রূপগঞ্জের চনপাড়ায় আবার সংঘর্ষ পুলিশের বিশেষ অভিযানে আটক-১৩

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ক্রাইমজোন হিসাবে আলোচিত চনপাড়া পুনর্বাসনকেন্দ্রে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে আবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাতভর সংঘর্ষের পর সোমবার (১ মে) সকালে চনপাড়ায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমার নেতৃত্বে সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ডিবি ও পুলিশের দুই শতাধিক সদস্য অভিযানে অংশ নেন। এ সময় অন্তত ১৩ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় জানানো হয়নি। অভিযানে মাদক ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু মাদক বেচাকেনার স্থান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) আবির হোসেন এ প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে রোববার (৩০ এপ্রিল) রাত ৯টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চনপাড়া পুনর্বাসনকেন্দ্রের দু’গ্রুপের পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এ সময় অন্তত তিনটি দোকান লুটের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে অন্তত ১২ জনের হতাহতের খবর পাওয়া গেলেও তাঁদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
রোববার রাতে সংঘর্ষের সময় হামলা ও লুটপাট করা একটি দোকান। সোমবার সকালে চনপাড়া বাজার এলাকায়
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, রোববার রাতে চনপাড়ার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. রায়হান ও তাঁর লোকজন ইয়াসমিন আক্তারের সহযোগী মো. মারুফ নামের এক যুবককে মারধর করে। এ ঘটনার পর রায়হানের পক্ষ নিয়ে শমসের আলী ও মো. শাহাবউদ্দিন এবং মারুফের পক্ষ নিয়ে ইয়াসমিন ও জয়নাল আবেদীনের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। মধ্যরাত পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। এ সময় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি দোকানে লুটপাটের আলামত দেখা গেছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে লিমন টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিকস নামের একটি দোকানের শাটার ও ভেতরের আসবাবপত্র ভাঙা দেখা যায়।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, দোকানটি নাজমা বেগমের মায়ের। নাজমা জয়নাল আবেদিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
লুটপাটের শিকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাশেম ফকির বলেন, আমি কবিরাজি কইরা ৫জনের সংসার চালাইতাম। আয়উপার্জন কমে গেছে দেইখা কিছুদিন আগে কিস্তিতে টাকা নিয়া একটা দোকান দিছি। দুই পক্ষের মারামারির সময় আমার সব লুট কইরা নিয়া গেছে।
এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করবেন কি না, জানতে চাইলে বলেন, ‘এইটা তো সাধারণ এলাকা না। এনে আইন আদালত চলে না। কার কাছে যামু, কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করমু?। থানায় গেলে আমি তো আর এলাকায় থাকতে পারমু না।
লুটপাটের শিকার আরেক দোকানমালিক মো. হাবিব জানান, সংঘর্ষের সময় হাবিবা টেলিকম নামে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন রাস্তায় তাঁর দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, একসময় কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান চনপাড়া নিয়ন্ত্রণ করতেন। বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর পর চনপাড়া আলোচনায় এলে বজলুর রহমান র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। গত ৩১ মার্চ কারা তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বজলুরের মৃত্যুর পর চনপাড়ার অপরাধসাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি পক্ষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। বজলুরের একসময়ের সহযোগী জয়নাল আবেদিন, শমসের আলী ও শাহাবউদ্দিন পক্ষগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন। ১১ এপ্রিল শমসের ও শাহাবউদ্দিন বাহিনীর সঙ্গে জয়নাল আবেদিনের অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়।
সোমবার রাতে সংঘর্ষের কারণ জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যাকা-ের সঙ্গে চনপাড়ার নাম আলোচনায় এলে পুনর্বাসনকেন্দ্রের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাদক কারবারি মো. রায়হানকে আটক করা হয়। পরে অন্য একটি মামলায় রায়হানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রায়হানকে গ্রেপ্তারের পর চনপাড়ার অন্য মাদক কারবারিরা রায়হানের বাড়ি লুটপাট করে। পরে ওই এলাকার আরেক মাদক কারবারি ইয়াসমিন আক্তার রায়হানের বাড়ি দখলে নিয়ে তাঁর অনুসারী মো. মারুফকে দিয়ে মাদক ব্যবসা শুরু করেন। রায়হান জামিনে মুক্তি পেলেও এলাকায় ফিরতে পারছিলেন না। ১১ এপ্রিলের সংঘর্ষের পর জয়নাল আবেদিনের অনুসারীরা কোণঠাসা হলে রায়হান এলাকায় ফিরে এসে শমসের ও শাহাবউদ্দিনের সঙ্গে যোগ দেন। রোববার রাতে নিজের বাড়ি দখলে নিতে রায়হান ও তাঁর অনুসারীরা মারুফকে মারধর করেন। এই নিয়েই দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় চনপাড়ায় মাদকবিরোধী অভিযান শেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, অভিযানে বেশ কয়েকটি চিহ্নিত মাদক বিক্রির কেন্দ্র ভেঙে দেওয়া হয়েছে। জয়নাল, শমসের, শাহাবউদ্দিন, রায়হান, ইয়াসমিন, নাজমা, রহিমা, শাওন, শাহ্ আলম নামে চিহ্নিত কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী এসবের নিয়ন্ত্রণ করেন। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা পলাতক, তবে তাঁদের সহযোগী ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন রাতের সংঘর্ষের ঘটনায়ও জড়িত। অন্যরাও মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত। অভিযানে মাদক ও চায়নিজ কুড়াল, রামদা, টেঁটা, সুইচযুক্ত চাকুসহ বেশ কিছু দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

সংবাদ প্রকাশঃ ০১০৫২০২৩ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like>  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ