ঝালকাঠিতে দুধ বিক্রীতেই চলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর জীবন !

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ।।    মো:নজরুল ইসলাম,ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান —     :: ঝালকাঠি সদর পোনাবালিয়া ইউনিয়নের এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর সংসার চলে গাভীর দুধ বিক্রীতে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও কারো কাছে হাত না পেতে জীবন যুদ্ধে বেচে থাকার লড়াইয়ের সৈনিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিলন সিকদার। তিনি কাঞ্চন সিকদারের ছেলে।
মিলন সিকদারের সাথে আলাপকালে বলেন, জন্মের পর থেকেই চোখে কম দেখি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের ধারণক্ষমতাও কমতে থাকে। স্থানীয় আফসার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় দু’চোখের অবস্থা আরও করুণ হওয়ায় পড়াশোনায় সামনে এগানো হয়নি।
পারিবারিক খরচে বরিশাল গ্রামীণ জিসি চক্ষু হাসপাতাল এবং ঢাকায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চোখের চিকিৎসা করানোর পরও চোখের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। দু’চোখ পুরোপুরি অন্ধ না হলেও মারাত্মক ধরনের ঝাপসা দেখা যায়। ধোঁয়া ধোঁয়া অবস্থায় দেখতে পাওয়ায় কিছুটা চলাফেরা করতে পারি। তবে চলা ফেরা করতে খুবই কষ্ট হয় কখনো নদী পারাপারের সময় পড়েও যাই অঅবার শহরের যাতায়াতের সময় অনেকের সাথে ধাক্কাও লাগে।
আবার মাঝে মধ্যে অনেক সময় হঠাৎ করে অন্ধকার হয়ে যায়। তখন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে আবার ঝাপসা বা ধোঁয়া ধোঁয়া দেখা যায়। তার মধ্যেই পথ চলতে হয় এমন জীবনের ভোগান্তির কাহীনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিলন বলেন।’
মিলন আরও বলেন, ‘আমি নিজে দুটি গাভি পালন করি এবং প্রতিবেশীদের পালিত গাভির দুধ সংগ্রহ করে শহরে বিক্রি করি। আমি দুধে কোনো ভেজাল (পানি) দেই না এবং কাউকে মাপেও কখনো কম দেই না। একটি সিলভারের গ্লাসে ধারণা (অনুমান) করে মেপে দেই। আমি চোখে দেখতে না পেলেও যারা আমার কাছ থেকে দুধ কেনে তারা তো দেখেন। প্রতি লিটার দুধ ৭০ টাকায় বিক্রি করি। দুই নম্বরি (ভেজাল) দিলে ক্রেতারা আমার চেয়ে ভালো দেখতো। তাহলে আমি আর দুধ বিক্রি করতে পারতাম না। আমার যতই কষ্ট এবং লোকসান হোক, দুধে ভেজাল আর মাপে কম দেব না। নদী পারাপারে সমস্যা হলে মাঝিরা সবাই আমাকে চেনে, তারাই আমাকে পারাপারে সহায়তা করেন।
ব্যক্তি জীবনে মিলন ৭ বছর বয়সী এক কন্যাসন্তানের জনক। মিলনের মতোই তার কন্যারও এক চোখের দৃষ্টিতে সমস্যা রয়েছে। বাবার রোগেই আক্রান্ত হচ্ছে সে এমনটাই ধারনা। তবে মেয়েটি জন্মগত না হলেও চার বছর বয়স থেকে এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে। দুধ বিক্রি করে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। মেয়ের চিকিৎসা কি করে করাবে বলে জানান।
‘তার পরও যা পাচ্ছি তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলছে। কিন্তু মেয়ের চোখ নিয়ে অনেক চিন্তায় আছি। মেয়ে মানুষ, দিন যাবে বড় হবে। একটা সময় বিবাহ উপযুক্ত হলে বিয়ে দিতে হবে। কীভাবে তার চিকিৎসা করাব, নাকি আমার মতোই চিরজীবন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী থাকবে এমন কথা বলে কান্না করেন মিলন।
ঝালকাঠি শহরের অনেকের পরিচিত মিলন দুধ বিক্রেতা হিসাবে তবে মিলনের জীবনের ইতিহাস নেই কারো জানা।
কয়েকজন দুধ ক্রেতা বলেন, মিলনের কাছ থেকেই আমরা নিয়ামিত দুধ রাখি, অন্য কারও কাছ থেকে দুধ রাখি না। যদি কোনো কারণে মিলন আসতে না পারে, তাতে যদি পাঁচ দিনও হয় তার পরও অন্য কোথাও থেকে দুধ নেই না। মিলনের দেয়া গরুর দুধ কোনো পানি মেশায় না, খাঁটি দুধ পাওয়া যায়।

সংবাদ প্রকাশঃ  ০১২০২১ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

Print Friendly, PDF & Email