নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বখাটে কিশোর গ্যাংয়ের কাছে জিম্মি

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : নারায়ণগঞ্জ শহরের বিনোদন হোক কিংবা সমাগমের কেন্দ্রবিন্দু বলতে বোঝায় চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। শহর ও শহরতলীর যেকোন প্রান্তর থেকে এখানে লোকজন এসে জড়ো হয়। বিশেষ করে শহরের ভেতরে উন্মুক্ত স্থান তেমন একটি না থাকায় এই শহীদ মিনারে সকাল থেকে লোকসমাগম দেখা যায়। বিগত দিনে সাধারণত সংস্কৃতি কর্মীদের আড্ডাস্থল ছিল এই শহীদ মিনার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সংস্কৃতিকর্মীদের স্থান দখল করে নিয়েছে বখাটে কিশোর গ্যাং আর ছিনতাইকারী চক্র। গত কয়েকদিনে শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে বখাটেপনা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা যেমন ঘটেছে তেমনি রোববার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের মধ্যেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া শহীদ মিনার যেন বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই শহীদ মিনারটি মানুষের অবসর সময় কাটানোর জন্য বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে এসব বিনোদন পিপাসুদের অন্তরালে শহীদ মিনারের পরিত্রতার রক্ষা না করে উল্টো পরিবেশ নোংরা করছে। নারায়ণগঞ্জ শহরে বেশ কয়েকটি পার্ক সহ পর্যটন কেন্দ্র থাকলেও চাষাঢ়ার শহীদ মিনার বেশ বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। চাষাঢ়া শহরের প্রধান সড়কের পাশে ছোট একটি জমিতে গড়ে ওঠা এই শহীদ মিনারের আয়তন ছোট হলেও বিনোদনের পরিধি কিন্তু ব্যাপক। নারায়ণগঞ্জ শহরের যুগ যুগ ধরে এই শহীদ মিনারটি বিভিন্ন উৎসবে মুখরিত হয়ে উঠে। এই ঈদের উৎসবেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সারা শহর যখন ফাঁকা হয়ে গেছে তখনো বিনোদন পিপাসু মানুষদের পদচারণায় শহীদ মিনারটি মুখরিত হয়ে উঠে।
এদিকে শহীদ মিনার মানুষের বিনোদনের খোরাক মিটলেও মানুষজন তার পবিত্রতা নষ্ট করছে। শহীদ মিনারের যত্রতত্র জুতো পায়ে উঠে যাচ্ছে। যেকারণে শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে। অথচ শহীদ মিনারে জুতো পায়ে আরোহনের কথা নিষেধ করে ব্যানার টানানো হলেও কারো টনক নড়ছেনা। সবাই যার যার ইচ্ছামত জুতো পায়ে উঠে বসে আছে। এসময় তারা নানা রকম খাবার খেয়ে তার উচ্ছিষ্ট যত্রতত্র ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে।
এমনিতে সারা বছরই এই শহীদ মিনারে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। আর বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের সময় বিনোদন প্রেমিকদের সেই ভিড় বেড়ে যায়। এসময় মানুষের গুঞ্জন আর পদচারণায় পুরো শহীদ মিনার মুখরিত হয়ে উঠে। তবে শহীদ মিনারের পরিবেশটা সবসময়ই আনন্দ উৎসবে পরিপূর্ণ থাকে। তাই শহরের মধ্যে মনোরম পরিবেশ খুঁজতে শহীদ মিনারটি মানুষের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
ওদিকে পূর্বে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক কর্মীদের পদচারণা দেখা গেলেও কয়েক বছর আগে সাংস্কৃতিক কর্মী আরিফ বুলবুলসহ কয়েকজন সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পরে সেখানে সাংস্কৃতিক কর্মীদের পদচারণা তেমন একটা দেখা যায়না। বর্তমানে সেখানে বখাটে, ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাংদের তৎপরতা দেখা যায়। করোনার কারণে এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় স্কুল কলেজ ফাঁকি দেওয়া শিক্ষার্থীদের আনাগোনা তেমন দেখা না পাওয়া গেলেও পূর্বে দিনভর শিক্ষার্থীদের আড্ডা থাকতো শহীদ মিনার জুড়ে।
২০১৯ সালের শুরুতে স্কুল ও কলেজ ফাঁকি দিয়ে আড্ডা এবং প্রকাশ্যে ধূমপান ঠেকাতে নারায়ণগঞ্জে প্রায় প্রতিদিনই পরিচালিত হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া শহীদ মিনার এলাকায় এ অভিযান চলে। এতে করে বেশি আতঙ্কে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। ভ্রাম্যমাণ আদালতে গত দেড় মাসে অর্থদন্ড দিয়েছে ২২ জন। এর মধ্যে বেশির ভাগই বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা দিতে না পারায় অনেক শিক্ষার্থীর হাতকড়া পরানোর ঘটনাও ঘটেছে।
গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া শহীদ মিনারে মায়ের সামনে এক শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত ও ওড়না ধরে টানাটানির অভিযোগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি সৈয়দ রনি আলমসহ তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ওই শিক্ষার্থীর মা বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলার পরপরই রনি আলমের সহযোগী কাননকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান।
ওসি জানান, মামলার আসামিরা হচ্ছে জেলা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি সৈয়দ রনি আলম (২৮), ফতুল্লার পশ্চিম মাসদাইর এলাকার জসুর ছেলে অনিক প্রধান (২২) ও ফতুল্লার হাজীগঞ্জের এমরান হোসেনের ছেলে কানন (২২)।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ডিসেম্বর রাত সোয়া আটটার দিকে মমতাজ বেগম তার মেয়েকে নিয়ে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে যান। এ সময় রনি, অনিক, কাননসহ অজ্ঞাত আরও ২-৩ জন তার মেয়েকে দেখে বাজে মন্তব্য করে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। মা-মেয়ে এর প্রতিবাদ করলে এক পর্যায়ে মেয়ের ওড়না ধরে টানাটানি করে অনিক ও রনি। পরে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে বখাটেরা সটকে পড়ে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর মা মমতাজ বেগম বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্র। চাষাঢ়া শহীদ মিনার ও সংলগ্ন এলাকায় বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকেই আনাগোনা থাকে ছিনতাইকারী চক্রের। প্রায়শই সাধারণ নিরীহ মানুষকে টার্গেট করে মোবাইল ও টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারী চক্র। এছাড়া প্রায়ই কিশোর গ্যাংদের মধ্যেও হাতাহাতি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। রোববার রাতেও চাষাঢ়া শহীদ মিনারে দুইগ্রুপ কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া মারধরের ঘটনা ঘটে। এসময় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পূর্বে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুলিশের একটি টিমকে অবস্থান করতে দেখা যেতো কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শহীদ মিনারে পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়না। আর করোনার কারণে সন্ধ্যার পরে প্রশাসনের তৎপরতাও কমেছে। যে কারণে বখাটে, ছিনতাইকারী চক্র ও কিশোর গ্যাংদের তৎপরতা আরো বেড়েছে বলে মনে করছে সচেতন মহল।

সংবাদ প্রকাশঃ  ১৪১২২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

Print Friendly, PDF & Email