কুমিল্লায় মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ।।   খন্দকার দেলোয়ার হোসেন (কুমিল্লা প্রতিনিধি)======
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবাবিভাগ এর উদ্যোগে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জেলা কার্যালয়, কুমিল্লা এর সার্বিক সহযোগিতায় মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ‘সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা (Comprehensive Action Plan)  প্রণয়ন সংক্রান্ত কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (০৯ জুন, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ) সকাল ১০:৩০ ঘটিকায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক এর সম্মেলন কক্ষে এই কর্মশালা শুরু হয়। দিন ব্যাপি আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন জনাব মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা প্রশাসক, কুমিল্লা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা ব্যাটালিয়ন (১০ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মুহাম্মদ ইসহাক, পিএসসি, কুমিল্লা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক জনাব মোহাম্মদ শওকত ওসমান, কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব এম. তানভীর, র‌্যাব-১১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোঃ সাকিব হোসেন এবং কুমিল্লা জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী। উক্ত কর্মশালায় সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা উপস্থাপন করেন জনাব মোঃ মানজুরুল ইসলাম, উপপরিচালক (নিরোধশিক্ষা, গবেষণা ও প্রকাশনা) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা। কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন এঁর সভাপতিত্বে উক্ত কর্মশালায় আরো অংশগ্রহণ করেন কুমিল্লা জেলার সতেরোটি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, কুমিল্লাস্থ আটটি পৌরসভার মেয়র, পাঁচটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগণ।

বিশিষ্ট আবৃত্তিকার জনাব মাহাতাব সোহেল এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত কর্মশালার স্বাগত বক্তব্য ও সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা উপস্থাপন করেন জনাব মোঃ মানজুরুল ইসলাম উপপরিচালক (নিরোধশিক্ষা, গবেষণা ও প্রকাশনা) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা। স্বাগত বক্তব্যে তিনি সকলকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশে মাদকের বিবিধ সমস্যার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ কিভাবে ভৌগোলিকভাবে মাদকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তার আলোকপাত করেন। এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের সাথে ভারত ও মিয়ানমারের ভৌগোলিক অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। অতঃপর তিনি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরেন। উক্ত রূপরেখায় তিনি মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন- মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন যুগোপযোগি করণ, জেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের মাদক বিরোধী কমিটি গঠনসহ আরো বিভিন্ন বিষয় আলোকপাত করেন। মাদকের চাহিদা হ্রাসে সমন্বিত পরিকল্পনায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। যেকোন প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সফ্টওয়্যারে লগইন করে কার্যক্রমের বিবরণ দিয়ে সরকারি সহায়তা প্রাপ্ত হবে বলে কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়। এছাড়া তিনি উক্ত রূপরেখায় মাদকাসক্তদের চিকিৎসার কৌশল এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কর্মকৌশল সম্পর্কে আলোচনা করেন।

সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা উপস্থাপনের পর জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান উন্মূক্ত আলোচনার আহ্বান করলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে মাদকদ্রব্যের চাহিদা হ্রাসের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সংক্রান্ত চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও কাউন্সিলিং সেন্টার স্থাপনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

উপজেলা পরিষদ, মেঘনা এর চেয়ারম্যান জনাব সাইফুল্লাহ সিকদার রতন মাদকাসক্তের চিকিৎসা ও পূর্ণবাসনের ব্যাপারে সামাজিক ও পারিবারিক দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব সোহেল রানা বলেন মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বিত পরিকল্পনা জোরদার করা, পূর্ণবাসন প্রত্যাশিদের তালিকা তৈরি করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং মাদক মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীর পাশাপাশি মাদক ব্যবসায়ের পৃষ্ঠপোষকদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে ।

লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোঃ ফোরকান এলাহি অনূপম তাঁর বক্তব্যে জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে মাকদকাসক্তদের বিভিন্ন নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করানোর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।

সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব শুভাষিশ ঘোষ তাঁর বক্তব্যে মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যবসা থেকে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন প্রকার প্রণোদনার পাশাপাশি মাদক ব্যবসায়ীদের উন্মূক্ত তালিকা প্রকাশ করার কথা বলেন। এছাড়া তিনি মাদকাসক্তদের সনাক্তের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় টেস্টিং কীটের প্রাপ্যতার বিষয়টির প্রতি নজর দেওয়ার কথা বলেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব সোহান সরকার বলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের পাশাপাশি মানিলন্ডারিং আইন সফলভাবে প্রয়োগ করতে পারলে মাদক ব্যবসায়ীদের সহয়োগী এবং পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনা যাবে।

বরুড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব ইকবাল বাহার মজুমদার নিয়মিত মামলার পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলায় ভ্রাম্যমান আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারলে তৃণমূল পর্যায়ে মাদক অপরাধ লাঘব হবে বলে আলোচনায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

র‌্যাব-১১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাকিব তাঁর বক্তব্যে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা প্রণয়নের বিষয়টিতে আশাবাদ ব্যক্ত করার পাশাপাশি উক্ত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আলোকপাত করেন। এছাড়া তিনি মাদক নিরাময় কেন্দ্র গুলোর সেবার মান উন্নয়নকল্পে কেন্দ্রগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনার কথা বলেন। মাদক মামলার আসামীদের দ্রুত জামিন প্রাপ্তির পেছনে সাক্ষীদের সাক্ষ্যদানে অনীহাকে দায়ী করেন।

কুমিল্লা ব্যাটালিয়ন (১০ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মুহাম্মদ ইসহাক, পিএসসি সমাজে মাদকদ্রব্যের চাহিদা তৈরির পেছনে মাদকের প্রতি মানুষের কৌতূহল এবং মানসিক বিষন্নতাকে দায়ী করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে মাদক ব্যবসায়ের উচ্চ মুনাফাকে মাদক বিস্তারের অন্যতম একটি কারণ বলে অভিহিত করেন।

কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব এম. তানভীর বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের গৃহিত কার্যক্রম গুলো আরো উন্নত কারিগরি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালানার পাশাপাশি তা সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে পারলে সরকারের উদ্যোগ সফর হতো। তিনি বিদ্যমান মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সেবকদের আচার-আচরণ ও সেবার মান আরো উন্নত করতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। মাদক অপরাধ দমনে তিনি সুশীল সমাজকে আরো এগিয়ে আসতে হবে বলে মতামত প্রকাশ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন যে, মাদক অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে পরিবারের পক্ষ থেকেই মাদকাসক্ত সদস্যকে চিকিৎসার ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে, সমাজের নীতি নির্ধারকদের মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের চিন্তা করতে হবে, মাদকাসক্তদের অবজ্ঞা না করে তাদেরকে সামাজিক ভাবে গ্রহনযোগ্য করে তুলতে যথাযথ চিকিৎসা ও পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের অনূকুলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ করে উপজেলা পর্যায়ের স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি সমন্বিত পরিকল্পনার রূপরেখা প্রণয়নের বিষয়টিতে আশাবাদ ব্যক্ত করে উক্ত পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে তা সমাজের জন্য অনেক ফলপ্রসূ হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বক্তব্যের শেষে তিনি সবাইকে উক্ত কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

সংবাদ প্রকাশঃ  ০৯-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email