কনের শ^শুর বাড়ির ৪ অতিথির আপ্যায়নের খরচ যোগাতে ব্যার্থ হয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে দিন মজুরের আত্মহত্যা
জীবদ্বশায় কণেকে শ^শুর বাড়ির লোকদের হাতে আর তুলে দেয়া হলোনা হতভাগা পিতার
এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ দেবীদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি//
নববিবাহীতা কণ্যাকে তার শ^শুর বাড়ির লোকদের হাতে আর তুলে দেয়া হলনা হতভাগ্য দিনমজুর পিতা গিয়াস উদ্দিন(৬০) এর। পারিবারিক কলহের জের ধরে কণ্যার শ^শুর বাড়ির লোকদের আপ্যায়নের খরচ জোগাতে পরামর্শ চাইলে, নিজ স্ত্রী, কণ্যা, পুত্রের শারিরীক ও মানষিক নির্যাতনে ক্ষোভে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলেন গিয়াস উদ্দিন।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার দিবাগত রাতে দেবীদ্বার উপজেলার ইউছুফপুর ইউনিয়নের ইউছুফপুর গ্রামের মিলন মুহুরীর বাড়িতে। সে বিলাত হোসেন এর পুত্র।
প্রত্যক্ষদর্শি নিহতের ছোট ভাই কাইয়ুম মিয়ার স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার জানান, গত শুক্রবার তার ভাসুরের ছোট মেয়ে স্থানীয় মাদ্রাসায় নবম শ্রেণীতে পড়–য়া রিয়া মনির সাথে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দিঘীরপার গ্রামের সৌদী প্রবাসী ইকবাল হোসেন এর সাথে মোবইল ফোনে বিয়ে হয়। আজ (বৃহস্পতিবার) রিয়া মনিকে (নববধূকে) তুলে নিতে তার শ^শুর বাড়ির ৪ জন অতিথি আসার কথা ছিল। গতকাল বুধবার বিকেলে অতিথিদের আপ্যায়নে বাজার সদাই কিভাবে করবে তা নিয়ে স্ত্রী রীনা বেগম ও বড় মেয়ে লিমা আক্তার এর সাথে পরামশর্^ করছিলেন, কথা বলার এক পর্যায়ে স্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামীর উপর চড়াও হন। তার স্ত্রী বলেন তুমি ঘরে বসে বসে খাবে কাজ করবেনা। আবার মেয়ের বিয়েতে ৪ জন লোক খাওয়াতে পারবেনা। কেমন পুরুষ তুমি। যদিও আমার ভাসুর জানান, আমি অসুস্থ, তার পরও কেউ কাজে নেয়না। কাজ না পেলে আমি কি করব। এসময় তার বড় মেয়ে লিমা আক্তার ঝারু দিয়ে তার বাবাকে পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে মা’ মেয়ে টানা হেচড়া করে মাধর করতে থাকে। এসময় গায়ের পাঞ্জাবীটা ছিড়ে ফেলে, পিতা গিয়াস উদ্দিন তার মেয়ে লিমাকে এ আচরনের জন্য অভিশাপ দিলে, লিমা তার বাবাকে সজোরে লাথি মেরে ঘর থেকে বাহিরে ফেলে দেয়। এক মাত্র পুত্র মোঃ রাব্বী মিয়া (২৫) সন্ধ্যার পর বাড়ি আসলে তার কাছে স্ত্রী- কণ্যার মারধরের বিচার চান। পুত্র রাব্বী উল্টো বাবাকে তিরস্কার করেন। এসময় স্ত্রী পুত্র কণ্যা মিলে তাকে শারিরীক ও মাষিক নির্যাতন করেন। রাগে ক্ষোভে তিনি পাশের ঘরে আড়ায় প্লাষ্টিকের রশিতে ঝুলে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়রা তার গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় দেখেন। পুলিশকে খবর দিলে দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান এক দল পুলিশ নিয়ে লাশের সুরতহাল তৈরী করে ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে আসেন।
নিহতের চাচাতো ভাই মিলন মুহুরী(৬০), প্রতিবেশী শাহ আলম(৬২) ও বাচ্চু মিয়া (৭০) বলেন, মৃত: গিয়াস উদ্দিন একজন সরল সহজ লোক ছিলেন। তিন কণ্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তার স্ত্রী রীনা বেগম প্রায় ১৫ বছর লিবিয়া প্রবাসী ছিলেন, তার এক মাত্র পুত্র রাব্বীও ৫ বছর লিবিয়া প্রবাস জীবন কাটিয়ে গত রমজান মাসে মা’ ছেলে দেশে ফিরেন। অভাব অনটনের সংসার। থাকার ভিটে জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। মা ছেলে বিদেশ প্রবাস জীবন কাটালেও তাদের বিদেশ পাঠানো ঋণের টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারেনি। এরই মধ্যে ৩ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেকে বিয়ে করালেও তার স্ত্রী এখনো ঘরে তোলা হয়নি। গিয়াস উদ্দিন পেশায় দিনমজুর। এখন কাজ নেই তাই উপার্জন করতে পারছেনা। অভাবের সংসার। স্ত্রী, কণ্যা, পুত্র এক জোট হয়ে তাদের পরিবারের কর্তাকে প্রায়ই মারধর ও মানষিক যন্ত্রনায় রাখত।
এ ব্যাপরে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারনা হচ্ছে। ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার সময় বাঁচার চেষ্টায় ছটফট করাকালে টিনের সাথে ২ পা লেগে কেটে গিয়ে কিছু ব্লিডিং হয়। আমরা একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেছি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পরই আসল সত্যটা বলা যাবে।
সংবাদ প্রকাশঃ ২৬-০৮-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন=
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)