ভাঙ্গা সড়কে আবারো চলছে খোড়াখুড়ি; যানজটে জনদূর্ভোগ

আগামী একনেক’র বৈঠকে ৭হাজার ৫শত কোটি টাকা ব্যয়ে ফোর লেনে উন্নীত করণের আশ^াস
২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কারকাজ শেষ হতে না হতেই

সিটিভি নিউজ।।   এবিএম আতিকুর রহমান বাশার  সংবাদদাতা ==  ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কারের পাশাপাশি বুড়িচং উপজেলার দেবপুর, দেবীদ্বার সদর ও মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজার এলাকার কিছু অংশ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হতে না হতেই ভেঙ্গে যাওয়া অংশে আবারো চলছে খোঁড়াখুড়ি। ফলে জনদূর্ভোগের অপর নাম-‘মরণফাঁদখ্যাত ‘কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’টিতে নতুনকরে গত ১৮দিন ধরে চলছে যানজট। রাত দিন ২৪ঘন্টা থেমে থেমে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজার থেকে দেবীদ্বার উপজেলার বারেরা পর্যন্ত প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে যানজটে অতিষ্ঠ শত শত যাত্রী ও মাল পরিবহনগুলো। গন্তব্যে পৌঁছতে ভারী লাগেজ বহন করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, রোগী সহ যাত্রীরা গাড়ি ছেড়ে হেটে যেতে দেখা যাচ্ছে।

‘কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’র বুড়িচং উপজেলার দেবপুর এলাকায় ঢালাইকরা ১টি প্যানাল ও দেবীদ্বার থানা গেট থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত ঢালাই কাজ শেষ করার কয়েকদিনের মধ্যে ওই অংশের ৬টি প্যানাল ভেঙ্গে ইট, পাথর সূরকী, সিমেন্ট বালুতে পরিনত ও ছোট বড় গর্তের সৃষ্টিহয়ে রডগুলো ভেসে ইঠেছে। চলমান ভারী যানবাহন যাতায়তকালে গর্তে পড়ার ঝাঁকুনিতে পাশ^বর্তী বহুতল ভবনগুলোও কেঁপে উঠছে। প্রায়ই রাতের অন্ধকারে রডের গুতোয় ভারী যানবাহনের টায়ার ফুটা এবং এক্সেল ভাঙ্গার শব্দে ঘুমন্ত মানুষ জেগে উঠছেন। কিছু কিছু যানবাহন ওই অংশ ভাঙ্গা সড়কের গর্তের মুখমুখী এসে থমকে যাচ্ছে। এতে যানজটও চরম আকার ধারন করছে। গত ২৩অক্টোবর থেকে দেবীদ্বার এলাকার ভাঙ্গা ও ক্ষতিগ্রস্থ ঢালাই করা ৬টি প্যানাল উঠিয়ে আবার নতুন করে কাজ করছে। গত ১৮দিন ৬টি প্যানালের ৫টি প্যানাল উঠানোর ঢালাই শেষ হলেও বাকী ১টি প্যানাল উঠানো হচ্ছে। কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে তাও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শ্রমিক সুপার ভাইজরসহ কেউ বলতে পারছেননা।

সওজ’র সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুন মাসে ২০১৯-২০২০ইং অর্থবছরে ‘কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’র কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনম্যানট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র সরাইল উপজেলার কালামুড়া ব্রীজ পর্যন্ত ৪০কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। উক্ত দরপত্রে ‘হাসান টেকনো বিল্ডার্স’ ও ‘মেসার্স সোহাগ এন্টার প্রাইজ’ ২৩কোটি টাকার প্রাক্কলনব্যায় হিসেবে কাজটিপান। দরপত্রে কাজটি সম্পন্ন করায় ২০১৯সালের ৯ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৮সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯মাস সময়সীমা বেঁধে দেয়াহয়। গত মাসের ৮সেপ্টেম্বর কার্যাদেশের সময়সীমা শেষ হলেও এখনো শেষ হয়নি সড়ক সংস্কারের কাজ।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৪৭ সালে সড়কটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলছে খোড়াখুড়ি-সংস্কারের কাজ। গত ৭৩বছর ধরেই সড়কের খানা খন্দ, দেবে যাওয়া অংশ, ভেঙ্গে যাওয়া ব্রীজ, কালভার্ট সংস্কার কাজ চলে আসছে। তবে বিগত দুই যুগ ধরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও একনেকের সভায় উক্ত সড়কটি টু-লেন, ফোর-লেন, সিক্স-লেনে উন্নীত করার আশ^াস দিলেও এরই মধ্যে কয়েকটি সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরও তা বাস্তবায়নে আলোর মুখ দেখেনি। গত কয়েক বছরে একাধিক সার্ভেয়ার টিম, এলও অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারি সড়ক ও জনপদ বিভাগ জরিপ, লেভেলিং মেসিন, দূরবিন দিয়ে সার্ভে করা, জমি অধিগ্রহণের সাইড নির্ধারন ও পরিকল্পনা, মাপঝোপ সমপন্ন করতে দেখা গেলেও সবই এখন ফাইলবন্দী। কখনো ৪কোটি, কখনো ১০কোটি, আবার কখনো ২৩কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার ও মেরামতের কাজ চললেও একদিনের জন্যও যাত্রী ও মালামাল বহনের পরিবহগুলো স্বস্তিতে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। বছরের অধিকাংশ সময়ই সড়ক ও জনপদ বিভাগ’র কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারগন সড়ক সংস্কারে ব্যস্ততম সময় কাটিয়ে আসছেন। এখনো তা অব্যাহত আছে। কবে তা থেকে নিস্ক্রীতি পাবে তা কেউ জানেননা।

এ সড়কটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বিশেষ করে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের মানুদের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম। চট্টগ্রাম বন্দরসহ বাখরাবাদ, গোপালনগর, শ্রীকাইল, বাঙ্গরা, তিতাস, আখাউড়া, হবিগঞ্জ প্রভৃতি গ্যাস ফিল্ডের সঙ্গে এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তহাট, আখাউড়া স্থল বন্দরের সাথে যোগাযোগে সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ক্রমবর্ধমান ভারী যানবাহনের চাপে সড়কটির বিভিন্ন অংশে খানাখন্দের সৃষ্টি, দেবে যাওয়ার যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী ও বিপদসঙ্কুল হয়ে ওঠেছে। যানজট ও দূর্ঘটনা এড়াতে এবং সড়কটি দ্রুত ফোর-লেইনে উন্নীতকরণে, সড়কের দু’পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি, অবৈধ স্থাপনা, দৈনিক বাজার, সিএনজি ও অটো রিকসা ষ্ট্যান্ড উচ্ছেদ, সড়কের দু’পাশের জমি অধিগ্রহন, পয়নিষ্কাশনে সড়কের পাশে আরসিসি ড্রেন নির্মান ও ড্রেনের উপর স্লাভ দিয়ে ফুটপাত তৈরী, গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে ফুট ওভার ব্রীজ নির্মানেরও দাবী জানান।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাফরুল হায়দার বলেন, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এসময়টা একটু কষ্ট স্বিকার করতে হবে। যানজটের বিষয়টি একা সওজকে দায়ি করলে হবেনা, ফুটপাত দখল এবং শত শত সিএনজি, অটোরিক্সার চাপটি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক এবং স্থানীয় প্রশাসনেরও দায়িত্ব আছে। এসড়কটির এমনিতে ফাউন্ডেশন নেই, এক সময়ের পায়ে চলা পথ, পরবর্তিতে গরুর গাড়ি চলায় জমির মাটি দিয়ে তৈরী সড়ক সংস্কারের পর স্থায়ীত্ব থাকেনা। এছাড়া ২৪ঘন্টাই ভারি যানবাহন চলাচলে ব্যস্ত থাকছে সড়কটি। তিনি বলেন, যানজট নিরসন এবং অবাধে যানবাহন চলাচলে ফোরলেনের বিকল্প নেই। খুব শীঘ্রই সড়কটি ফোরলেনে উন্নীত করার চিন্তা করতে সরকার। পুরাতন সড়কের জন্য আর কোন বরাদ্ধও থাকছেনা। গত একনেক’র বৈঠকে ৭হাজার ৫শত কোটি টাকা ব্যয়ে ফোরলেন সড়ক নির্মানের প্রস্তাবনা উত্থাপিত হয়। ওই প্রস্তাব ঋণ চুক্তির শর্তারোপে রাজনৈতিক সমোঝোতার টানপোড়নে আটকে গেছে। আগামী একনেক’র সভায় সড়ক উন্নয়নে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ঋণচুক্তির শর্ত সিথিল হলে ৬মাসের মধ্যেই ফোরলেনে সড়ক উন্নয়নের কার্যক্রম শুরু হবে।

এবিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগ কুমিল্লা’র নির্বাহী প্রকৌশলী ড.মোহাম্মদ আহাদউল্লাহ বলেন, অনেক আগেই সড়ক সংস্কার কাজ শেষ হয়েগেছে। এখন যে কাজ করা হচ্ছে তা ডিপার্টম্যান্টাল মেইন্টেনেন্টস করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ১৯৪৭ সালে সড়কটি চালু হওয়ার পর, দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে পরিচিতিই নয়, ন্যাশনাল হাইওয়ে’র দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছে। ঢালাইকৃত সড়কের অংশটি কমপক্ষে ২১-২৮দিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকলে সড়কটি দির্ঘদিনের স্থায়িত্ব পেত। এসড়কের কাছাকাছি বিকল্প সড়ক না থাকায়, সংস্কারে পরপরই যানবাহন চলাচল শুরু করে। তাই সড়কের ষ্ট্রেনথ গেইন করতে পারছেনা।

সংবাদ প্রকাশঃ  ১০১১২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ