চট্টগ্রাম বিভাগে ফেনীকে রাখার দাবীতে   জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি দিয়েছে ‘আমরা ফেনীবাসী’

সিটিভি নিউজ।।    সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: বুধবার (০৩ নভেম্বর)===
অন্য কোন বিভাগে নয় চট্টগ্রামেই থাকতে চায় ফেনীবাসী। ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসানের মাধ্যমে দাবী আদায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে দাবী বাস্তবায়ন কমিটি ‘ আমরা ফেনীবাসী’। এর আগের দিন রাতে একই দাবীতে ফেনী ০২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকেও স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
বুধবার (০৩ নভেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসকের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন জেলা প্রশাসন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিটি দ্রুত সময়ে পাঠানো হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, দাবী বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু তাহের, যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট নুর হোসেন, ফেনী বিএমএ সভাপতি ডাঃ শাহেদুল ইসলাম কাওসার, কমিটির সদস্য সচিব পারভেজুল ইসলাম হাজারী, কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব, সাংবাদিক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন,আসাদুজ্জামান দারা, আরিফুল আমিন রিজভী, শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো: মোশারফ হোসেন, ফেনী আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো: মাওলানা মাহমুদুল হাসান, বিএমএ ফেনীর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ বিমল দাস, এডভোকেট শাহজাহান সাজু, ফেনী শহর ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইকবাল আলম, জেষ্ঠ সাংবাদিক মোহাম্মদ আবু তাহের ভুঁইয়া, রশিদ মামুন, রফিকুল ইসলাম, জহিরুল হক মিলু, এনাম পাটোয়ারী, আতিয়ার সজল, জসিম মাহমুদ, মাইনুল রাসেল, সোলায়মান হাজারী ডালিম ও সাহিদা সাম্য লীনা, ক্রীড়া সংগঠক ইমন উল হক, সামাজিক সংগঠক শেফায়েত উল্লাহ ও মঞ্জিলা আক্তার মিমি, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর এডহক কমিটির সদস্য সমর জিৎ দাস টুটুল, পরিবহন শ্রমিক নেতা আজম চৌধুরীসহ কমিটির অন্যান্য সদস্য ও  শহরের বিশিষ্ট জনেরা।
প্রসঙ্গত সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা ও মেঘনা নামে দেশে আরও দুটি বিভাগ গঠনের ঘোষণা করেন। প্রস্তাবিত মেঘনা বিভাগে বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ৬ টি জেলা অন্তভূক্ত করা হতে পারে বলে আলোচনা উঠে। এর পরেই নতুন বিভাগের সাথে যুক্ত না করে ফেনী জেলাকে চট্টগ্রাম বিভাগের সাথে রাখার জন্য ফেনীবাসী সোচ্ছার হয়। জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে দাবী আদায়ে নাগরিক কমিটি ‘আমরা ফেনীবাসী’।

স্মারকলিপিতে নিম্নোক্ত  বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়।
০১.যেহেতু চট্টগ্রাম বাংলাদেশের ২য় রাজধানী তথা বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত। বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের ৮৫শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে হয়ে থাকে- যাতে ফেনীর নাগরিকদের অবদান উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সসহ গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে এখনো ফেনীর অনেকেই নেতৃত্বে রয়েছেন। এ অবস্থায় ফেনীকে নতুন বিভাগের অধীনে নেয়া হলে ফেনী অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

২. যেহেতু ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ১০ হাজার একর জমি ও চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে প্রায় ২০ হাজার একর জমির উপর যৌথভাবে গড়ে উঠছে ‘বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চল’। এখানে ফেনী অঞ্চলের জনসাধারণের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে। অচিরেই এই অঞ্চল একটা বিশাল শিল্প নগরে রূপ লাভ করবে। এ অবস্থায় ফেনীকে নতুন বিভাগের অধীনে নেয়া হলে শিল্পাঞ্চলটি দুটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। এতে করে একদিকে ফেনীবাসী ‘বঙ্গবন্ধু’র নামে গড়ে উঠা এই প্রতিষ্ঠানের যে আবেগময় সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা থেকেও বঞ্চিত হবে, অপরদিকে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

৩. যেহেতু বাংলাদেশের ৮ম বিভাগ ময়মনসিংহ- যেটি ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর কার্যকর হয়। টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবে বৃহত্তর ময়মনসিংহের অংশ হওয়া সত্ত্বেও নতুন বিভাগে যেতে আপত্তি জানায়। মূলতঃ জনগণের আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই উক্ত জেলা দুটিকে ঢাকা বিভাগের সাথে রাখা হয়।

৪. সাংস্কৃতিকভাবে ফেনীতে চট্টগ্রামের প্রভাব কুমিল্লা অপেক্ষা বেশি। বিয়ে, আকিকা, মেজবান ইত্যাদি অনুষ্ঠানে তার প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে।

৫. ভাটির বাঘ শমসের গাজীর সুশাসনে তৎকালীন চাকলা রৌশনাবাদে বসবাসের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় উক্ত জনগোষ্ঠী চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে স্থায়ীভাবে এ এলাকায় চলে আসে। ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায় ‘চাঁটিগ্রামী সমাজ’ ও ‘সন্দীপি সমাজ’ নামে এরা পরিচিত। যা চট্টগ্রামের সাথে ফেনীর সম্পর্কের উজ্জ্বল উদাহরণ।

৬. চট্টগ্রামের সাথে ফেনীর স্থলসীমান্ত রয়েছে ৬০ কিলোমিটার। অন্যদিকে কুমিল্লার সাথে তা মাত্র ১৫ কিলোমিটার। এ দিক দিয়েও চট্টগ্রামের সাথে ফেনীর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।

৭. সুপ্রাচীনকাল থেকেই ফেনীর মানুষ চট্টগ্রামমুখী। তখনকারদিনে মানুষ চাকরি বা ব্যাবসা-বাণিজ্যের জন্য চট্টগ্রাম ও রেঙ্গুন শহরে যেতো। হাজার বছরের এ ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।

৮. যেহেতু চট্টগ্রামের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে চট্টগ্রামের পরেই ফেনীর নাগরিকদের অবদান। এ অবস্থায় ফেনীকে নতুন বিভাগের অধীনে নেয়া হলে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত ফেনীর উল্লেখিত সেক্টরের নাগরিকদের জন্য তা বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

৯. যেহেতু ১৭৪৮-১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে বীর শমসের গাজীর শাসনামলে বর্তমান উত্তর চট্টগ্রামের পুরোভাগই গাজীর শাসনাধীন ছিলো। সংগত কারণে চট্টগ্রামের সাথে ফেনীর মানুষের একটি মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ১৮৭৬ সালে ফেনী মহকুমা সৃষ্টি হলে সেখানে বর্তমান মিরসরাইকেও ফেনী মহকুমার আওতাধীন করা হয়। এ দুটি ঘটনাও ফেনীর সাথে চট্টগ্রামের মেলবন্ধনের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

১০. যেহেতু মোগল ও বৃটিশ আমলে ফেনীর সোনাগাজীতে সমুদ্রবন্দর, বস্ত্র কারখানা ও লবন কারখানা স্থাপিত হয়। সোনাগাজী তখন জুগিদিয়া নামে পরিচিত ছিলো। উক্ত বন্দর ও শিল্পাঞ্চলের সাথে চট্টগ্রামের ছিলো নিবিড় যোগাযোগ- যা নানাভাবে এখনো বিদ্যমান।

১১. বানিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামের শিল্পায়ন ইতিমধ্যে ফেনীর সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ফেনীর মুহুরীগঞ্জ এলাকায় বিশাল শিল্প কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এছাড়া একাধিক কারখানা নির্মানাধীন রয়েছে। অপরদিকে ফেনীর দুটি শিল্পনগরীতে (ফেনী ও নিজকুঞ্জরা) চট্টগ্রামের উদ্যোক্তারা শিল্পায়ন করেছেন। এছাড়া এ দুটি শিল্প নগরী থেকে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হয়। ফেনী অন্য বিভাগের সাথে চলে গেলে চট্টগ্রামের বিনিয়োগকারীরা এ অঞ্চল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। ফলে বেকারত্ব সহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে ফেনী।

১২। ফেনী জেলার নিত্যদিনের ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে চট্টগ্রামের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, আসাদগঞ্জ সহ বিভিন্ন মোকাম থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য ফেনীতে আসে। ফেনী বাজারে প্রতিদিন শত কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় ফেনী নতুন বিভাগে যুক্ত হলে এ ব্যবসায়িক লেনদেনেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া চট্টগ্রামের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ ও বিশাল সবজিভান্ডারের উপরও ফেনীবাসী অনেকটাই নির্ভরশীল।

১৩। যেহেতু ইতিমধ্যে ফেনীর সোনাগাজী ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ নদীবন্দর এর গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। এই বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ থাকবে। ফেনী অন্য বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হলে এক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে।

১৪। যেহেতু বর্তমানে ১১টি জেলা নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগ গঠিত। বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লায় ৬টি জেলা রয়েছে। এক্ষেত্রে এ দুটি বৃহত্তর জেলা নিয়ে আলাদা বিভাগ করা হলে প্রাচীন বিভাগ চট্টগ্রামে জেলার সংখ্যা দাঁড়াবে ৫ এ-যা চট্টগ্রামের জন্যও কিছুটা মর্যাদাহানীকর। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম জেলা সংলগ্ন ফেনীকে পুরনো বিভাগ চট্টগ্রামে রাখা অধিক যুক্তিসঙ্গত বলে আমরা মনে করি।

অতএব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আকুল আবেদন ফেনীবাসীর আবেগ ও ভালোবাসার মূল্যায়ণ করে আমাদের প্রিয় জেলা ফেনীকে নতুন বিভাগে যুক্ত না করে চট্টগ্রামে রাখার জন্য অনুরোধ করছি।

সংবাদ প্রকাশঃ  ০৩-১১-২০২১ইং । (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ