নামাজের পর মুনাজাত, মিলাদ, কেয়ামকে কেন্দ্র করে হামলা : এক মাস ধরে চিকিৎসাধীন ব্যবসায়ী যুবক

সিটিভি নিউজ।। মানিক   মনোহরগঞ্জ (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে মসজিদকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনায় আহত হয়ে গত এক মাস ধরে শয্যাশায়ী ব্যবসায়ী যুবক শাহাবুদ্দিন। উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত শাহাবুদ্দিন শাকতলা দক্ষিণপাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে। সে ঢাকার দক্ষিণখান থানার গাওয়াইর এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী। সে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় আহত শাহাবুদ্দিনকে বাঁচাতে গিয়ে তার মা আলেয়া বেগমসহ আরো কয়েকজন আহত হন। এ বিষয়ে তার পিতা আবুল কাশেম বাদি হয়ে গত ৩ জুলাই মনোহরগঞ্জ থানায় এবং তার মা আলেয়া বেগম বাদি হয়ে গত ৪ জুলাই কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস আগে শাকতলা দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সাথে ধর্মীয় ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে কমিটির অন্যান্য সদস্য এবং মুসল্লিদের বাকবিতন্ডা হয়। নামাজের পর মুনাজাত, মিলাদ, কেয়ামসহ বিভিন্ন বিষয়াদির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন মসজিদ কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ও তার সমর্থকরা। এ নিয়ে দেলোয়ার হোসেন ও তার সমর্থকদের সাথে অন্যান্য মুসল্লিদের বাকবিতন্ডা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেলোয়ার হোসেনের সমর্থকরা গত ৩ জুলাই শুক্রবার একই গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে শাহাবুদ্দিনের উপর পরিকল্পিত হামলা চালায়। ওইদিন সকালে বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন শাহাবুদ্দিন। তাকে বিদায় জানাতে তার মা আলেয়া বেগম ও ছোট ভাই মোহনও শাকতলা বাজার পর্যন্ত তার সাথে যান। বাজারে পৌঁছে অটোরিক্সায় উঠা মাত্রই একই গ্রামের সাদু মিয়ার ছেলে মনির, শামু মিয়ার ছেলে পলাশ, হেদায়েত উল্লাহর ছেলে আব্দুল কাদের, ফয়েজ মিয়ার ছেলে মিজান, গোলাপ রহমানের ছেলে পারভেজ, কালু মিয়ার ছেলে সাইফুল সহ দেলোয়ার হোসেনের সমর্থক আরো ৯/১০ জন যুবক শাহাবুদ্দিনের উপর হামলা চালায়। তারা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাতুড়ে, রামদা, ষ্টিল পাইপসহ দেশীয় বিভিন্ন ধরণের ধারালো অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে। এতে তার হাত, পা, নাক, মুখ, মাথা ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শাহাবুদ্দিনের বাম হাতের তিনটি আঙ্গুল কেটে যায়। ডান হাতের বাহুতেও মারাত্মক জখম হয়। এসময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার মা আলেয়া বেগম, ভাই মোহনসহ কয়েকজন প্রতিবেশীও গুরুতর আহত হন। হামলার পর শাহাবুদ্দিনের সাথে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল, তার মায়ের গলার স্বর্ণের চেইন লুট এবং শাকতলা বাজারে তার জেঠা জাফর আহমেদের দোকান ভাঙচুর ও লুট করে হামলাকারীরা। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশ।
এ ঘটনার পর ওইদিন বিকেলে আহত শাহাবুদ্দিনের পিতা আবুল কাশেম বাদি হয়ে মনোহরগঞ্জ থানা এবং পরদিন তার মা আলেয়া বেগম বাদি হয়ে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত দেলোয়ার, মনির, মিজানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সম্প্রতি তারা জামিনে এসে মামলা তুলে নিতে শাহাবুদ্দিনের পরিবারকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী আবুল কাশেম বলেন, ‘মসজিদ কমিটির সভাপতি দেলোয়ারের নির্দেশে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সদলবলে আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় মনির। তারা আমার ছেলের সাথে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ও তার মায়ের গলার স্বর্ণের চেইন লুট করে। একই সময় শাকতলা বাজারে আমার ভাইয়ের চা দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। গত এক মাস ধরে আমরা আমার ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছি। তার বাম হাতের তিনটা আঙ্গুল কেটে যাওয়া হাতটা প্রায় অকেজো হয়ে গেছে। বর্তমানে সে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এ ঘটনার পর অভিযুক্ত ৩ জন গ্রেপ্তার হলেও জামিনে এসেও তারা মামলা তুলে নিতে আমাদেরকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। বাকি আসামীরাও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আমাদেরকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধমকি দিচ্ছে বিধায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার পেতে এবং অভিযুক্ত আসামীদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য আমি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’ সম্প্রতি অভিযুক্তরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ ঘটনাকে ভিন্ন ভাবে প্রবাহিত করতে বিভিন্ন ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত মনিরের পিতা সাদু মিয়া বলেন, ‘গত ৩ জুলাই সকালে শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার ঘরে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে আমার স্ত্রীসহ কয়েকজন আহত হয়েছে। পরবর্তীতে তারা নিজেরাই বাজারের কয়েকটি দোকান ভাঙচুরের করেছে এবং আমাদেরকে ফাঁসাতে শাহাবুদ্দিন নিজেই নিজের হাতে কোপ দিয়ে আঙ্গুল কেটে ফেলে। বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আমার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বাদি হয়ে মনোহরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় শাহাবুদ্দিনসহ আরো ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। পক্ষান্তরে নিজেদেরকে বাঁচাতে আমার পরিবারের সদস্যসহ মোট ৯ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করে উল্টো আমাদের নিরীহ লোকজনকে গ্রেফতার করাসহ হয়রানি করছে।’
এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল হালিম বলেন, এ ঘটনায় উভয় পক্ষই থানায় মামলা করেছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার হয়েছে। কয়েকজন আসামি জামিনে এসেছে। মামলাগুলো তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ প্রকাশঃ  ১৩২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ