না’গঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে শামীম ওসমানের বাজিমাত, চন্দন শীল পেলেন মনোনয়ন

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুগের দীর্ঘ বিরোধ এখন তুঙ্গে। শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের বাজিমাত হলো। তার তদবিরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামীলীগের সহসভাপতি চন্দন শীল। চন্দনশীল শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট বন্ধু এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য। এ নিয়ে নগরীর দ্বিধাবিভক্ত দক্ষিনাঞ্চলে মেয়র আইভী গ্রুপ) শোকের নিরবতা নেমে আসলেও উত্তরাঞ্চলে (শামীম ওসমান গ্রুপ) উচ্ছসিত দলীয় নেতাকর্মীরা। চন্দনশীল ২০০১ সালের ১৬ জুন চাষাড়া আওয়ামীলীগ অফিসে বোমা হামলায় দুই পা হারিয়েছেন। কিন্তু রাজনীতির থেকে পিছু হটেননি।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ড নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চন্দন শীলের নাম ঘোষণা করেন। যদিও দলীয় মনোনয়ন লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন, জাতীয় শ্রমিকলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, সহসভাপতি আরজু রহমান ভুইয়া, মিজানুর রহমান বাচ্চু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের স্পেশাল পিপি রাকিব উদ্দিন।
আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে শামীম ওসমান অপরিহার্য এটা আরেকবার প্রমানিত হলো চন্দনশীলের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার মধ্য দিয়ে। কারণ গোয়েন্দাদের তথ্য রয়েছে, অনেক নেতা ওয়ানম্যান শো হিসেবে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেন। এবং শামীম ওসমানের বিরদ্ধে চুঙ্গা ফুঁকিয়ে মিডিয়া বন্ধব হয়েছেন। তাদের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক ভীত মজবুত না হলেও বিভাজন চোখে লাগার মতো। আর শামীম ওসমান হ্যামিলিয়নের বাশিওয়ালার মতো নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে আওয়ামীলীগকে উজ্জীবিত করে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে।
সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জে প্রভাবশালী একডজন নেতা ছিলেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের তদবিরে। আর শামীম ওসমান একাই একশ। যেমন, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) এমপি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, জাতীয় শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা কাউছার আহমেদ পলাশ, আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আব্দুল কাদির, আরজু রহমান ভুইয়াসহ বিশাল একটি অংশ নানাভাবে তদবির চালিয়েছেন আনোয়ার হোসেনের পক্ষে। কিন্তু দিন শেষে গুরু ধরা খেলেন শিষ্যের কাছে। যদিও ২০১৬ সালে আনোয়ার হোসেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পেছনে মুখ্য ভুমিকা রেখেছিলেন শিষ্য এমপি শামীম ওসমান ও তার বড় ভাই ব্যবসায়ী নেতা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান। কিন্তু গুরু আনোয়ার হোসেন জেলা পরিষদের চেয়ারে বসার পরই পাল্টে যেতে থাকেন। রীতিমত ইউটার্ণ নেন তিনি। বিষদাগার করেন শামীম ওসমানকে নিয়ে। যা দলীয় নেতাকর্মীরা ভালোভাবে নেননি। তারা আনোয়ার হোসেনের ভুমিকাকে বেঈমানী হিসেবে দেখতে শুরু করেন।
ওদিকে চেয়ার টিকিয়ে রাখতে নতুন করে নাসিক মেয়র আইভীর সঙ্গে হাত মিলান আনোয়ার হোসেন। অথচ ২০১৪ সালে আইভীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে, বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে বিষদাগার করেন আনোয়ার হোসেন। ফলে আনোয়ার হোসেনে ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের কাছে। এদিকে আনোয়ার হোসেনকে জেলা পরিষদের চেয়ারে বসাতে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে চাপা ক্ষোভের শিকার হয়েছিলেন শামীম ওসমান। তারা বার বার বলতে চেয়েছিলেন, আনোয়ার হোসেনকে জেলা পরিষদে সাপোর্ট দেয়া ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান সেদিকে কান না দিয়ে মন প্রাণ উজার করে আনোয়ার হোসেনে পক্ষে মাঠে নামেন। সেই আনোয়ার হোসেন চেলা পরিষদের দায়িত্ব নিয়ে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছেন শামীম ওসমানের। আর দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চন্দনশীলকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে শামীম ওসমানের নেতৃত্বকে আরেকধাপ এগিয়ে দিয়েছেন, এমনটাই মনে করছেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
প্রসঙ্গত: তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর। ১৮ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন পত্র বাছাই। ২৫ সেপ্টম্বর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়। ভোট গ্রহণ ১৭ অক্টোবর।

সংবাদ প্রকাশঃ  ১১-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email