রেলের টিকিট কালোবাজারি চক্রের অন্যতম মূলহোতা আব্দুল হাকিমসহ ৬ জন গ্রেফতার

সিটিভি নিউজ।।  প্রেস বিজ্ঞপ্তি  জানান ====  রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে দেশব্যাপী টিকিট কালোবাজারি চক্রের অন্যতম মূলহোতা আব্দুল হাকিমসহ ০৬ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার এবং তাদের মজুদকৃত ট্রেনের টিকেট জব্দ করেছে র‌্যাব-৩।
র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় কালোবাজারি চক্রের সক্রিয় সদস্যরা কাউন্টার হতে এবং অনলাইনে টিকিট ক্রয় করে অধিক মূল্যে বিক্রয় করে আসছে। ইতোপূর্বে ঈদুল আযহার পূর্ববর্তী সময়ে টিকিট কালোবাজারি চক্রের ০৬ জন এবং ২০ অক্টোবর আরো ০৫ জন সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করেছিল র‌্যাব-৩। সাম্প্রতিক সময়ে এ সংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্য এবং অভিযোগের ভিত্তিতে আবারও এই চক্রের মূলহোতাসহ বেশ কয়েকজন কালোবাজারিদেরকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

এরই ধারাবাহিকতায় ২২ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ বিকাল হতে রাত পর্যন্ত চলমান র‌্যাব-৩ এর দুটি পৃথক অভিযানে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা হতে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ আব্দুল হাকিম(৩৭), পিতা-মৃত শেখ আব্দুস সামাদ, সাং-সাদুল্লার চর,থানা-কিশোরগঞ্জ সদর, জেলা-কিশোরগঞ্জ এবং তার সহযোগী ২। মোঃ জয়নাল আবেদীন(৫৯), পিতা-মৃত,আব্দুল মজিদ মুনসী, সাং-কোয়ারপুর ,থানা-পালং মডেল, জেলা-শরীয়তপুর, ৩। মোঃ শামীম ওরফে স¤্রাট(২৭), পিতা-মোঃ খোকন, সাং-কালোরা, সাং-শনিচর, থানা-কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, জেলা-কুমিল্লা, ৪। মোঃ আব্দুল জলিল (১৯), পিতা-মোঃ ইউনুছ আলী, সাং-বগারচর, থানা-বকসীগঞ্জ, জেলা-জামালপুর, ৫। মোঃ খোকন মিয়া(৫৫), পিতা-মৃত মোখছেদ আলী, সাং-ছোট গাংগাইল, থানা-আখাউড়া, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, এবং ৬। মোঃ উজ্জল ভূইয়া(৩৩), পিতা-মৃত গোলাপ ভূইয়া, সাং-সাচাইল কালনা, থানা-তাড়াইল, জেলা-কিশোরগঞ্জদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের নিকট হতে ২১ টি কালোবাজারি টিকিট, মোবাইল ফোন ০৫ টি, সীমকার্ড ০৩ টি, মানিব্যাগ ০২ টি, আইডিকার্ড ০১ টি এবং টিকিট বিক্রয়ের নগদ ৯,৮১৮/-টাকা উদ্ধার করা হয়।

রাজধানীর কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনসহ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশনে অধিক মুনাফার আশায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের তৎপরতা চালিয়ে আসছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি চক্রটির একজন অন্যতম মূলহোতা মোঃ আব্দুল হাকিম এবং অন্যান্য সদস্যরা মিলে রেলস্টেশনে লাইনে দাড়িয়ে এক একটি এনআইডি ব্যবহার করে টিকিট সংগ্রহ করে। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও মুঠোফোন নাম্বার ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। এরপর আব্দুল হাকিম এর নেতৃত্বে এক একটি ট্রেন ছাড়ার ৩/৪ ঘন্টা আগে থেকে তারা অধিক মূল্যে টিকিট বিক্রির তৎপরতা শুরু করে। ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনাতে থাকে তাদের মজুদকৃত কালোবাজারি টিকিটের দাম তত বাড়তে থাকে। তারা সাধারণত দিগুণ মূল্যে টিকিট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে তারা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। এই চক্রটি মূলত তূর্ণা নিশিথা, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, চট্টলা এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস এবং পারাবত এক্সপ্রেস এই সকল ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে থাকে। এই চক্রটির আরও সদস্য ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে ৫-৭ জন করে সক্রিয় সদস্য রয়েছে যারা তাদের টার্গেটকৃত ট্রেনসমূহের টিকিট কালোবাজারি করে সাধারন যাত্রীদের নিকট চড়াদামে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উক্ত চক্রের মূলহোতা আব্দুল হাকিম নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরিচয় ব্যবহার করে এবং রেলস্টেশনে কর্মরত অসাধু একটি চক্রের যোগসাজসে ২০১৮ সাল থেকে টিকেট কালোবাজারির ব্যবসা শুরু করে। সে মূলত নিজে টিকেট কাটার কাজ না করে তার অধিনস্ত অপরাপর ৪/৫ জন কর্মী দ্বারা বিভিন্ন মাধ্যমে টিকেট সংগ্রহ পূর্বক চড়ামূল্যে বিক্রি করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালেও সে কখনো গ্রেফতার হয়নি। কারণ সে অত্যন্ত সুকৌশলে তার কর্মীদেরদ্বারা দীর্ঘদিন যাবৎ টিকেট চোরাকারবারের ব্যবসাটি চালিয়ে আসছিল। এই সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ চক্রের মূলহোতা হাকিম এর নেতৃত্বে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে সাধারণ যাত্রীদের নিকট হতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। তারা কমলাপুর রেলস্টেশন হতে বিভিন্ন জেলার রেলস্টেশন গুলোতেও তাদের এজেন্টদের সাথে যোগসাজসের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারির কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। রেলস্টেশনে যে পরিমান টিকিট বরাদ্দ থাকে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ বিক্রি হয় অনলাইনে। যার ফলে কাউন্টারে এসে অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যান। আর এই সুযোগটিই গ্রহণ করে টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা। কমলাপুর রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি চক্রটির মূলহোতা আব্দুল হাকিম এবং অন্যান্য সদস্যরা মিলে রেলস্টেশনে লাইনে দাড়িয়ে এক একটি এনআইডি দিয়ে একাধিক টিকিট সংগ্রহ করে। এমনকি অনেক সময় তারা রিক্সাওয়ালা, কুলি, দিনমজুর এদেরকে অল্প টাকার বিনিময়ে লাইনে দাড় করিয়ে তাদের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করে। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। সংগ্রকৃত টিকিট নিয়ে এরা রেলস্টেশনের ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে। এরা রেলস্টেশনে এসে টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের নিকট তাদের কালোবাজারি টিকিট বিক্রির জন্য ঘুরতে থাকে। ট্রেন ছাড়ার ঘন্টা দুয়েক আগে যাত্রী সমাগম শুরু হলে তাদের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। তারা তখন দিগুন মূল্যে টিকিট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে তারা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। এটা তাদের স্বাভাবিক সময়ের কার্যক্রম। কিন্তু ঈদসহ বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে তারা এক একটি টিকিট ৩-৪ গুন বেশি মূল্যে বিক্রয় করে থাকে। তারা ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে ৫০০ টাকার টিকিট সর্বোচ্চ ২০০০ টাকায়ও বিক্রি করেছে বলে জানায়। তারা প্রত্যেকে দীর্ঘদিন যাবৎ এই পেশার মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ এবং যাবতীয় খরচ চালিয়ে আসছে বলে জানায়।
এছাড়াও গ্রেফতারকৃত মূলহোতা হাকিম জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাকিমের ক্লায়েন্ট রয়েছে যাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তারা মানুষের সুযোগ বুঝে চড়ামূল্যে কখনো দিগুন তিনগুন মূল্যে টিকেটগুলো বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। এভাবেই দীর্ঘ ৫ বছর ধরে হাকিম দেশব্যাপী টিকিট কালোবাজারির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরীর মাধ্যমে তার কালোবাজারির ব্যবসা চালিয়ে আসছে।
গ্রেফতারকৃত চক্রের সদস্য খোকন মিয়ার নামে টিকিট কালোবাজারির দায়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মোট ০৫ টি মামলা রয়েছে এবং সে র‌্যাব-৩ কর্তৃক গত ২০ অক্টোবর গ্রেফতার হয়ে ৩২ দিন জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে মুক্তি পেয়ে সে আবারও টিকিট কালোবাজারির কাজে লিপ্ত হয়। গ্রেফতারকৃত অপর আসামী শামীমের নামে মাদক মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে এবং সে বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটে। এ চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়াশি অভিযানে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়ে পরবর্তী সময়ে পুণরায় এই টিকিট কালোবাজারির ব্যাবসার সাথেই যুক্ত হয়।

সংবাদ প্রকাশঃ  ২৩১২২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ