নতুন পাকিস্তান পুরনো অস্ট্রেলিয়া

সিটিভি নিউজ।। খেলাধুলা: ‘করাচি দরবার’! আরব আমিরাতে এই রেস্তরাঁর ২৮টি শাখায় এখন উৎসবের আমেজ। পাকিস্তান সমর্থকদের ভিড় সামলানো মুশকিল। এখানে দলের প্রতিটি খেলার টিকিটও মিলছে ভক্তদের। দুবাইয়ের পাকিস্তান পাড়ায় উড়ছে পতাকা। তারা তাকিয়ে আছে বাবর আজমের বিশ্বকাপ সৈনিকদের দিকে। শেষ ২০০৯-এ ইংল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। এরপর কেটে গেছে এক যুগ। না, সেই শিরোপা আর ফিরে আসেনি ঘরে।
সবশেষ ওয়ানডে আসরের শিরোপাটাও সেই ১৯৯২-এ। জঙ্গিবাদ, কপট রাজনীতির গ্রাসে মৃতপ্রায় পাক ক্রিকেটের ঐতিহ্য। তবে দেশটির নিয়ন্ত্রণ এখন তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হাতে। হয়তো তারই ছোঁয়াতে আবারো পুনর্জাগরণের অপেক্ষায় পাকিস্তান ক্রিকেট। সাধারণত কোনো টুর্নামেন্টে নড়বড়ে শুরু দেখতে পাওয়া যায় পাকিস্তানের। তবে এবারের বিশ্বকাপে দেখা যাচ্ছে নতুন এক পাকিস্তানকে। আসরে টানা পাঁচ ম্যাচেই জয় তাদের। অন্যদিকে এবারের বিশ্বকাপের শুরুতে অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে খুব আলোচনা ছিল না। তবে আসর যত গড়িয়েছে, অস্ট্রেলিয়া ফিরেছে পুরানো চেহারায়। আজ দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া। ১২ বছর পর পাকিস্তানের সামনে আরও একটি শিরোপার হাতছানি। আজ অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে শিরোপার আরও কাছে পৌঁছাবে বাবর আজমের দল। অন্যদিকে পাঁচবার ওয়ানডে ক্রিকেটের শিরোপা জিতলেও অস্ট্রেলিয়ার জন্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যেন ধু-ধু মরুভূমি। এখন পর্যন্ত ৭ আসরে মাত্র একবারই ফাইনাল খেলার সুযোগ হয়েছিল তাদের। কিন্তু শিরোপার দেখা মেলেনি। তাই অজিরাও অপেক্ষায় আছে নতুন এক শুরুর। দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাক-অজি লড়াই শুরু বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়।
চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা পাঁচ জয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে পাকিস্তান। বলার অপেক্ষা রাখে না এগিয়ে থেকেই অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে বাবর আজমের দল। তাইতো পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজার হুঙ্কার পাকিস্তানকে কোনোভাবেই হারানো সম্ভব নয়। তবে তাদের এই উত্থানের নেপথ্যের কারিগর কিন্তু আরেক অস্ট্রেলিয়ান ম্যাথু হেইডেন। তিনি এখন পাকিস্তান দলের ব্যাটিং পরামর্শক। তার জাদুর ছোঁয়ায় বদলে দিয়েছেন বাবর-রিজওয়ানদের। আজ মাঠে তার শেখানো কৌশলেই অজিদের বদ করার লক্ষ্য পাকিস্তানের। এমন ম্যাচে হেইডেনের মনের অবস্থাটা কেমন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি তা লুকাননি। বলেন, ‘হ্যাঁ, খানিকটা অস্বাভাবিক তো লাগছেই। সবাই জানে, আমি প্রায় দুই দশক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের যোদ্ধা ছিলাম। এতে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ভেতরের সংস্কৃতিটা বোঝার সুযোগ পেয়েছি। আমার জায়গা থেকে দেখলে চ্যালেঞ্জটা হৃদয়ের। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যা যা ঘটবে, সেটাই মনের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ।’
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ২৩ লড়াইয়ে পাকিস্তানের জয় ১২টি। অজিদের জয় ৯টি। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে সমান জয় ও হার দুই দলের। ছয়বারের দেখায় তিনটি করে জয় পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার। ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় পাকিস্তান। ২০১০ সালে তৃতীয় বিশ্বকাপে দু’বার মুখোমুখি হয় পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। দু’বারই জয় পায় অজিরা। গ্রুপ পর্বে ৩৪ রানে এবং সেমিফাইনালে ৩ উইকেটে জেতে অস্ট্রেলিয়া। ২৪ বলে অনবদ্য ৬০ রান করে পাকিস্তানকে নিশ্চিত জয় থেকে বঞ্চিত করেন মাইকেল হাসি। ২০১২ সালে গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়াকে ৩২ রানে হারায় পাকিস্তান। ২০১৪ সালে পরের আসরেও জয় পেয়েছিল পাকিস্তান। ওইবার ১৬ রানে জেতে পাকরা। আর সর্বশেষ ২০১৬ সালে সুপার টেনের গ্রুপ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২১ রানের জয় ছিল অস্ট্রেলিয়ার।
দুই দলের খেলোয়াড়রাই আছেন আগুনে ফর্মে। বাবর আজম, শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ হাফিজদের চার-ছয়ের জবাব দিতে রয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, স্টিভেন স্মিথরা। আর বোলিংয়ে শাহিন আফ্রিদি, হারিস রউফ, হাসান আলি, শাদাব খানদের টেক্কা দিতে তৈরি মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড, অ্যাডাম জ্যাম্পারা। আসরের সর্বোচ্চ ২৬৪ রান করেছেন বাবর আজম। অপর ওপেনার রিজওয়ানের রান ২১৪। তবে সুযোগ পেলে পাক মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা যে ধ্বংসযজ্ঞ বইয়ে দিতে পারেন তা এরইমধ্যে দেখিয়ে দিয়েছেন শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ হাফিজ, আসিফ আলীরা। অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারও আছেন ফর্মে। ব্যাটিংয়ে ডেভিড ওয়ার্নার রান করেছেন ১৮৭। অ্যারন ফিঞ্চ করেছেন ১৩০ রান। বোলারদের মধ্যে লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা নিয়েছেন ১১ উইকেট। আর হ্যাজলউডের উইকেট সংখ্যা ৮। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এ টুর্নামেন্টে একবার শিরোপা জিতেছে পাকিস্তান। ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে জিততে না পারলেও ২০০৯ সালে শিরোপা জিতে নেয় তারা শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে। সেই দলের সদস্য শোয়েব মালিক পাকিস্তান দলকে শুধু তার অভিজ্ঞতায়ই নয়, পারফরমেন্সেও এগিয়ে রেখেছেন।

সংবাদ প্রকাশঃ ১-১১-২০২১ খ্রীষ্টাব্দ (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like See More =আরো বিস্তারিত জানতে= লিংকে ক্লিক করুন=

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ