প্রসঙ্গঃ মান সম্মত শিক্ষা ভাবনায় গ্রামের শিক্ষার্থী এবং তাদের ক্ষেত্রে করণীয়==

মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
প্রধান শিক্ষক, বাকসার উচ্চ বিদ্যালয়, দেবিদ্বার, কুমিল্লা।

সিটিভি নিউজ।।      ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে সামিল হতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান প্রজন্মকে একটি উন্নত রাষ্ট্রের উপযুক্ত নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন মান সম্মত শিক্ষা। মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে যে সকল উপাদান প্রয়োজন সে গুলো হলো আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম, পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্য ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, প্রয়োজনীয় শিক্ষাদান সামগ্রী ও ভৌত অবকাঠামো, যথার্থ শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি, উপযুক্ত মূল্যায়ণ পদ্ধতি এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের মধ্যকার সহযোগিতার ক্ষেত্র ইত্যাদি। বিগত ২৬ বছর গ্রামের প্রত্যন্ত ৪টি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে আন্তরিকতার সাথে শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা আলোকে বলতে পারি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল উপাদানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলেও মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক কে একযোগে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালনের একান্ত প্রয়োজন কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের দেশে ৭০% এর বেশি শিক্ষার্থী গ্রামে বাস করায় তারা শহরের শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষার পরিবেশ, আর্থ সামাজিক অবস্থাসহ শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ে সুবিধা বঞ্চিত। শহরের শিক্ষার্থীদের তুলনায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা যে সকল বিষয়ে সুবিধা বঞ্চিত তা তুলে ধরা হলোঃ
*শহরের শিক্ষার্থীর অভিভাবক উচ্চ শিক্ষিত। গ্রামের শিক্ষার্থীর অভিভাবক শিক্ষিত ৫% নামমাত্র শিক্ষিত(১৫%) অশিক্ষিত(৮০%)
* শহরের শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পেশা চাকুরী, ব্যবসায়। গ্রামের শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পেশা ক্ষুদ্র ব্যবসা, কৃষিকাজ, রিক্সা এবং সিএনজি চালনা, মৎসজীবি, বেকার ইত্যাদি।
* শহরের শিক্ষার্থীর অভিভাবকের আর্থিক অবস্থা উচ্চবিত্ত/ মধ্যবিত্ত। গ্রামের শিক্ষার্থীর অভিভাবকের আর্থিক অবস্থা এলাকা ভেদে (১৫-২৫)% মধ্যবিত্ত বাকীরা নিন্মবিত্ত।
* শহরের শিক্ষার্থীরা সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে । গ্রামের শিক্ষার্থীরা সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে পায় না।
* শহরের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে সময়ের বাইরে প্রাইভেট কিংবা কোচিং কিংবা হোম টিউটরের সংস্পশে দৈনিক ৪-৫ ঘন্টা থাকে। দিনের বাকিটা সময় শিক্ষিত পিতা/ মাতার নিয়ন্ত্রণে থাকে। গ্রামের শিক্ষার্থীদের (২০%-২৫%) প্রতিষ্ঠানে সময়ের বাইরে প্রাইভেট কিংবা কোচিং এ শিক্ষকের সংস্পশে দৈনিক ১/২ ঘন্টা থাকতে পারে। দিনের বাকিটা সময় নিয়ন্ত্রণহীন থাকে।
* শহরের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য পৃথক একটি সুসজ্জিত কক্ষ থাকে এবং তারা পর্যাপ্ত পরিমান শিক্ষোপকরণ পায়। গ্রামের ৮০% শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য পৃথক কক্ষ নাই এবং তারা প্রয়োজনীয় পরিমান শিক্ষোপকরণ পায় না।
* শহরের শিক্ষার্থীদের সংসারের কাজ করতে হয় না। গ্রামের শিক্ষার্থীদের সংসারের কাজ করতে হয়।
* শহরের শিক্ষার্থীর শিক্ষিত অভিভাবকের কল্যাণে রুটিন মাফিক রাত (১২-১) টা পর্যন্ত লেখাপড়া ও অন্যান্য কার্যাদি সম্পন্ন করে এবং সকালে ঘুম জেগে পড়ার টেবিলে বসে কিংবা প্রাইভেট/ কোচিং এ যায়। সারা দিনের পরিশ্রমের কারণে গ্রামের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ রাত (৮-৯) টায় ঘুমিয়ে পড়ে ফলে নিয়ন্ত্রনহীন শিক্ষার্থীরা ঘুমিয়ে যায় এবং সকালে ঘুম জেগে পড়ার বাজারে কিংবা সংসারের কাজ করে।
প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসাবে শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নিয়মিত হোম ভিজিট, নাইট ভিজিট, অভিভাবক সমাবেশ, মা সমাবেশ করার মাধ্যমে গ্রামের শিক্ষার্থীদের উপরোক্ত সমস্যা সমূহ শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে এসএসসি ২০১৯ এবং এসএসসি ২০০০ পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের পর ৩ মাস ছাত্রীদের সকাল (৬-৯)টা এবং ছাত্রদের সন্ধ্যা (৭-১০)টা বিশেষ কেয়ার এর ব্যবস্থা করায় ফলাফল উন্নয়ন সম্ভব হয়। কোভিড-১৯ এর কারণে উক্ত কেয়ার ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়েছে।
গ্রামের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে করণীয়ঃ মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে গ্রামের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থী নিয়ন্ত্রনের সময় বৃদ্ধি করতে হবে এবং কীভাবে করা যেতে পারে তার প্রস্তাবনাসমূহঃ
১। বিদ্যালয়ের সময় সকাল ৭টা- বিকাল ৫টা করা।
২। সময় বৃদ্ধি করার কারণে প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ প্রদান।
৩। গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা অবৈতনিক করা।
৪। মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করা।
৫।পরীক্ষার বিষয় কমিয়ে আনা এবং ধারাবাহিক মূল্যায়ণের প্রতি গুরত্ব দেয়া।
৬। উপবৃত্তির পরিবর্তে সকল শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষোপকরণের ব্যবস্থা করা।
৭। শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৮। শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা।

সংবাদ প্রকাশঃ  ০৮-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ