দেবীদ্বারের কলেজ ছাত্র মহিনের লাশ ৩৬দিন পর ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ ।।    এবিএম আতিকুর রহমান বাশার  সংবাদদাতা জানান===
দেবীদ্বারে মাঈনুদ্দিন (মহিন) নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যুর কারন,- হত্যা- না আত্মহত্যা! এ রহস্য উদঘাটনে; মৃত্যুর ৩৬দিন পর আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে।
কুমিল্লা  চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী –ম্যাজিষ্ট্রেট আবু বকর সরকার’র উপস্থিতিতে রোবার দুপুরে দেবীদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের চুলাশ গ্রামের মাউদ আলীর বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান থেকে ওই লাশ উত্তোলন করা হয়। এসময় অন্যান্যের মধ্যে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এস,আই) আব্দুস সালাম ও সহকারী উপ-পরিদর্শক(এ.এস.আই) মোঃ রুহুল আমীন তার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।
মহিনের বোন আয়শা আক্তার, তার ভাইকে প্রেমের ঘটনায় গত ১৮জুলাই রাত অনুমান সাড়ে ৯টায় প্রেমিকার বাড়িতে ডেকে নিয়ে প্রেমিকার পরিবারের সদস্যরা নির্মমভাবে নির্যাতনে হত্যা করার অভিযোগ এনে প্রেমিকার বড় ভাই জামাল হোনেস(২১), মেহেদী হাসান(১৯), প্রেমিকা রিয়া মনি(১৮), প্রেমিকার বাবা আবুল হাসেম(৫২) সহ ৪ জনকে নামে এবং অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে গত ২৬ জুলাই কুমিল্লা ৪ নং আমলী আদালতের চীফ-জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট’র নিকট একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- সি.আর-১৬৩/২০ ইং। আদালত প্রথম আদেশ হিসেবে, মামলা দায়েরের পর নালিশী বিষয়ে হত্যা বা আত্মহত্যার ঘটনায় দেবীদ্বার থানায় কোন অপমৃত্যু বা হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
আদালতের আদেশ পেয়ে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ নালিশী ঘটনার বিষয়ে থানায় কোন অপমৃত্যু বা হত্যা মামলা দায়ের হয়নি মর্মে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করলে, গত ২৯ জুলাই উক্ত হত্যা মামলার ভিকটিম মাঈনুদ্দীন (মহিন)’র লাশ কবর থেকে উত্তোলন পূর্বক ময়নাতদন্তের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা সহ মামলাটি নথিভূক্ত করার জন্য দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন।
নির্দেশ মোতাবেক গত ২৯ জুলাই রাত সাড়ে ৮টায় মামলাটি দেবীদ্বার থানায় নথিভূক্ত করা হয় এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এস,আই) আব্দুস সালামকে। আব্দুস সালাম তদন্তের প্রয়োজনে তার পারিবারিক কবরস্থান হতে লাশ উওোলন পূর্বক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি ও ময়না তদন্তের জন্য গত ৩০ জুলাই কুমিল্লা ৪ নং আমলী আদালতের চীফ- জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট’র নিকট আবেদন করেন। আদালত আবেদন মন্জুর করে গত ১৬ আগস্ট নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আবু বকর সরকারকে ভিক্টিমের লাশ কবর থেকে উত্তোলনের দায়িত্ব দেন।
২৩ আগষ্ট রোববার দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আবু বকর সরকার’র নেতৃত্বে মহিনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন ও ছোরত হাল রিপোর্ট তৈরী পূর্বক ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতল মর্গে প্রেরন করা হয়।
স্থানীয় ও স্বজনরা জানান, রাজামেহার ইউনিয়নের মরিচা সায়েদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীর সাথে রাজামেহার ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সী আদর্শ কলেজ’র ছাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মাঈনুদ্দিন (মহিন)’র প্রায় ২/৩ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ১৮ জুলাই শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের মরিচা দক্ষিণ পাড়া (হোসেনপুর) গ্রামের প্রেমিকার বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটে। প্রথমে প্রেমিকার পরিবার দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন ও এ ঘটনাটিকে হত্যা নয়, আত্মহত্যা বলে প্রচার করে আসছিলেন। নিহত মহিনের বাবা আবুল হাসেম সৌদিআরব প্রবাসী থাকার কারণে নিহতের মা সুরাইয়া আক্তার অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নিহত মহিনের স্বজনদের পুলিশি ঝামেলা ও ভয় ভীতি দেখিয়ে লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফন করতে বাধ্য করান।
নিহত মহিনের বন্ধু মিনহাজ জানান, গত ৫/৬ মাস আগে ওই স্কুলছাত্রীর ভাই -মেহেদী হাসান ইভটিজিং’র অভিযোগে এনে মহিনকে মরিচা ছায়েদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে আটকে রেখে বেদম মারধর করেছিল। পরে স্থানীয়দের সহাযোগীতায় একটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে মুহিনকে ছাড়িয়ে আনেন তার মা। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় মুহিনকে মারধরের হুমকি দিয়ে আসছিল মহিনের প্রেমিকার বাবা ও ভাইয়েরা।
নিহতের পরিবার ও মহিনের বন্ধুরা জানান, গত ১৮ জুলাই রাতে তারা দুজনই পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে মেয়েটির বাড়ির আঙ্গিনায় মিলিত হয়। পরে রাত পৌনে ১০টায় মেয়ের বড় ভাই মেহেদী হাসান মহিনের খালাতো ভাই আবু তাহেরের কাছে ফোন করে বলেন, ‘তোমার ভাই এখানে বিষ খেয়ে পরে আছে তাকে তুমি এসে নিয়ে যাও।
নিহতের খালাতো ভাই আবু তাহের জানান, তিনি ঘটনাস্থলে এসে দেখতে পান, মহিন তার অন্ডকোষ চেপে ধরে মাটিতে পরে আছে এবং তার খালাতো ভাই আবু তাহেরকে বলেন, জামাল ও মেহেদীর পরিবারের হাত থেকে আমাকে বাঁচন। মহিনকে উদ্ধার করে তার খালাতো ভাই আবু রায়পুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মহিনকে মৃত; ঘোষণা করেন। এসময় তার মুখে বিষের কোনো গন্ধ পাননি বলেও তারা জানান।
মহিনের লাশ কাফনকারী আবদুল জলিল ও মো. শিপন মিয়া জানান, মহিনের পুরুষ লিঙ্গ ও অন্ডকোষ লাল হয়ে ফুলে ছিল। তার মুখ থেকে বিষের গন্ধ বা মুখ থেকে লালা বের হয়নি।
এ বিষয়ে ওই স্কুলছাত্রী মহিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবিগুলো পাওয়া গেছে ছবিগুলো তার ও মুহিনের। মুহিন তাকে বাড়ি থেকে পালানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে চাপ দিতো। আমি তার সঙ্গে না পালালে সে আমার বাড়িতে এসে সুইসাইড করবে বলে আমাকে একাধিকবার বলেছে। ওই রাতে কি ঘটেছে ? এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যায় ওই স্কুলছাত্রী।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এস,আই) আব্দুস সালাম জানান, তদন্ত চলছে, ময়না তদন্তের রিপোর্ট প্রাপ্তির পরই বলা যাবে ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা।
ওই ব্যপারে মহিনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের দায়িত্বে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবু বকর সরকার নিহত মহিনের মা’য়ের বক্তব্যের বরাত দিয়ে বলেন, ঘটনাটির সঠিক তদন্ত হবে, তদন্তেই আসল সত্য বেড়িয়ে আসবে।  সংবাদ প্রকাশঃ  ২৩২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=

Print Friendly, PDF & Email