওয়া’ অর্জন করো, আর আল­াহর দিকেই তোমাদের ফিরে আসতে হবে’’। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে সালাত আদায়ের মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষকে ‘তাকওয়ার’ গুণে গুণান্বিত করা।
৩. হজ্জে ‘তাকওয়া’
হজ্জ ব্রত পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন, যেমন আল­াহ তায়ালা বলেন যাদের উপর হজ্জ অপরিহার্য করা হলো তারা (ইহরাম অবস্থায়) যৌন-ক্রিয়া করবেনা, অন্যায়-গর্হিত কাজ করবে না, এমন কী ঝগড়া-ঝাটিও করবেনা- তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো, তবে সবচেয়ে বড় পাথেও হলো ‘তাকওয়াবান’ হওয়া (সূরা বাকারা-১৯৭)।
৪. যাকাতে ‘তাকওয়া’
সূরা আরাফে আল­াহ তায়ালা বলেন-
‘‘যারা সঠিকভাবে যাকাত’’ আদায় করে তারাই তাকওয়ার’ অধিকারী এবং তারাই মূলত আল­ার আয়াতসমূহকে বিশ্বাস করে”- তাই যথাযথ ভাবে যাকাত প্রদান করাই হলো ‘তাকওয়াবান’ হওয়া-(সুরা আরাফ-১৬৬)
৫. কুরআন অধ্যয়নে ‘তাকওয়া’
ক) “আমি তোমার নিকট কিতাব অবতীর্ণ করেছি-যা (অতীব) বরকতময়, তুমি-এই কিতাবের (কুরআনের) অনুসরণ করো এবং ‘তাকওয়া’ অর্জন করো, তাহলেই তুমি সম্মান পাবে”- (আনয়াম-১৫৫)।
খ) ‘এই কুরআন একটি উপদেশমালা মানুষের জন্য এবং ম্ত্তু¡াক্বিদের জন্য-সঠিক পথের দিকনির্দেশনা- (আলে ইমরান’-১৩৮)।
গ) এই কিতাবে কোন সন্দেহ সংশয় নেই এবং ম্ত্তু¡াক্বিদের জন্য একটি হিদায়েত (সঠিক পথের দিশা)। (বাকারা-২)
সুতরাং কুরআন শুধু মুখে আওড়ানোর জন্য নয় বরং বুঝে বুঝে অধ্যয়ন করতে পারলেই তাকওয়ার গুণাগুণ অর্জিত হবে।
৬. পশু কুরবানীতে তাকওয়া-
শুধু টাকার জোরে বড় বড় পশু কুরবানি নয় বরং সেখানে আল­াহভীতি কতটুকু আছে সেটা পরখ করাই কুরবানীর মূল উদ্দেশ্য। আল­াহর বাণী “তোমাদের কুরবানীর পশুর চামড়া কিংবা রক্ত আল­ার নিকট পৌঁছায় না বরং আল­াহর নিকট পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া”(আল­াহকে কতটুকু ভয় করো সেটা)- (হজ্ব-৩৭)- সুতরায় লোক দেখানো প্রথা সর্বস্ব নয়। আল­াহ তায়ালার সন্তুষ্টি এবং মনের পৈশাবিক শান্তিকে চিরতরে হত্যা করে পশু জবাইয়ের নামই হলো সত্যিকারের কুরবানি।    লেখক-  অধ্যাপক মু. সহিদুল ইসলাম
সভাপতি   বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক পরিষদ   কুমিল্লা মহানগরী।  ০১৭১১৯৫৩৮১৬ ।

সংবাদ প্রকাশঃ ১৬০৩২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like>  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ