পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে কালীগঞ্জের ফুল সারাদেশে

সিটিভি নিউজ।।     মানিক ঘোষ,কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) ========
আজ পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হবে হচ্ছে। দিনটিতে তরুণ-তরুনীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ ফুল দিয়ে প্রিয়জনকে বরন করবেন। তাই সারাদেশে আজ ফুলের ছড়াছড়ি। বর্তমানে এ এলাকায় দেশী বিদেশী জাতের ভিন্ন ভিন্ন রঙের লিলিয়াম, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ, চন্দ্র মল্লিকা, ভুট্রাফুল, গাঁদাসহ হরেক রকম মিলে প্রায় ২০ হেক্টোর জমিতে ফুলচাষ করা হয়েছে। যা সারাদেশের ফুলের চাহিদা মেটাতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে থাকে।

আজকের ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরনের ফুল বাজারজাতকরনের প্রস্ততি দেখতে গত শনিবার ১২ ফেব্রুয়ারী ফুল এলাকা খ্যাত কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে গেলে দেখা যায়, সারা অঞ্চলের মাঠ যেন নানা রঙের ফুলে নববধুর মত সেজে আছে। যা দেখে চোখ জুড়িয়ে মন ভরিয়ে দিচ্ছে। এ অপরুপ সৌন্দর্য্য দেখতে দর্শনার্থীরাও ভিড় করছেন এ অঞ্চলের মাঠে মাঠে। যতদুর নজর যাচ্ছে শুধু মনে হচ্ছে ফুলের পর ফুলক্ষেত। তবে বিদেশী জাতের নানা রঙের ফুলে যেন দেশী জাতের ফুলকে জাপটে ধরেছে। যে ফুল আজকের উৎসবের বাজার ধরতে ফুলচাষী সকলেই মহাব্যস্ত। গ্রামের অস্বচ্ছল পরিবারের মেয়েরা ফুল কন্যা হিসেবে মজুরীর ভিত্তিতে ক্ষেত থেকে ফুল তুলে সহজ বহনযোগ্য করতে মালা বা ঝোঁপা তৈরী করছেন। বেলা গড়ানোর সাথে সাথে কালীগঞ্জ শহরের মেইন বাসস্ট্যান্ডে আসলে দেখা যায় শত শত ফুলচাষী ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন পরিবহন বোঝাই ফুল নিয়ে দুরপাল্লার গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। আবার কিছু কিছু দুরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের ছাদে ফুলের বড় বড় ঢোপ সাজানো হচ্ছে। এক কথায় নানা রঙের ফুলে ফুলে ভরে গেছে শহরের মেইন বাস টার্মিনাল।
সারাদেশের আড়তগুলোতে ফুল পাঠাতে আসা একাধিক ফুলচাষী জানান,সারা বছরই তারা ফুল বিক্রি করে থাকেন। তবে প্রতিবছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, বসন্তবরণ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিশ্ব ভালবাসা দিবসসহ ধর্মীয় বিভিন্ন দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারী মাসের জন্য তাদের উৎপাদিত ফুল বাজারজাতকরণে বাড়তি প্রস্ততি নিতে হয়।

উপজেলার ফুলচাষী ও পাইকারী ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান জানান, ফুল একটি সৌখিন ও লাভজনক চাষ। দেশের ফুলের চাহিদার মেটাতে সারাদেশের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চালের জেলা যশোহর ও পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলা প্রায় ২ যুগ ধরে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জাতীয় উৎসবে এ এলাকায় উৎপাদিত ফুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আজকের বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ পালন করছে সারাদেশ। এ দিনটি ফুল ছাড়া একেবারে চলেই না।
উপজেলার বড়ঘিঘাটি গ্রামের ফুল কন্যা আয়েশা বেগম জানান, তিনি অস্বচ্ছল পরিবারের একজন সদস্য। সারাবছর ফুলচাষীদের ক্ষেত থেকে ফুল তুলে মালা ও ঝোঁপা তৈরীর কাজ করে প্রতিদিন আড়াই’শ থেকে ৩’শ টাকা আয় করেন। যা দিয়ে পরিবারের ভরন পোষন ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগান। তিনি আরও বলেন,তার মত অস্বচ্ছল পরিবারের মেয়েরা ফুলকন্যা হিসেবে ক্ষেত থেকে ফুল তোলা ও ঝোঁপা তৈরীর জন্য সারাবছর কাজ করে থাকেন। তবে ফেব্রুয়ারী মাস আসলে কাজের চাপে তাদের আর খাওয়া ঘুম থাকে না। এ সময়ে তাদের রোজগারও বেড়ে যায়।
ফুলচাষী শাহাদত হোসেন জানান, তিনি কিশোর বয়সে পরের ক্ষেতের কামলা ছিলেন। পরে এলাকায় ফুলচাষ শুরু হলে শুরু করি ফুলের খুচরা ব্যবসা। সেখান থেকে শুরু হয়ে এখনও চলছি ফুলের সাথে। আর্থিক অনাটনের কারনে ফুলচাষী হওয়াটা নিজের জন্য ছিল স্বপ্নের মত। ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী থেকে আমি আজ নিজের ফুলক্ষেতের মালিক হতে পেরেছি। কয়েক বিঘা জমি কিনেছি। লিজ নিয়ে ফুলচাষ করছি কয়েক বিঘা। সবই হয়েছে ফুলের কারনে। তিনি বলেন প্রায় ১৮ বছর ফুলের ব্যবসার পাশাপাশি এখন চাষও করি বিগত এক যুগের মধ্যে এ বছরই ফুলের দাম সর্বোচ্চ। কেননা প্রতি ঝোঁপা গাঁদা বিক্রি হয় সাধারনত ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায় সেখানে এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫’শ থেকে সাড়ে ৬’শ টাকায়। প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয় ১২ থেকে ১৫ টাকায় কিন্ত এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়, প্রতিটি জারবেরা বিক্রি হয় ৫ থেকে ৭ টাকায় কিন্ত এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২২ টাকায়। তিনি বলেন প্রায় দেড় যুগের ফুল কারবারের অভিজ্ঞতায় এবছর সব ধরনের দাম বেশি। ফলে এটা ফুলের বাজারে বেশি দামের রেকর্ড।
মহিদুল ইসলাম জানান, গত ২ বছর ফুলের চাষ ছিল সবচেয়ে লোকসানের। মহামারি করোনার কারনে দেশের ফুলের বাজারে যেমন ধস নেমেছিল। আবার এ বছরের অসময়ের বর্ষায়ও সারাদেশের ফুলের বেশ ক্ষতি হয়েছে। কিন্ত এ অঞ্চলের মাঠ উচু হওয়ায় তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। নিচু জমিগুলোর ফুলের যতটুকু ক্ষতি হয়েছিল তা বর্তমান চড়া দামে বিক্রি হওয়ায় ক্ষতি কাাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে। শুধু তাই নয় সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছরের ফেব্রুয়ারী মাসেই ফুলচাষীরা কয়েক বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

ফুলচাষী আনিসুর রহমান জানান, সারাদেশে যত ফুল উৎপাদন হয় তারমধ্যে যশোরের গদখালির পরেই কালীগঞ্জের অবস্থান। তিনি বলেন, দেশের অন্য এলাকা বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ বেশি হলেও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ গাঁদাফুল চাষে সেরা। সেই গাঁদাতে এবছর দামের বাজার দখল করেছে। অতীতে কোনদিন এতা বেশি দামে ফুল বিক্রি হয়নি। ফলে বলাই যায়, এ বছরের বিশ^ ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ তাদের হাসিমুখ উপহার দিয়েছে।
স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ী প্রদীপ বিশ^াস জানান, এ এলাকা থেকে আজকের বাজার ধরতে গত ৩ -৪ দিন আগে থেকে ফুল কিনে চট্রগ্রাম ও রাজধানীতে পাঠিয়েছি। ফুলের দাম প্রতি দিনই বাড়ছে। তারপরও বসন্তবরন ও বিশ^ভালোবাসা দিবস একই দিনে হওয়ায় ফুলের দামে বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে। তিনি বলেন, জীবন কাটিয়ে দিলাম ফুলের ব্যবসা করে জীবনে লোকসানও হয়েছে অনেক। তবে এ বছরে অতীতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছি। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে মানুষ আজ ভালোবাসা দিয়েই বরন করছে ঋতুরাজ বসন্তকে। আবার কয়েক দিন পরেই জাতীয়ভাবে পালিত হবে আরেক অনুষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সে দিনও সারাদেশে থাকবে ফুলের ছড়াছড়ি। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী মাসেই পালিত হয় ফুল নির্ভর তিনটি বড় উৎসব। ফলে এ মাসের বাজার ধরতে ফুলচাষীদের ব্যস্ততা থাকে বহুগুন বেশি।

একাধিক ফুলচাষী জানান, আজকের বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে সারাদেশের ফুলের চাহিদা মেটাতে তারা গত বেশ কয়েকদিন কাটিয়েছেন মহা ব্যস্ততার মাঝে। এ অঞ্চলের কৃষকেরা কয়েকদিন আগেই তাদের উৎপাদিত ফুল বড় বড় গাড়ি ভরে ফুল পাঠিয়েছেন ঢাকার শাহাবাগ, আগারগাঁও, চট্রগ্রামের চেরাগী পাহাড় বাজার, ফেনি, দিনাজপুর, রংপুর, কুমিল্লা, নওগাসহ দেশের বড় বড় শহরের পাইকারী ফুলের বাজারে। আজকের দিনে এ ফুল কিনবেন ফুলের জন্য মুখিয়ে থাকা সারাদেশের তরুন তরুনীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

সংবাদ প্রকাশঃ  ১৪-০২-২০২২ইং । (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ