দেশপ্রেম ও বিজয় দিবস

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন
সিটিভি নিউজ।।    গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির======
স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধকে ইসলামে একে ঈমানের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর হৃদয়ে স্বদেশ প্রেম যেমন ছিল তেমনি তার সাহাবায়ে কেরামদের মাঝেও বিদ্যমান ছিল। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদীনার পথে হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে তার মুখ ফেরালেন জন্মভূমি মক্কার দিকে, যেখানে তিনি নব্যুয়ত লাভ করেছেন এবং তার পূর্বপুরুষরা বসবাস করছিলেন।
তিনি বার বার ফিরে তাকাচ্ছেন মক্কার দিকে, চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে। মক্কার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন ‘হে মক্কা! তুমি আমার কাছে সমস্ত স্থান থেকে অধিক প্রিয়, আমি মক্কাকেই ভালোবাসি। আমার মন মানছে না। কিন্তু তোমার লোকেরা আমাকে এখানে থাকতে দিল না, সব কিছুর মালিক তুমি। মক্কার মানুষদের ঈমানের আলোয় উজ্জ্বল কর। ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত কর’ (মুসনাদ আহমদ ও তিরমিযি)। একটু ভেবে দেখুন! স্বদেশের প্রতি কতই না গভীর প্রেম ছিল তার। যে দেশের লোকেরা তার ওপর এতো জুলুম অত্যাচার করেছে তার পরেও মাতৃভূমির প্রতি কত  ভালোবাসা। একেই না বলে স্বদেশপ্রেম।
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌম রক্ষায় হযরত রাসুল  (সা.) যখনই আহ্বান করেছেন তখনই সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সর্বোতভাবে  সাড়া দিয়েছেন। তারা জানতেন, নিজেদের বিশ্বাস, আদর্শ ও দ্বীন-ধর্মমত প্রতিষ্ঠার জন্য একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের প্রয়োজন। ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যেমন আন্তরিক ছিলেন, তেমনি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন দেশপ্রেম ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষায়। মাতৃভূমির প্রতি রাসূল (সা.)-এর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখুন, হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি খায়বর অভিযানে খাদেম হিসেবে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে গেলাম। অভিযান শেষে রাসুল (সা.) যখন ফিরে এলেন, উহুদ পাহাড় তার দৃষ্টিগোচর হলো। তখন মহানবী (সা.) বললেন, এই পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও একে ভালোবাসি’ (বোখারি)।
প্রিয় নবী (সা.) মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিজয়ের চেতনাকে জাগ্রত করে, তাদেরকে মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয়, সম্মান, আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি যেমন অসংখ্য দাসকে নিজ খরচে মুক্ত করেছেন তেমনি সমগ্র বিশ্বকে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়- এটি এক ঐতিহাসিক অর্জন। সেই অর্জনকে টেকসই মাত্রা দিতে প্রয়োজন দেশের আপামর জনসাধারণের সক্রিয় কার্যক্রম।
সব নাগরিকের সম্মিলিত প্রয়াসেই জাতি হিসেবে আমরা আরও উন্নত, সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল হিসেবে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলতে পারব। সে জন্য আলস্য পরিহার করে, সব ভেদাভেদ ও সংকীর্ণতার চাদর ফেলে দিয়ে দেশ ও জাতি গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পরিহার করতে হবে ধর্মের নামে রক্তপাত, যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে, প্রতিষ্ঠিত  করবে ধর্মনিরপেক্ষতার অঙ্গিকার। তবেই না সব ধর্মের মানুষ প্রকৃত অর্থে বিজয়ের স্বাদ উপভোগ করবে।
যেভাবে ধর্ম নিরপেক্ষতা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৭ জুন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দ্বার্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন ‘বাংলাদেশের মুসলমান মুসলমানের ধর্ম পালন করবে। হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে। বৌদ্ধও তার নিজের ধর্ম পালন করবে। এ মাটিতে ধর্মহীনতা নাই, ধর্ম নিরপেক্ষতা আছে। এর একটা মানে আছে। এখানে ধর্মের নামে ব্যবসা করা চলবে না। ধর্মের নামে মানুষকে লুট করে খাওয়া চলবে না। ধর্মের নামে রাজনীতি করে রাজাকার আলবদর পয়দা করা বাংলার বুকে আর চলবে না। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে দেয়া হবে না’ সূত্র (বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ) বই থেকে।সংবাদ প্রকাশঃ  ০-১১-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email