বনানীর রেইন ট্রিতে ধর্ষণ মামলা || সাফাতসহ সবাই খালাস

ফাইল ছবি
সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ।।

বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ জনকেই খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার এ আদেশ দেন।

এ মামলা থেকে খালাস পেলেন-সাফাতের দুই বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম ও সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়ি চালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী।

এদিন দুপুর ১টা ১০ মিনিটে বিচারক চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় পাঠ শুরু করেন। ২টা ৫৩ মিনিটে রায় ঘোষণা শেষ করেন।

এতে বিচারক মামলার এজাহার, চার্জশিট, সাক্ষ্য, জেরা, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ যাবতীয় বিষয় তুলে ধরেন। তদন্ত কর্মকর্তা জেনে-শুনে এমন মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়ায় বিস্ময়ও প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনাল।

পুলিশ যাতে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের মামলা না নেয় ট্রাইব্যুনাল সেই নির্দেশনাও দেন। বিচারক বলেন, মামলায় যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

আগে থেকেই ভিকটিমরা ফিজিক্যাল রিলেশনে অভ্যস্ত ছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। তারা অন্যদের সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশনে যান। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কাজেই আসামিদের খালাস দেওয়া হলো।

ধর্ষণ নয়, সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক : রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, দুই ভিকটিম স্বেচ্ছায় রেইন ট্রি হোটেলে যায়। সেখানে নিজেদের ইচ্ছায় তারা সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন। তাদেরকে ভয়ভীতি বা মারধর করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করা হয়নি। স্বেচ্ছায় তারা আসামিদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। বিচারক বলেন, ঘটনার ৩৮ দিন পর মামলা করা হয়। ৩৯ দিন পর হয় মেডিক্যাল টেস্ট। ভিকটিমদের পোশাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। মেডিক্যাল রিপোর্টেও ধর্ষণ প্রমাণিত হয়নি। ভিকটিমরা স্বেচ্ছায় সেখানে গিয়ে ইচ্ছে করে আসামিদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। বিচারক বলেন, এ মামলায় সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ ও বিল্লাল হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এদের মধ্যে সাদমান ও বিল্লাল ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে তা উঠে আসেনি। আর সাফাত বলেছে উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে তারা শারীরিকভাবে মিলিত হয়। বিষয়টি ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে না, তা প্রমাণিত হয়নি।

অহেতুক পুলিশ আদালতের সময় নষ্ট করেছে : ভিকটিমরা ঘটনার ৩৮ দিন পর সাফাত আহমেদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার প্ররোচনায় মামলা করেন। তারা মামলা করতে গিয়ে দেখেন সেখানে পিয়াসা আগে থেকেই উপস্থিত, যা সন্দেহ সৃষ্টি করে।

এছাড়া ধর্ষণের উপাদান না থাকার পরও পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে অহেতুক ট্রায়ালে পাঠায়। এর বিচারকাজ এ আদালতে চলেছে ৯৩ কার্যদিবস। আজ (বৃহস্পতিবার) ৯৪তম কার্যদিবস। পুলিশ বুঝে-শুনে এ মামলায় চার্জশিট দিয়ে আদালতের সময় নষ্ট করেছে।

কখন-কোথায়-কীভাবে ধর্ষণ সাক্ষ্যতে বলেননি বাদী : রায় পাঠের শুরুতে বিচারক বলেন, আমি একজন বিচারক। সবকিছু আমাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখতে হয়েছে।

এজাহার, চার্জশিট, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হয়েছে। নরমাল মামলায় এত কিছু বলতে হয় না। আপনারা (আইনজীবীরা) এ মামলাকে বলেন আলোচিত মামলা। আমি এটা মনে করি না। আমার কাছে সব মামলাই সমান। এ মামলায় ৪০ সাক্ষীর মধ্যে ২২ জন সাক্ষ্য দেন। ১১ সাক্ষী রেইন ট্রি হোটেলের কর্মচারী।

তারা কেউ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানত না। পুলিশের মাধ্যমে তারা ঘটনা জানে। বিচারক বলেন, মামলার এজাহারে বাদী সাফাতের স্ত্রী পিয়াসাকে খালাতো বোন হিসাবে পরিচয় দেন। পরবর্তীতে তা মিথ্যা বলে প্রমাণ হয়।

মামলার বাদীর সাক্ষ্য থেকে দেখা যায়, কখন, কোথায়, কীভাবে, কোন রুমে তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে-সে সম্পর্কে তারা কিছুই বলেননি। বিচারক আরও বলেন, ধর্ষণের শিকার হলে ভিকটিমদের কাজ ছিল থানায় যাওয়া।

তারা তা না করে আগেই তাদের বন্ধু শাহরিয়ার আহমেদ এবং স্নেহার সঙ্গে দেখা করেন। তারা বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্টে আড্ডা দেন, ড্রিংক করেন। স্বেচ্ছায় রেইন ট্রি হোটেলে যান। এমনকি হোটেলের কেউ বলেননি এমন ঘটনা ঘটেছে।

তারা বলেছেন তাদের চার জনকে মারধর করা হয়েছে। চিৎকার করে সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। চারজন যদি একসঙ্গে চিৎকার করে তাহলে তা তো এক কিলোমিটার দূর থেকে শুনতে পাওয়ার কথা ছিল।

নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় : স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়ে বিচারক বলেন, রিমান্ড শেষে সাফাত ও নাঈম আশরাফ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরবর্তীতে তারা জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। সেখানে কারণ হিসাবে বলেন, নির্যাতনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। স্বীকার না করলে ক্রসফায়ার দিতে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। অমানবিক নির্যাতন করে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে।

রায় শুনে উল্লাস : এদিন রায় ঘোষণা উপলক্ষ্যে পাঁচ জনকেই কারাগার থেকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ১১টা ২০ মিনিটের দিকে আদালতের হাজতখানা থেকে তাদের তোলা হয় ট্রাইব্যুনালে। সব আসামি খালাসের রায় শুনেই তারা উল্লাস করেন। রায়ে শেষে নিয়ে যাওয়ার সময় সাফাত ও নাঈম আশরাফ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নির্দোষ ছিলাম। পুরোটাই নাটক। আদালতের মাধ্যমে সত্যের জয় হয়েছে।

রায়ে সংক্ষুব্ধ রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদীপক্ষের আইনজীবী : খালাসের এ রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদীপক্ষের আইনজীবী। বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ভিকটিমের মা রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আমাকে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। রায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, মামলাটি মিথ্যা নয়। সঠিক তদন্ত না হওয়ায় আজ এমন রায় হলো। এ কারণে আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ বলেন, অভিযোগ প্রমাণে আমাদের কোনো গাফিলতি ছিল না। তারপরও আদালত আসামিদের খালাসের আদেশ দিয়েছেন। এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতনদের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

সংবাদ প্রকাশঃ ১২-১১-২০২১ খ্রীষ্টাব্দ (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like See More =আরো বিস্তারিত জানতে= লিংকে ক্লিক করুন=

Print Friendly, PDF & Email