সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র মানা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। তাদের মতে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শোকজ, কার্যকরী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অনুমোদনসহ কয়েকটি ধাপ পেরোনোর পর অব্যাহতি করতে হতো। কিন্তু সেসব না মেনে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক তাদের একক সিদ্ধান্তে এমনটা করতে পারেন না বলেও মত তাদের।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দলীয় প্যাডে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলের স্বাক্ষরিত অব্যাহতিপত্রে বলা হয়েছ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতা বিরোধী দল হিসেবে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে বক্তব্য রাখার অপরাধে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে একক সিদ্ধান্তে কাউকে বরখাস্ত করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর। তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এককভাবে কাউকে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার নাই। কোনো সাধারণ সদস্যকেও এককভাবে তারা অব্যাহতি দিতে পারেন না। কোনো সমস্যা হলে তাকে শোকজ করতে পারে, জবাব চাইতে পারে। কাউকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দিতে হলে সেন্ট্রালে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে যেতে হবে। ওনারা অব্যাহতি দেওয়ার কেউ না। তাদের এই ক্ষমতা দেওয়া হয় নাই। আওয়ামী লীগের সুনির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র আছে। কাউকে অব্যাহতি দিতে হলে গঠনতন্ত্র মানতে হবে। নারায়ণগঞ্জে বিভেদ ও বিভক্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন ওনারা দুইজন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনও বললেন একই কথা। তিনি বলেন, কারোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ থাকলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। আর তাছাড়া ইতিমধ্যে জাহাঙ্গীর আলম তার বক্তৃতার জন্য ক্ষমাও চেয়েছে। কোনো ধরনের সভা না ডেকে প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি মিলে এই সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। দল তো আর তাদের দুইজনের না।
জাহাঙ্গীর আলম ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা উল্লেখ করে আনোয়ার হোসেন বলেন, জাহাঙ্গীর আলম ছাত্রজীবন থেকেই জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন শিকার করে এই পর্যায়ে এসেছে। দলের মধ্যে তার অনেক ত্যাগ আছে। জিয়াউর রহমান, বিএনপির আমলে সে জেল খেটেছে। আন্দোলন সংগ্রাম করছে। সে তো আর ভেসে আসা নেতা না। আসলে জাতীয় পার্টির এমপির নামফলক ভাঙার ঘটনাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার জন্যই এই প্রচেষ্টা।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল কাদির বলেন, আমি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, অথচ আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। দলের কাউকে অব্যাহতি দিতে হলে কমিটির সকল সদস্যকে অবহিত করে সভা ডাকতে হবে। সভার সিদ্ধান্ত থেকে কেন্দ্রে সুপারিশ হবে। কিন্তু এরকম কিছু তো হয়নি। সুতরাং এভাবে তো কাউকে অব্যাহতি দেওয়া যায় না। তাও আবার দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের কাউকে। সাধারণ সম্পাদকের পরেই যার অবস্থান।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের দলের প্রতি ত্যাগ ও অবদান সম্পর্কে স্বয়ং শেখ হাসিনা জানেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ হয়ে আওয়ামলীগে আসা নেতা উনি। হুট করে দলে এসে যোগদান করা ব্যক্তি না। আর তাছাড়া তাকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মই মানা হয়নি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। দুই নেতার কথাতেই কাউকে অব্যাহতি দেয়া যায় না।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত বলেন, এই দলের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা। এটা কোনো রিকশা সমিতির কমিটি না। এই সংগঠনের সুনির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র রয়েছে। কেউ দলের বিরুদ্ধে কোনো কার্যক্রম বা বক্তব্য দিয়ে থাকলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। এগুলা আসলে রাজনীতির মধ্যে পড়ে না।
তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীর ভাই তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, কলেজ ছাত্রছাত্রী সংসদের নির্বাচিত জিএস, শহর যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। এছাড়া জেলা পরিষদের সদস্যও তিনি। বিএনপি-জামাত থেকে রাতারাতি আওয়ামী লীগ নেতা বনে যাওয়া লোক জাহাঙ্গীর ভাই না। ধাপে ধাপে ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এই পর্যায়ে এসেছেন তিনি। সুতরাং মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আর মুখ ফসকে ওই শব্দ উচ্চারণ করেছেন, এটা তো উনি নিজেই স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়েছেন। এক্ষেত্রে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের এই ধরনের কার্যক্রম ঠিক হয়নি বলেই আমার মত।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয় পার্টির সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকার বিরুদ্ধে মহানগর আওয়ামী লীগের মানববন্ধনে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। সোনারগাঁয়ে জিআর ইনস্টিটিউশনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালিত হয়। ওই মানববন্ধনে বক্তব্য দেওয়ার এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা বিরোধী দল উল্লেখ করেন জাহাঙ্গীর আলম। এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল দাবি করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। এই ঘটনার চার দিনের মাথায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ প্রকাশঃ ২৫-১১-২০২০ইং । (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24 এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন। সিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ওমর ফারুকী তাপস
মোবাইলঃ ০১৭১১৩৩৫০১৩
ইমেইলঃ taposcomilla@gmail.com
www.ctvnews24.com