না’গঞ্জ সদর মডেল থানার ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রেপ্তারী পরোয়ানায় মূল আসামীর নাম টেম্পারিং করে নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার : এসপিকে ব্যবস্থা নিতে আদালতে নির্দেশ

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর কুমিল্লার একটি আদালতে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ঘোষিত রায়ে আলমগীর হোসেন ও জামাল হোসেন নামে দু’জনকে দুই বছর করে সশ্রম কারাদন্ড এবং ২ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। দন্ডিতদের মধ্যে আলমগীর কুমিল্লার দাউদকান্দির মোঃ আলীর এবং জামাল হোসেন নারায়ণগঞ্জের চর সৈয়দপুরের সুরুজ মিয়ার ছেলে। দন্ডিতদের মধ্যে জামাল হোসেন রায় ঘোষণার সময় পলাতক থাকায় তাকে গ্রেপ্তারের জন্য কুমিল্লার পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গ্রেপ্তারী পরোয়ানারা কাগজ প্রেরণ করা হয়। জামালকে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা নারাযণগঞ্জ সদর মডেল থানায় পৌঁছার পর পরোয়ানার কাগজে থাকা ‘জামাল’ এর নাম টেম্পারিং করে ‘কামাল’ লিখে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার করে সদর মডেল থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর কামাল হোসেনকে সাজা ভোগের জন্য কুমিল্লা পাঠানো হলে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। কুমিল্লা গিয়ে জানা যায়, মাদক আইনে সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত ব্যক্তির নাম জামাল হোসেন। তবে কাঁকতালীয় ভাবে জামাল হোসেন ও নিরপরাধ কামাল হোসেন উভয়ের বাবার নামই সুরুজ মিয়া।
তবে কুমিল্লার যে মামদ মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই মামলায় কামাল হোসেন নামে কোন আসামীই নেই। আর ২০০৯ সালের ২১ এপ্রিল ঘটনার সময় কামাল হোসেন প্রবাসে ছিলেন। ৯দিন কারাভোগের পর কামাল হোসেন কুমিল্লার যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। আদালত কামালের হোসেনের জামিনের রায়ে উল্লেখ করেন, কামাল হোসেন নামে কোন আসামী এই মামলায় নেই। কিন্তু জামাল হোসেনের নাম ওভাররাইটিং করে কামাল হোসেন করা হয়েছে। তাই গ্রেপ্তার কামাল হোসেনকে এই মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে কেন জামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার না করে কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারকে বলা হলো।
গতকাল বুধবার দুপুরে প্রেস ক্লাবে ঘটনার শিকার কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে তাকে পরিকল্পিত ভাবে হয়রানির অভিযোগ করেন। কামাল হোসেন বলেন, জামাল হোসেনের স্থলে জামালের নামের অদ্যাক্ষর ‘জ’ এর স্থলে টেম্পারিং করে ‘ক’ লিখে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় সদর মডেল থানা পুলিশ তাকে শুধু তার নাম ও তার বাবার নাম জানতে চেয়েছে। গ্রেপ্তারী পরোয়ানার কোন কাগজ দেখায়নি।
এদিকে কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর তাকে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল মোহসীনের আদালতে সোপর্দ করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ কপিতে উল্লেখ রয়েছে, রাষ্ট্র বনাম জামাল হোসেন গং। কিন্তু একই আদেশের নিচের অংশে আসামী হিসেবে কামাল হোসেনের নাম লেখা রয়েছে।
কামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ২০০৯ সালের ২১ এপ্রিল যখন কুমিল্লার কোতয়ালি থানার অরণ্যপুর এলাকা থেকে ৯৫০ কেজি ভারতীয় গাঁজাসহ আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়, ওই সময় কামাল হোসেন দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবাসী ছিলেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর কুমিল্লা পাঠানো হলে সেখান যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মোঃ আবদুল হান্নানের আদালতে পাসপোর্টের কপি জমা দেওয়া হলে আদালত সেটি আমলে নেন। তাছাড়া ওই মামলায় দু’জন আসামীর কারও নামই কামাল নয়। ফলে বিচারক এ ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করে কামালকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন।
কামাল আরও অভিযোগ করে বলেন, আসন্ন গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি ৫ নম্বর ওযার্ড থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া ওই ইউনিয়ন থেকে আ’লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জসিম উদ্দিনের হয়ে তিনি কাজ করছেন। তিনি গোগনগরের সৈয়দপুরস্থ বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য। তিনি মেম্বার পদে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রতিপক্ষের লোকজন সদর মডেল থানার ওসি শাহ জামানকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে তাকে মূল আসামীর পরিবর্তে গ্রেপ্তারী পরোয়ানার কাগজে নাম টেম্পারিং করে গ্রেপ্তার করিয়ে সামাজিক ভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছে।
কামালের অভিযোগ তাকে গ্রেপ্তারের মাত্র ৫ দিন পূর্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান স্কুলে আসেন এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় এবং স্কুলে বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম উদ্বোধন করতে। সেদিনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কামাল হোসেন। একারণে প্রতিপক্ষের লোকজন বিশেষ করে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার রফিকুল ইসলাম একাজ করিয়েছেন।
অভিযোগ সম্পর্ক জানতে চাইলে গোগনগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ধরণের কোন ঘটনা বা প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। কামাল হোসেনকে নির্বাচনের মাঠে তিনি স্বাগত জানিয়ে বলেন, তার জন্য আমার শুভ কামনা রইলো। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে সদর মডেল থানার ওসি শাহ জামান বলেন, বিষয়টি কেন এমন হয়েছে সেটি তিনি খতিয়ে দেখবেন। তিনি বলেন এমনটা হওয়ার কথা নয়। তারপরেও নথিপত্র পর্যালোচনা করবেন বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। জেলা পুলিশ সুপার মোঃ জায়েদুল আলম বলেন, এ বিষয়ে এখনও তিনি আদালতের কোন চিঠি বা আদেশ পাননি। চিঠি পেলে তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ প্রকাশঃ  ০৩২০২১ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ