অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ’র জন্ম না হলে মাত্র সাড়ে ৯ মাসে বাংলাদেশ স্বাধীন হতনা

সিটিভি নিউজ।।   এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ সংবাদদাতা জানান ===
মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা, ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন কর্তৃক গঠিত বিশেষ গেরিলা বাহিনী প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম উদ্যোক্তা, উপমহাদেশের বাম রাজনীতির অন্যতম পুরোধা, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)’র প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ’র জন্ম না হলে মাত্র সাড়ে ৯মাসে দেশ স্বাধীন হতনা বলে দাবী করেছেন আলোচকরা।
বক্তারা বলেন, ১৯৭১সালে মুজিবনগর প্রবাসী সরকার গঠন করার পর তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধীর সাথে দেখা করেন এবং মুজিব নগর প্রবাসী সরকারকে স্বীকৃতিদান, বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করতে যুদ্ধের প্রস্তুতি, প্রশিক্ষন, অস্ত্রপদানসহ সার্বিক সহযোগীতার আহবান জানান। তখন ইন্দিরাগান্ধী তাজউদ্দিন আহমেদকে থামিয়ে বলেন, আওয়ামীলীগ একটি বিশাল দল, পার্লাম্যান্টরেও সংখ্যা গরষ্ঠ। এদলের ১৬৭ জন এমপির মধ্যে ১৩৭জন এমপি খন্দকার মোস্তাকের নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে আমেরিকায় কনভেনশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই দল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আশা করা ঠিক না। আপনারা এসেছেন, থাকেন খান তার সব দায়িত্ব আমাদের তবে যুদ্ধে সহযোগীতা সম্ভব নয়। ভারতের একদিকে চিন, অপরদিকে পাকিস্তান উপরে আমেরিকা। আমার দেশের উপর হামলা করলে আমাকে রক্ষা করবে কে ?
তখন তাজউদ্দিন আহমেদ কমরেড মনিসিংহ ও অধ্যাপক মুজাফ্ফর আমমেদ’র সাথে কথা বলেন। তখন ভারতে ১১টি রাজ্যে কমিউনিস্টরা ক্ষতাসীন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান এস,এ ডাঙ্গের সাথে দেখা করে প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বৈঠকের আয়োজন করেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মস্কো যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমরেড মনি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান এস,এ ডাঙ্গে, প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ব্যাক্তিগত সচিব ও ডিপি ধরসহ ৫ সদস্যের একটি দল মস্কোতে পাঠানো হয়। মস্কোতে প্রতিনিধিদল ব্রেজনেভের সাথে দেখা করে বাংলাদেশের গনহত্যা নির্যাতনের ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। ব্রেজনেভ সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, কিভাবে সহযোগীতা করব ? তখন অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত সীমান্ত, একদিকে বঙ্গপসাগর। ভারতকে সহযোগীতা করলেই আমারা সহযোগীতা পাব। তখনই ভারতের সাথে মস্কোর ২৫ বছরের সামরিক চুক্তি হয়।
ওই চুক্তির পর ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কোমর শক্তকরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদসহ কমিউিনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন বিশ^ব্যাপী জনমত তৈরীতে কাজ করেন। বাংলাদেশের পক্ষে জাতিসংঘের প্রতিনিধিত্ব করে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ। ইন্দিরাগান্ধী দির্ঘমেয়াদী যুদ্ধের আশংকায় ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন কর্তৃক গঠিত বিশেষ গেরিরা বাহিনী গঠনে সহযোগীতা করেন। সর্বশেষ আমেরিকার সপ্তম নৌবহরের বিরুদ্ধে মস্কোর অষ্টম নৌবহর ধাওয়া করলে আমেরিকা পিছু হটে। আমরা র্অপ সময়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পেরেছি। সে কারনেই অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ’র জন্ম না হলে বাংলাদেশ এতো অল্প সময়ে স্বাধীন হতনা হলে।
জন্মশতবার্ষিকীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন। ১৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার এ নেতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কুমিল্লার দেবীদ্বার’র এলাহাবাদ তার সমাধিস্থলে বিভিন্ন সংগঠনের পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে তার স্মৃতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত করা হয়। এসময় কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার’র সাংসদ রাজী মোহাম্মদ ফখরুল’র পক্ষে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়াও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)’র কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা ও উপজেলা কমিটি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কুমিল্লা জেলা ও উপজেলা কমিটি। ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনী, দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাব, এলাহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ, এলাহাবাদ মহা বিদ্যালয়, এলাহাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তার সমাধিস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে এলাহাবাদ কলেজ মিলনায়তনে ন্যাপ উপজেলা সভাপতি অনিল ঠাকুরের সভাপতিত্বে এবং সাধারন সম্পাদক মমিনুর রহমান বুলবুল মাষ্টারের সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, ন্যাপ কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম মেম্বার মোহাম্মদ আলী ফারুক, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাপ কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, ন্যাপ প্রেসিডিয়াম মেম্বার এডভোকেট আব্দুর রহমান, কাজী সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশের কমিউিনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কুমিল্লা জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি এবিএম আতিকুর রহমান বাশার।
বক্তব্য রাখেন ন্যাপ কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহুল আমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আলী ইমাম, ন্যাপ প্রবীণ নেতা মুস্তাকুর রহমান ফুল মিয়া, এলাহাবাদ কলেজ’র অধ্যক্ষ একেএম জহিরুল আলম সরকার, এলাহাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্সক পরিমর দত্ত, সিপিবি উপজেলা সভাপতি কমরেড আব্দুল ওয়াদুদ, সাধারন সম্পাদক সৈয়দ খলিলুর রহমান বাবুল, মোসলেহ উদ্দিন মিছির মাষ্টার, মোঃ সিরাজুল ইসলাম সরকার, ষেয়দ বুলবুল, বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম, মোঃ নজরুল ইসলাম প্রমূখ।

সংবাদ প্রকাশঃ  ১৫-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ