নারায়ণগঞ্জে প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতাল এখনো করোনা রোগি ভর্তি নেয়নি!

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : গত ২২ জুন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানসহ জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সাইনবোর্ডে অবস্থিত প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছিল তারা ওইদিন থেকেই করোনা রোগি ভর্তি নেবে এবং বিনা খরচে চিকিৎসা দেবে। তাদের ওই ঘোষণার এক সপ্তাহ পার হলেও প্রতিষ্ঠানটি মঙ্গলবার (৩০ জুন) পর্যন্ত কোন করোনা রোগি ভর্তি নেয়নি। নানা অজুহাতে তারা কালক্ষেপন করছে।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি আগামী ১ জুলাই বা তার আগে থেকেই তারা করোনা রোগি ভর্তি নেবেন। কিন্তু যে আইসিইউর জন্য এতো আলোচনা সমালোচনা হাসপাতালটিতে থাকা সেই আইসিইউ সুবিধা পাবেনা করোনা আক্রান্ত রোগীরা। করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সুবিধাসহ ১১ বেডের আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হবে। তবে এরজন্য নূন্যতম মূল্য পরিশোধ করতে হবে রোগিকে।
নারায়ণগঞ্জে বেসরকারি এই হাসপাতালটিতেই একমাত্র আইসিইউ বেড রয়েছে। আইসিইউ’র অভাবে নারায়ণগঞ্জের অনেক রোগি মারা গেছেন।
গত ১৯ জুন প্রো অ্যাকটিভ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি না নিলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আলটিমেটাম দেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। ১৯ জুন বিকেলে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জের প্রো এ্যাকটিভ ও আল বারাকা হাসপাতালে আইসিইউ বেড রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সব হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের সেবা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। প্রো এ্যাকটিভ এটাকে বাণিজ্য হিসেবে নিয়েছে। যদি আগামী সপ্তাহের মধ্যে তারা করোনা রোগীদের সেবা দেয়া না শুরু করে তাহলে আমি সাংবাদিকদের নিয়ে সেখানে যাবো এবং যা যা করা দরকার করবো।
এ পরিস্থিতিতে উত্তরণের জন্য গত ২২ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শামীম ওসমান ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এক বৈঠকে উপস্থিত হন হাসপাতাল দু’টির কর্মকর্তারা। পরে ওইদিনই এক সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমান ঘোষণা দেন প্রো অ্যাকটিভ ও আল বারাকা নামে বেসরকারী দুটি প্রাইভেট হাসপাতাল করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিবে। ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রো অ্যাকটিভ ও আল বারাকার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারাও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে স্বীকার করেন তারা ওইদিন থেকেই (২২ জুন) করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি নিবেন। কিন্তু ২৯ জুন পর্যন্ত প্রো অ্যাকটিভ হাসপাতালে কোন করোনা আক্রান্ত রোগীকে ভর্তি নেওয়া হয়নি।
প্রো অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের হেড অব অপারেশন ডা. রাশিদুল হুদা বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত আমাদের করোনা চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়নি। গত বৃহস্পতিবার সিভিল সার্জন ও করোনা বিষয়ক ফোকাল পারর্সনকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে আমাদের ২জন ডাক্তার, ২ জন নার্স ও ৩ জন আয়া/ওয়ার্ডবয় আছেন তাদের ট্রেনিং দেওয়ার জন্য। গত রোববার (২৮ জুন) সিভিল সার্জন তাদের ট্রেনিং দিয়েছেন। ট্রেনিং শেষ হলে সিভিল সার্জন যেদিন বলবে সেদিনই কার্যক্রম শুরু হবে।’
তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ আছে ৯টি বেড। যার মধ্যে ভেন্টিলেটর আছে মাত্র ২টিতে। আর আমাদের হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত ২৫জন নবজাতক শিশু আছে। যাদের মধ্যে ৯জন আইসিইউতে ভর্তি। তাদেরই ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হচ্ছে। ফলে করোনা রোগীর জন্য আমরা আইসিইউ সেবা দিতে পারবো না। যদি সরকার থেকে ভেন্টিলেটর দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া বর্তমানে অক্সিজেন সুবিধা সহ ১১ বেডের আইসোলেশন ইউনিট চালু করা হবে। ফলে আইসিইউর আগ মূহূর্ত পর্যন্ত সেবা দেওয়া যাবে।
রাশিদুল হুদা আরো বলেন, ‘আমাদের পিপিই নেই, আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম নেই, ডাক্তার নার্সদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। আর একটি মাত্র ভবন সেখানেই করোনা ইউনিট চালু করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রয়োজন। করোনা ওয়ার্ডের ৭জনের জন্য সহযোগি হিসেবে আরো ৪২জন সহযোগি প্রয়োজন হবে। এসব কিছুর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি সহযোগিতা করার জন্য।
তিনি বলেন, করোনা ইউনিট চালু হলে স্বাভাবিক রোগীদের উপর একটু প্রভাব পড়বে। কেউ তেমন আসতে চাইবে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি দুটি ইউনিট আলাদা ভাবে ব্যবস্থা করার। যাতে করে দুটি সেবা কার্যক্রম যথারীতি চালিয়ে নেওয়া যায়।
করোনা রোগিদের কি বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রাইভেট হাসপাতাল। বিনামূল্যে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে এমনিতেই আমরা ৪ ভাগের এক ভাগ খরচে মানুষের সেবা দিয়ে থাকি। সে অনুপাতে সর্বনিম্ন একটি চার্জ ধরা হবে। তাও নির্ধারণ করবে পরিচালনা কমিটি। এ বিষয়ে পরে জানানো যাবে। যদি বিনা মূল্যে করোনার রোগিরা সেবা না পায় তাহলে সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসনের সামনে কেন ঘোষণা দিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তন তিনি দিতে পারেননি।
নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ সোমবার (২৯ জুন) বিকেলে এই প্রতিনিধিকে বলেন, গত রোববার প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে করোনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে তারা মঙ্গলবার পর্যন্ত কোন করোনা রোগি ভর্তি করেছেন কিনা সেটি তার জানা নেই বা তাকে জানানো হয়নি।

সংবাদ প্রকাশঃ  ৩০২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTV NEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=

Print Friendly, PDF & Email