আজ নওগাঁ পাক হানাদার মুক্ত দিবস

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ।।    মো.আককাস আলী,নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি :- আজ ১৮ ডিসেম্বর,নওগাঁ পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় এলেও নওগাঁ হানাদার মুক্ত হয় এই দিনে। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর ২৬ মার্চেই নওগাঁয় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের প্রথম ডেপুটি স্পিকার এ্যাড. বয়তুল্লাহকে(এনএনএ) আহ্বায়ক নির্বাচিত করা হয়। এ পরিষদে অন্যান্যের মধ্যে অন্যতম সদস্য ছিলেন সি.এন.সি জেনারেল জালাল হোসেন চৌধুরীর, মোঃ আব্দুল জলিল, আ ন ম মোজাহারুল হক (ন্যাপ ভাসানী), এমএ রকীব (ন্যাপ মোজাফফর), আকতার হোসেন সিদ্দিকী, একেএম মোরশেদ প্রমূখ। নওগাঁ কেডি উচ্চ বিদ্যালয়ে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের কার্যালয় স্থাপিত হয়। এখানে বসেই সব ধরণের কর্মসূচী গ্রহণ করা হত। নওগাঁ ছিল ইপিআর ৭ নং উইং এর হেড কোয়ার্টার। জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড হারুন অর রশিদ বলেন , ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে বিজয় দিবস পালিত হলেও দেশ স্বাধীনের দুই দিন পর ১৮ ডিসেম্বর নওগাঁকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এদিন প্রায় দুই হাজার পাকিস্থনি সেনা নওগাঁয় যৌথবাহিনী কাছে আত্মসমর্পণ করে। ২২ এপ্রিল নওগাঁ পাকিস্তানি হানাদারদের দখলে চলে যায়। প্রায় সাড়ে ৮ মাস ধরে পাক হানাদার বাহিনীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালায়। ১৪ ডিসেম্বর রাতের মধ্যে স্বপরিবারে নওগাঁ কেডি স্কুলে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয়। এ সময় হানাদার বাহিনী নওগাঁ সাবেক থানা চত্বর, আদালত পাড়া এবং এসডিও বাসভবন চত্বরে আত্মরক্ষামূলক প্রতিরক্ষা বেষ্টনী গড়ে তোলে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে। এ খবর শোনার পরও নওগাঁর পাকিস্তান সেনাবাহিনী অত্মসমর্পণ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসম্পর্ণ করবে না বলে ঘোষণা দেয়। ফলে বীরমুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে পর দিন সকাল ৭টার দিকে প্রায় ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নওগাঁ শহরের দিকে অগ্রসর হন। ১৭ ডিসেম্বর, শীতের সকাল। মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের জগৎসিংহপুর ,খলিশাকুড়ি, শিবপুর, হাট-নওগাঁ থেকে শহরে দিকে আসতে দেখে পাকিস্তানি সেনারা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উভয় পক্ষে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন।মুক্তিযুদ্ধে বিষয়ক গবেষক ও একুশে পরিষদ নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক এম এম রাসেল বলেন, ১৯৭১ এর ১৭ ডিসেম্বর,৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা যাঁরা শহিদ হলেন : তাঁরা হলেন এচাহাস আলী খান (শৈলগাছি, বাঁকাপুর গ্রাম), শহিদ ফরিদ হোসেন (বদলগাছির সর্মাপুর গ্রাম), শহিদ আমজাদ হোসেন (বদলগাছির বিলাশবাড়ি গ্রাম), শহিদ ওসমান (বদলগাচছর কেশাইল গ্রাম), শহিদ শাহাদত আলী মীর (বদলগাছির বলরামপুর গ্রাম) এবং কিশোর বীর মুক্তিযোদ্ধা অছিম উদ্দিন (তিলকপুরের নওজোর গ্রাম)। ১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখর, পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করলে হানাদার বাহিনীর আর কিছুই করার ছিল না। ফলে সকাল ১০টার দিকে প্রায় দুই হাজার পাকসেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল, সরকারি গার্লস স্কুল, পুরাতন থানা চত্বর এবং এসডিও অফিস থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করে। তৎকালীন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান। বর্তমান পুরাতান কালেক্টরেট (এসডি) অফিস চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। ফলে নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর।

সংবাদ প্রকাশঃ  ১৭-১২-২০২১ইং । (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email