আদমজীতে বিহারীদের সাথে ব্যার-পুলিশ এর সংঘর্ষ, গুলি, অর্ধশতাধিক আহত, গ্রেপ্তার-৩১

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে পুলিশ-র‌্যাবের সঙ্গে বিহারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও শর্টগানের গুলি করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এতে কমপক্ষে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে আদমজী এলাকার চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার (১৩ জুন) সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয়, নতুন বাজার ও বিহারী ক্যাম্পের পকেট গেইট এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিহারী ক্যাম্পের কয়েকশত নারী-পুরুষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে। শুক্রবার (১০ জুন) আদমজী জামে মসজিদের ভেতর পুলিশ কর্মকর্তার উপর হামলার ঘটনায় রবিবার (১২ জুন) রাত ১টা থেকে সোমবার (১৩ জুন) ভোররাত ৪টা পর্যন্ত বিহারী ক্যাম্পের ভেতর অভিযান চালায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। অভিযানে ৩৫ থেকে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার এবং অনেক নারী-পুরুষকে লাঞ্ছিত এবং ঘরের দরজা জানালা ভাংচুরের অভিযোগ আনে বিহারী ক্যাম্পের বাসিন্দারা। এই ঘটনার প্রতিবাদে তারা থানা কার্যালয় ঘেরাও করে। এতে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাংরোড সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে আদমজী ইপিজেডে প্রবেশ করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ে শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, সোমবার (১৩ জুন সকাল ৬টা থেকে থানা কার্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নেয় বিহারীরা। এবং আদমজী ইপিজেডের তিনটি প্রবেশ পথে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। শ্রমিকদের ভেতরে ঢুকতে দিলেও কোন গাড়ি ঢুকতে বাধা দিচ্ছিল তারা। সকাল ৮টার দিকে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয় ঘেরাও করে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। তারা সড়কের উপর কাঠের টেবিল, চকি ফেলে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় অভিযানে যদি কোন নিরপরাধ মানুষ আটক হয়ে থাকে আলোচনার মাধ্যমে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা বলে সবাইকে এখনই ছেড়ে দিতে হবে। পরে পুলিশের অনুরোধে বিহারী ক্যাম্পের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু তার কথা তারা না শুনে পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ায়। এবং শ্লোগান দেয় মেরে ফেলবো, কতল করবো। তখন পুলিশ বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে। এরপরই পুলিশের উপর ঢিল ছুড়ে বিক্ষোভকারীরা। সকাল ৯টার দিকে এ্যাকশনে যায় পুলিশ ও র‌্যাব। লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এসময় পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিহারীরা। উভয়ের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় পুলিশ-র‌্যাবকে লক্ষ্য করে বিহারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার সেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সোয়া ৯টার দিকে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে। পরে নতুন বাজার ও বিহারী ক্যাম্পের পকেট গেইট এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। মুহু মুহু শর্টগানের গুলি ও টিয়ার সেলের শব্দে রণক্ষেত্রে পরিনত হয় ঘটনাস্থল। বিহারীরাও বৃষ্টিরমত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশের উপর। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। তবে নতুনবাজার পকেট গেইট এলাকায় ব্যারকিডে দিয়ে রাখে বিহারীরা। ফলে পুলিশ ক্যাম্পে ভেতর ঢুকতে পারেনি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিহারী জানায়, ক্যাম্পের ভোলা মেম্বার হ্যান্ড মাইকিং করে লোকজন জড়ো করে। এবং ইপিজেডের পকেট গেট, রেললাইন গেটে বাধা সৃষ্টি করে। ক্যাম্পের লোকজনকে জড়ো করে থানার দিকে পাঠায়। পরে তাকে থানায় ডাকা হলেও সে যায়নি। তারা আরও জানায়, পুলিশের মামলায় যারা আসামী হয়েছে তাদের নাম দিয়েছে পুলিশ সোর্স ক্যাম্পের ভুট্ট, নাসিম মাস্টারের ভাই তাসলিম, ভোলা মেম্বার, শাহজাদা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না এমন মানুষদের নাম তারা পুলিশকে দিয়েছে।
বিহারী ক্যাম্পের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন জানান, শুক্রবার (১০ জুন) মসজিদের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। গতকাল রবিবার রাত থেকে আজ সোমবার ভোররাত পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক পুলিশ ক্যম্পের ভেতর অভিযান চালায়। পুলিশ অনেক নারী-পুরুষকে মারধর করেছে। আবার ঘটনার সময় মসজিদে যায়নি এবং হামলায় ছিল না তাদেরও গ্রেপ্তার করেছে। এই ঘটনায় ক্যাম্পের অধিবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তারা আমার বাসায় এসে দরজা-জানালায় আঘাত করে। পরে আমি সকাল ৬টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সাহেবকে ফোন করি। কিন্তু ফোন রিসিভ না হওয়ায় আমি থানায় ঘিয়ে বিষয়টি ডিউটি অফিসারকে জানিয়ে চলে আসি। এরমধ্যে সকাল সোয়া ৬টার দিকে আদমজী ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার আমাকে ফোন দিয়ে জানায় তাদের গাড়ি ভেতরে যেতে পারছে না। তখন আমি ঘটনাটি তাকে অবহিত করি। তিনি হয়তো সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সাহেবকে ঘটনা জানিয়েছেন। পরে ওসি সাহেব আমাকে ফোন দিয়ে থানায় আসতে বলে। সকাল ৭টার একটু আগে আমি থানায় যাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি আমার ক্যাম্পের অনেক মানুষ থানার সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। থানার ওসি তখন বলে রাতে অভিযানে কোন নিরপরাধ লোক আটক হয়ে থাকলে আলোচনার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু ক্যাম্পের লোকজনের দাবি সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে। এসময় আমি ক্যাম্পের লোকজনকে অনুরোধ করে বলি আইনের বিষয় আছে যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরও তো ছাড়বে না। যারা নিরপরাধ তাদের ছেড়ে দিবে বলছে। কিন্তু তারা আমার কথা শুনে নাই।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
তবে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শওকত জামিল জানান, রাতে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পুলিশ মোতায়েন রয়েছে কয়েকটি পয়েন্টে।
পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, পুলিশের বিশেষ অভিযানে কিছু আসামী ধরা হয়েছিল। এ ঘটনায় তাদের লোকজন থানার সামনে এসে জড়ো। এ নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআইকে মারধরের ঘটনায় গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়েছিল কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু এসআইকে মারধরের ঘটনা নয়, ওই এলাকায় মাদব ব্যবসায়ি ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা রয়েছে। সব মিলিয়ে অভিযান চালিয়ে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত: শুক্রবার (১০ জুন) জুমআর নামাজের সময় খুদবার আগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এস আই আজিজুল হক ইমাম সাহেবের কাছ থেকে মাইক নিয়ে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে মাদক ব্যবসায়ি, কিশোরগ্যাং, ইভটিজিং বিষয়ের পর বলেন, ভারতে মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি করা হয়েছে। প্রতিবাদ হচ্ছে। ভারতের বিষয় ভারতে থাক। ভারতের বিষয়ে এখানে আমরা না আনি। প্রতিবাদ করবো কিন্তু যেন বিশৃংখলা না হয়। তার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তার উপর দফায় দফায় হামলা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১২০/১২৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। পুলিশের দাবি, হামলার সময় মুসুল্লি বেশে একটি মাদক ব্যবসায়ি গ্রুপ ও তাদের সহযোগিরা হামলার নেতৃত্ব দেয়।

সংবাদ প্রকাশঃ  ১৩-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ