আজ ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস:অপচিকিৎসাই হলো অধিকাংশ মানসিক রোগের মূল কারণ

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন
সিটিভি নিউজ।।  ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ লেখক ঃঃ    আজ রবিবার বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২১, পৃথিবীর সকলের মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতার দিন। ১৯৯২ সালে এটি প্রথমবার পালন করা হয়। কিছু দেশে একে মানসিক রোগ সচেতনতা সপ্তাহের অংশ হিসেবেও পালন করা হয়।আর প্রতিবছর ১০ ​​অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এর মূল লক্ষ্য হল, মানুষকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করা এবং শিক্ষিত করা।
★বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের ইতিহাস :
১৯৯২ সালের ১০ ই অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস প্রথম পালিত হয়। তৎকালীন উপ-মহাসচিব রিচার্ড হান্টার-এর সময় ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ মেন্টাল হেলথ প্রথম এই দিবস পালন করা শুরু করেছিল। প্রথমে কোনও নির্দিষ্ট থিম ছিল না, সাধারণভাবে এটি মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে প্রচার করত।১৯৯৪ সালে তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল ইউজিন ব্রোডি একটি থিমের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা ছিল ‘বিশ্বজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করা’। তিন বছরের মধ্যে, এইদিনটি সরকারী বিভাগ, সংস্থার কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত দিকগুলিতে ফোকাস করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।১৯৯৫ সালে, আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলি ব্যাপকভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারপর থেকেই বিশ্বজুড়ে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।★বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসটি কীভাবে পালন করা হয়?বিশ্বের কিছু দেশে, এই দিবস সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলি বেশ কয়েক দিন বা সপ্তাহ এবং এমনকি কয়েক মাস পর্যন্ত চলে। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ায় ‘মানসিক স্বাস্থ্য সপ্তাহ’ পালন করা হয়। ১০০-টিরও বেশি দেশে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের অনুষ্ঠান হয়।ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ মেন্টাল হেলথ বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রচার করছে এবং মানসিক অসুস্থতার ধরণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করছে যেটা সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন।আজকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ডা.এম এম মাজেদ তাঁর কলামে লিখেন….দেহ আর মন মিলেই মানুষ। যার একটি অসুস্থ হলে মানুষ স্বাভাবিক থাকতে পারে না। বর্তমানে শারীরিক চিকিৎসার ব্যাপ্তি বাড়লেও মানসিক চিকিৎসায় বিশ্বজুড়েই রয়ে গেছে সংকট। অথচ মানসিক রোগ বসে থাকেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে ৩০ কোটির বেশি মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে।যার প্রভাব পড়ছে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতায়। বাংলাদেশে এ-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও মডেল সার্ভের তথ্যমতে, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ১৯ শতাংশ এবং শিশু-কিশোরদের ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে।গত ১৯ মাসে করোনায় দেশে আত্মহত্যাসহ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা অনেক বেড়ে গেছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে কেউ না কেউ আত্মহত্যার মাধ্যমে প্রাণ হারায়। ১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ আত্মহত্যা। অধিকাংশ ব্যক্তিই আত্মহত্যার সময় কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে আট লাখ লোক আত্মহত্যায় মারা যায়। মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের মাধ্যমে আত্মহত্যার এ হার কমিয়ে আনা সম্ভব বলেও মত ডব্লিউএইচওর। দেশে প্রতি বছর ঠিক কত মানুষ আত্মহত্যা করে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। সরকারের এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০২০ সালে ১১ হাজারের মতো মানুষ আত্মহত্যা করেছে। করোনাকালে সংখ্যাটা আরও বেড়েছে।আর  ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, করোনাকালে গেল এক বছরে পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে সারা দেশে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজার ৪৩৬ নারী-পুরুষ।স্থানীয় গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৬ থেকে ১০ জন, যা উন্নত দেশের কাছাকাছি। দেশের মোট স্বাস্থ্য বাজেটের দশমিক ৫০ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রয়েছে। আবার এ খাতে দক্ষ জনবলেরও স্বল্পতা আছে। তবে গত কয়েক বছরে এ খাতের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি আগের চেয়ে আগ্রাধিকার পাচ্ছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, পাবনা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রচেষ্টায় দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অগ্রগতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পাবনা মানসিক হাসপাতালকে বিশ্বমানের ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।জনস্বাস্থ্যবিদদের ভাষ্যমতে, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে এখন মানুষের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। বিষয়টিকে সঠিক গন্তব্যের দিকে নিতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। হতাশার দিক চিহ্নিত করে তারা বলেন, দেশের কত মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে, তার সঠিক তথ্য নেই। জনশুমারিতে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সরকারের নজরদারি অতীতের চেয়ে বেড়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় আছে।★দুশ্চিন্তারোগের অনুভূতিঃ
* সবসময় মাথায় চিন্তা ঘোরে বিশেষত অসুখ বা অসুখের চিকিৎসা সংক্রান্ত চিন্তা সবচেয়ে খারাপ যা পরিনতি হতে পারে, মনে হয় যে সেটাই ঘটবে। যেমন ধরুন মনে হতে পারে যে অসুখটার খুব বাড়াবাড়ি হবে, বা মারা যেতে পারি।* বুকের ধুকপুকানি শুনতে পাওয়া (বুক ধড়ফড় করা)* মাংসপেশিতে ব্যথা বা টানটান ভাব ও রিল্যাক্স করতে না পারা।*ঘামা * দ্রুত নিশ্বাস নেওয়া (ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া)।* মাথা ঘোরা, মনে হওয়া যে এই বুঝি অজ্ঞান হয়ে যাব।* গ্যাস অম্বল হওয়া বা বারবার পায়খানায় যাওয়া ★বিষণ্নতার অনুভূতিঃ-* সবসময় বিষণ্ন বোধ করা এবং মনে করা যে এই বিষণ্নতা কোনোদিন কাটবে না
জীবনে কোনো কিছুতেই উৎসাহ না থাকা।
* কোনো কিছু উপভোগ করতে না পারা ছোটোখাটো ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে না পারা।* অসম্ভব বেশি ক্লান্ত লাগা সবসময় অস্বস্তি বা অস্থিরতা বোধ করা
ক্ষুধা না হওয়া এবং ওজন কমা (কিছু ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা হয়, ক্ষিদে আর ওজন দুটোই বাড়ে)।* ঘুম না আসা আর সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া।* সহবাসে অনীহা।* আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং নিজেকে অপদার্থ, অক্ষম ভাবা অন্যের সঙ্গ বর্জন করা।* খিটখিটে হয়ে যাওয়া।* নিজের সম্বন্ধে, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এবং পৃথিবী সম্পর্কেই সামগ্রিক হতাশা। মনে হতে পারে যে আমি কোনোদিন ভাল হব না, বা মনে হতে পারে আমি একেবারেই খরচের খাতায়।* আত্মহত্যার কথা মনে হতে পারে। বিষণ্নতায় এটা প্রায়ই হয়। এরকম মনে হলে তাই নিয়ে কথা বলা ভাল, সবটা মনের মধ্যে চেপে না রেখে।
★মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার উপায়ঃ-
এখন আমরা জানবো কিভাবে মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে হয়।  অর্থাৎ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার প্রথম উপায় হলো নিজের যত্ন নিতে হবে। মানসিক সুস্থতা পেতে নিজের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। *অবদমিত আবেগ প্রকাশের ফলে মানসিক চাপ ও জটিলতা কমে যায়।
* নিজের জন্য কিছুটা সময় আলাদা রাখতে হয় নিজের মনের কথা শুনতে হয়।* বই পড়া এবং গান শোনাও দরকার।* দুশ্চিন্তা দূর করার উপায়ঃ-অতীত ও ভবিষ্যৎ ভুলে বর্তমান দেখার চেষ্টা করতে হয়।তাছাড়া গতানুগতিক ডিসিপ্লিন জীবনে না থেকে একটু নিজের মত সময় কাটানোর দরকার। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ বিভিন্ন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার কেবল আমাদের শরীরকে নয় এমন কি মন কে ও  ভালো রাখে।  অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের বিষন্নতার জন্য মারাত্মক ভাবে দায়ী।  ভিটামিন বি টুয়েলভ,  ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার আমাদের মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন গুলোকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া তাজা ফলমূল ও শাকসবজি একটা বড় ভূমিকা রাখে।  আমাদের মানসিক শাস্তি পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের ঠিক থাকে।
* এক মাসে ৫ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট প্লানঃ-শরীর সুস্থ রাখতে যেমন পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। তেমনি মনকে সুস্থ রাখতেও ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। কারণ পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠে। ফলে আমরা ক্লান্তি বোধ করি।  কমে যায় আমাদের কর্মস্পৃহা। ঘুম আমাদের শরীরে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ গুলো সারিয়ে তোলে। আমাদের মনকে চাঙ্গা করে। তাই মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে আমাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম খুব বেশি জরুরি। এরপরে নিয়মিত ব্যায়াম। মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শারীরিক ব্যায়াম খুবই জরুরী। স্ট্রেস ও বিষণ্নতা কাটাতে ভীষণ কাজে লাগে। ব্যায়ামের ফলে শরীরের ক্লান্তি ও মানসিক চাপ হ্রাস পায়।  তাই মনকে চাঙ্গা রাখতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
* দ্রুত ওজন কমানোর উপায়ঃ-
শখের কাজ করা। নিয়মিত অভ্যাসের একটু বাইরে গিয়ে যেসব বিষয়ে করলে মন ভাল থাকে ওই ধরনের কাজ করা। যেমন অনেকের ছবি আঁকতে ভালো লাগে, বাগান করতে ভালো লাগে,রান্না করতে ভালো লাগে, যখন মন খারাপ থাকবে তখন এই ধরনের কাজগুলো করা উচিত এতে মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়।
* নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা উচিতঃ-
মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো। প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটালে মানসিক হতাশা অনেকাংশে কেটে যায়। পরিবারের সাথে মন খুলে মেলামেশা করলে, মন খুলে কথা বললে, আলিঙ্গন করলে, মানসিক হতাশা অনেকাংশে কমে মানসিক সুস্থতা লাভ করা যায়। এছাড়াও অন্য একটি উপায় রয়েছে যার মধ্য দিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়, সেটি হল নিজের মনের যত গোপন কথা অর্থাৎ যে সকল বিষয় নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হচ্ছেন, কাছের কোন মানুষের সাথে কথা গুলো শেয়ার করা। এতে করে নিজের মন অনেক হালকা হয়ে যায়। এবং মানসিক সুস্থতা ফিরে পাওয়া যায়।মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে আত্মহত্যার এ হার কমিয়ে আনা সম্ভবমানসিক রোগ নিয়ে  অজ্ঞতা, অসচেতনতা আর কুসংস্কারের ফলে মানসিক রোগ বলে কোনো কিছুর অস্তিত্বই স্বীকার করতে চান না অনেকে। গায়েবি আওয়াজ শোনা, ভ্রান্ত কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাস, অহেতুক সন্দেহ, আচার-আচরণ বা কথাবার্তার অস্বাভাবিক পরিবর্তন, কনভার্সন ডিসঅর্ডার (যা হিস্টিরিয়া বা মূর্ছারোগ নামেই বেশি পরিচিত)-এর উপসর্গগুলোকে জিন-ভূতের আছর,জাদু-টোনা-তাবিজ-আলগা বাতাসের প্রভাব বলেই বিশ্বাস করেন অনেকে। আত্মীয়স্বজন এসব সমস্যায় আক্রান্ত হলে তারা চিকিৎসাও করান তেল-পড়া, পানি-পড়া, তাবিজ, ঝাড়-ফুঁক, ‘শিকল থেরাপি’ ইত্যাদির মাধ্যমে। অনেকের কাছে মানসিক রোগের উপসর্গগুলো বয়সের দোষ, বিয়ের জন্য টালবাহানা, ঢং বা ভং ধরা। চিকিৎসার ব্যাপারে এদের বিশ্বাস- ‘মাইরের উপর ওষুধ নাই।’ কখনো কখনো শারীরিক উপসর্গ যে মানসিক রোগের কারণে হতে পারে- তাও অনেকে মানতে চান না। ফলে, মানসিক সমস্যার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে শারীরিক উপসর্গ নিয়েই ব্যতিব্যস্ত থাকেন তারা।এতসব কুসংস্কার ও অজ্ঞতার বেড়াজাল ডিঙিয়ে যারা মানসিক রোগ চিকিৎসার আওতায় আসেন, তাদেরও বড় একটা অংশ ওষুধ নিয়ে নানান বিভ্রান্তিতে সঠিক চিকিৎসা করান না। পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে মানসিক রোগ চিকিৎসার আধুনিক ওষুধ আবিষ্কৃত হয়। এর পর সময়ের গতির সঙ্গে মানসিক রোগ চিকিৎসারও অগ্রগতি সাধিত হয়, আবিষ্কৃত হয় নতুন নতুন ওষুধ, সেসব ওষুধের সফল প্রয়োগ মানসিক রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমাদের দেশে মানসিক রোগের ওষুধ সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এখনো বিদ্যমান।★মানসিক চাপ উওরণে ইসলামের দিকনির্দেশনাঃ-নানাবিধ দুঃশ্চিন্তা ও হাতাশার কারণে মানুষের মাঝে এক ধরণের চাপ সৃষ্টি হয়। সাধারণত এটাকে মানসিক চাপ বলে। এসব মানসিক চাপ উত্তরণে ইসলামে রয়েছে অনেক দিকনির্দেশনা। যা মেনে চললে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়। তাহলো-* নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াতঃ-কুরআন তেলাওয়াত মানুষের অন্তরকে প্রফুল্ল করে তোলে। কেননা কুরআন তেলাওয়াত মুমিনের প্রফুল্লতার অনন্য উৎস। শুধু তাই নয়, কুরআন তেলাওয়াতে মুমিনের মনের প্রফুল্লতা ও মানসিক প্রশান্তি বাড়তে থাকে। কুরআনের আলোয় আলোকিত মানুষ দুনিয়ার সব দুঃশ্চিন্তা ও হতাশা থেকে থাকে মুক্ত।*  নামাজে যত্নবান হওয়াঃ-যে কোনো বিপদ-মুসিবত, পেরেশানির সময় নামাজের মাধ্যমেই প্রকৃত প্রশান্তি লাভ কর যায়। কেননা নামাজের মাধ্যমেই বান্দা মহান আল্লাহর সাহায্য লাভ করে থাকেন। তাই মানসিক প্রশান্তি লাভে নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা বলেন-’তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৫)- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন।’ (আবু দাউদ) সাহাবায়ে কেরামও এ আমলে অভ্যস্ত ছিলেন। ছোট থেকে ছোট কোনো বিষয়ের জন্যও তারা নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। এমনকি জুতার ফিতা ছিড়ে গেলেও নামাজের মাধ্যমে সমাধা করা।* বেশি বেশি ইসতেগফার করা:-মানসিক চাপ সামলাতে বেশি বেশি ইসতেগফারের বিকল্প নেই। যেসব কারণে মানুষ চাপে পড়ে, তন্মধ্যে অন্যায়-অপরাধ বেশি করা, অর্থকষ্টে থাকা, সন্তান-সন্তুতি না থাকা, জীবিকার অপ্রতুলতা ইত্যাদি। এ সবের সমাধানে কুরআনের নির্দেশ হলো ইসতেগফার করা। এ ইসতেগফারেই মানুষ উল্লেখিত সমস্যা থেকে সামাধন খুঁজে পায় বলে ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহ। কুরআনে এসেছে– ‘অতপর বলেছি- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে, আল্লাহ তাআলা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। তার সব দুঃশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ)*বেশি বেশি দরূদ পড়া:-দুরুদ পড়লে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি রহমত নাজিল করেন। এ রহমত মানুষকে যাবতীয় মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখে। এটি আত্মপ্রশান্তি লাভের সহজ উপায়ও বটে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পড়া এমন একটি ইবাদত যে, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন। হাদিসে এসেছে-হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার ওপর অনেক বেশি দুরুদ পড়তে চাই। আপনি বলে দেন আমি দুরুদে কতটুকু সময় দেব?তিনি বললেন- ’তুমি যতটুকু চাও!আমি বললাম- এক চতুর্থাংশ সময়?তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও!যদি আরো বাড়াও তা তোমার জন্যে ভালো।আমি বললাম- অর্ধেক সময়?তিনি বললেন- তুমি যতটুকু সময় পড়তে পার, যদি এর চেয়ে আরো সময় বাড়াও তোমার জন্যে ভালো। আমি বললাম- তাহলে সময়ের দুই তৃতীয়াংশ?তিনি বললেন- তুমি যতটুকু চাও, যদি আরো বাড়াও তোমার জন্যে ভালো।আমি বললাম- সম্পূর্ণ সময় আমি আপনার ওপর দুরুদ পড়ায় কাটিয়ে দেব।তখন তিনি বললেন- তাহলে এখন হতে তোমরা পেরেশানি দূর হওয়ার জন্য দুরুদই যথেষ্ট এবং তোমার পাপের কাফফারার জন্য দুরুদই যথেষ্ট।’ (তিরমিজি)* তাকদিরের ওপর বিশ্বাস রাখা:-সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ সব কিছুর ক্ষেত্রেই মুমিন বান্দা তাকদিরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। আর দুঃশ-হতাশা, অভাব-অনটন, বিপদ-আপদে তাকদিরের উপর বিশ্বাস থাকলে কোনো মানুষই মানসিক চাপে ভোগে না। তাই মানসিক চাপের সময় মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে তাকদিরর উপর ছেড়ে দেয়ায় রয়েছে মানসিক প্রশান্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন– ’আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা মোচন করতে পারে না। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ পরিবর্তন করারও কেউ নেই।’ (সুরা ইউনুস : আয়াত ১০৭)- ‘পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় আসে আমি ইহা সংঘটিত করার আগেই ইহা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহর পক্ষে ইহা খুবই সহজ।’ (সুরা হাদিদ : আয়াত ২২)* হতাশ না হওয়া:-অনেক ক্ষেত্রেই হতাশা থেকে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। তাই দুনিয়ার জীবনে বিপদ-আপদে হতাশ না হওয়াই ঈমানদারকে কাজ। যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের বিপদ-আপদ আসতে পারে এ মানসিকতা সব সময় পোষণ করা। ফলে তা মানুষকে বিপদে হতাশা থেকে রক্ষা করে মানসিক চাপমুক্ত রাখে। কুরআনুল কারিমে এসব বিপদ-আপদ দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৬)* পরকালের বিপদের কথা স্মরণ করা:-
মৃত্যুর স্মরণ মানসিক চাপকে একেবারেই মিটিয়ে দেয়। পরকালের কঠিন পরিস্থিতির কথা স্মরণ রাখলে দুনিয়ায় মানুষ স্বাভাবিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। ফলে মানুষের দ্বারা কোনো অন্যায় কাজ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। তখনই মানুষ থাকে মানসিক চাপমুক্ত। কারণ পরকালের তুলনায় দুনিয়ার বিপদ-আপদ একেবারেই নগন্য। আল্লাহ বলেন-’যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে।’ (সুরা নাযিআত : আয়াত ৪৬)* আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করা:-
মানসিক অশান্তি থেকে  মুক্ত থাকতে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের বিকল্প নেই। কেননা তিনিই বলেছেন- ‘যে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক : আয়াত ৩)
সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ায় সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করতে জানে তার জন্য কোনো চিন্তা নেই। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- আমি সেরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বুখারি)
* দোয়া করাঃ-মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত দোয়া করাও অন্যতম। কারণ হাদিসে দোয়াকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। দোয়া বা প্রার্থনা করলে, কোনো কিছু চাইলে মহান আল্লাহ খুশি হন। না করলে বরং অসন্তুষ্ট হন। তবে দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে জানি, কোনো বিপদে পড়া লোক যদি তা পড়ে তবে আল্লাহ তাআলা সে বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই (হজরত) ইউনুস (আলাইহিস সালাম)-এর দোয়া। তাহলো-উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বলিমিন।’অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিজি)এছাড়াও চিন্তা ও পেরেশানির সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। তাহলো-উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপনতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।তাই বর্তমান সময়ে  মানসিক চাপে থাকেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কম-বেশি সবাই মানসিক চাপ ও উদ্বেগে থাকে। মনে হয় তা যেন এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই উল্লেখিত আমলগুলো অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। পরিশেষে. আল্লাহ তাআলা মসুলিম উম্মাহসহ সবার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, কর্মক্ষেত্রের সব মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনার মাধ্যমে মানসিক চাপমুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
★হোমিওসমাধানঃমানসিকভাবে সুস্থতার মানে কি আবেগ-অনুভূতির শূণ্যতা ?  হ্যানিম্যান প্রমাণ করে গেছেন যে, শারীরিক কোন রোগের কুচিকিৎসাই হলো অধিকাংশ মানসিক রোগের মূল কারণ,মানসিক রোগীর জন্য প্রাথমিক ভাবে যেইসব মেডিসিন লক্ষণের উপর আসতে পারে.নাক্স ভুমিকা,থুজা,সালফার
অরাম মেট, প্লাটিনা, পালসেটিলা, স্ট্র্যামোনিয়াম, ভিরেট্রাম, ইগ্নেসিয়া, নেট্রাম মিউর, এসিড ফস,ল্যাকেসিস, চায়না, বিউফো রানা, ককুলাস ইন্ডিকা,ব্যারাইটা মিউর সহ আরো অনেক মেডিসিন আসতে পারে।
লেখক,সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য
প্রতিষ্ঠাতা,বাংলাদেশ রোগী কল্যাণ সোসাইটি
ইমেইল, drmazed689@gmail.com

মোবাইল,০১৮২২৮৬৯৩৮৯সংবাদ প্রকাশঃ  ১০-১০-২০২১ইং । (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email