কিশোর গ্যাং এর গ্রুপ-লীডারসহ ২০ জন কিশোরগ্যাং সদস্যকে আটক

সিটিভি নিউজ।।     *প্রেস বিজ্ঞপ্তি*।। *রাজধানীতে ত্রাস সৃষ্টিকারী কিশোর গ্যাং এর গ্রুপ-লীডারসহ ২০ জন কিশোরগ্যাং সদস্যকে দেশীয় অস্ত্রসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।*

বিগত কয়েক বছর ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ‘কিশোর গ্যাং’ গ্রুপের সদস্য কর্তৃক ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিশোর গ্যাং বা গ্যাং কালচার উঠতি বয়সী ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এসকল গ্যাংসমূহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সংঘর্ষ সমাজে ব্যাপক মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গ্যাংসমূহের পারস্পরিক মারামারি, ক্ষমতা জাহির করতে প্রকাশ্য অস্ত্রের ব্যবহার, মাদক সেবন, যত্রতত্র ছিনতাই, প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান প্রভৃতি সমাজে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এমন ঘটনায় কেউ কোন প্রতিবাদ করলে অনেক সময় খুন করতেও এরা দ্বিধাবোধ করেনা। রাস্তাঘাটে নারীদের ইভটিজিং ও শ্লীলতাহানি এসকল সদস্যদের নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম। এছাড়াও তারা বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং এর মাধ্যমে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে তোলে এবং নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় করে থাকে। এ সকল সন্ত্রাসীদের হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরী ও মামলা রুজু হয়। অতি সম্প্রতি রাজধানীর কদমতলী, হাতিরঝিল ও এর আশেপাশের এলাকায় কিশোরগ্যাং কর্তৃক বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র‌্যাব। ফলশ্রুতিতে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়।

র‌্যাব-৩ এর গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজধানীর কদমতলী ও হাতিরঝিল থানাধীন এলাকায় কতিপয় কিশোর গ্যাং এর কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। জানা যায় যে, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের নামে পেশীশক্তি প্রদর্শন করে আসছে। তারা মাদক সেবন, সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল চালিয়ে বিকট শব্দ করে জনমনে ভীতির সঞ্চার, স্কুল-কলেজে বুলিং, র‌্যাগিং, ইভটিজিং, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাদক সেবন, অস্ত্র প্রদর্শন এবং অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিশ্চিত ক্ষতির মুখে ধাবিত করছে। এরই প্রেক্ষিতে কিশোর গ্যাং এর বিপথগামী সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-৩ সাস্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা নজরদারী আরও বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ১৭ মার্চ ২০২৪ তারিখ ১৯০০ হতে ২২০০ ঘটিকা পর্যন্ত র‌্যাব-৩ এর পৃথক পৃথক আভিযানিক দল রাজধানীর কদমতলী ও হাতিরঝিল থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কিশোরগ্যাং ‘ফয়েজ-আরাফাত’ গ্রুপের ০৭ জন, ‘সিয়াম’ গ্রুপের ০৪ জন, ‘অনিক’ গ্রুপের  ০৪ জন এবং ‘কুনিপাড়া স্কোয়াড’ গ্রুপের ০৫ জন সহ সর্বমোট ২০ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত কিশোরগ্যাং সদস্যরা হলো ১। মোঃ ইয়াসিন আরাফাত (১৮), পিতা-মোঃ ফরহাদ হোসেন, সাং-বাসা নং-২৩, শ্যামপুর গোলবাগ রোড, থানা-কদমতলী, ডিএমপি, ঢাকা, ২। রাশেদ হাজারী (২২), পিতা-আব্দুল জলিল, সাং-গ্রামখিলা, থানা-শাহরাস্তী, জেলা-চাঁদপুর, ৩। মোঃ রাসেল ইসলাম (১৯), পিতা-আব্দুল জলিল, সাং-গ্রামখিলা, থানা-শাহরাস্তী, জেলা-চাঁদপুর, ৪। মোঃ তামিম মিয়া (২০), পিতা-মোঃ কামরুজ্জামান, সাং-চারিতলা, থানা-কেন্দুয়া, জেলা-নেত্রকোনা, ৫। রাতুল হাসান (১৮), পিতা-মোঃ রিপন হোসেন, সাং-কাউখালী, থানা-কাউখালী, জেলা-পিরোজপুর, ৬। মমিনুল ইসলাম হৃদয় (২১), পিতা-মৃত মান্নান, সাং-চন্ডিপুর, থানা-শাহরাস্তী, জেলা-চাঁদপুর, ৭। মোঃ রাকিব (২০), পিতা-মোঃ জসীম, সাং-রাজাররোড, থানা-লালমোহন, জেলা-ভোলা, ৮। সাইফুল ইসলাম সিয়াম (১৯), পিতা-মৃত আব্দুল বাছের, সাং-কোলন পোড়াবাড়ী, হাতিরঝিল, ডিএমপি, ঢাকা, ৯। আশিকুল ইসলাম স্বাধীন (১৯), পিতা-মোঃ লিটন মিয়া, সাং-শ্রীঘর কান্দাপাড়া, থানা-নবীনগর, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১০। মোঃ ফয়সাল হোসেন রাব্বি (২০), পিতা-মামুন মিয়া, সাং-নাছিরাবাদ, থানা-নবীনগর, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১১। মোঃ নাঈম (১৯), পিতা-মোঃ বাবুল শিকদার, সাং-সিদুলকুড়া, থানা-ডামুড্যা, জেলা-শরীয়তপুর, ১২। মোঃ হাসান আহমেদ অনিক (২০), পিতা-মোঃ আলম মিয়া, সাং-রায়তলব, থানা-মুরাদনগর, জেলা-কুমিল্লা, ১৩। মোঃ আমিনুল ইসলাম (১৯), পিতা-মোজাম্মেল ব্যাপারী, সাং-ডামাড্ডা, থানা-ডামুড্যা, জেলা-শরীয়তপুর, ১৪। মোঃ রাফিন (১৮), পিতা-মোঃ মুক্তার হোসেন, সাং-ফরিদগঞ্জ বাজার, থানা-চাঁদপুর, জেলা-চাঁদপুর, ১৫। মোঃ আল আমিন (১৮), পিতা-মোঃ দুলাল, সাং-বালিয়া বাজার, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ, ১৬। মোঃ রনিউজ্জামান (২০), পিতা-মোঃ লিটন মিয়া, সাং-বাঘাইকান্দি, থানা-রায়পুরা, জেলা-নরসিংদী, ১৭। মোঃ রাকিব (২০), পিতা-মোহাম্মদ আলী, সাং-শিকাড়ীপাড়া, থানা-নবাবগঞ্জ, জেলা-ঢাকা, ১৮। মোহন মিয়া (২২), পিতা-মৃত আনোয়ার মিয়া, সাং-নারচি, থানা-নওগাঁ, জেলা-নওগাঁ, ১৯। মোঃ নাঈম মিয়া (২০), পিতা-মোঃ কালাম মিয়া, সাং-দুপুরিয়া, থানা-ঝিনাইগাতী, জেলা-শেরপুর এবং ২০। নাহিদ (১৮), পিতা-মোঃ মোসলেম, সাং-ভাসাডি স্কুল, থানা-মুক্তাগাছা, জেলা-ময়মনসিংহ। গ্রেফতারকালে তাদের নিকট হতে ০১ টি চাপাতি, ০১ টি ছুরি, ০১ টি শাবল, ০৩ টি ছোরা, ০১ টি হাসুয়া, ০৪ টি চাকু, ০২ টি ক্ষুর, ০২ টি হেক্সোব্লেড, ২৫ পুরিয়া গাঁজা, ০৬ টি মোবাইল এবং চাঁদা উত্তোলনের নগদ ৪৫৪০/- উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, রাজধানীর শ্যামপুর ও কদমতলী এলাকায় ফয়েজ-আরাফাত  কিশোরগ্যাং গ্রুপে প্রায় ১৫-২০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। ফয়েজ-আরাফাত গ্রুপটি সন্ত্রাসী মোঃ ইয়াসিন আরাফাত ও তার ফুফাতো ভাই ফয়েজের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবৎ পরিচালিত হয়ে আসছিল। এর মধ্যে এই গ্রুপের অন্যতম মূলহোতা আরাফাত উক্ত অভিযানে গ্রেফতার হয় এবং ফয়েজ বর্তমানে রিহাব সেন্টারে আছে। গ্রেফতারকৃত ফয়েজ-আরাফাত গ্রুপের সদস্যরা রাজধানীর শ্যামপুর ও কদমতলী এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ইভটিজিং, মারধর, ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত।

৬। এছাড়াও হাতিরঝিল এলাকায় সিয়াম এবং অনিক গ্রুপ দুইটি দীর্ঘদিন যাবৎ সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলাম সিয়াম এবং হাসান আহমেদ অনিক এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। এরা রাজধানীর হাতিরঝিল এবং এর আশেপাশের এলাকায় সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল দ্বারা বিকট শব্দ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতো। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যেতো। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হাতিরঝিল এলাকাসহ আশপাশ এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিল।

৭। রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা হতে গ্রেফতারকৃত কুনিপাড়া স্কোয়াড গ্রুপটি হাতিরঝিল ও এর আশপাশের এলাকায় ধৃত মূলহোতা রনিউজ্জামানের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। মূলহোতা রনিউজ্জামান অনলাইনভিত্তিক অবৈধ বিটকয়েন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। টেলিগ্রামে নোটকয়েন নামক ফিচার ব্যবহার করে বিটকয়েনের মাধমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অনলাইন জুয়ারিদের সঙ্গে জুয়া খেলতো। এ গ্রুপের সদস্যরা উক্ত এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং বিভিন্ন মানুষকে হুমকি, মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম করে আসছে। এছাড়াও তারা রনিউজ্জামানের নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়।

৮। গ্রেফতারকৃত কিশোরগ্যাং সদস্যরা পেশায় অটো-রিক্সা চালক, ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী, দিনমজুর, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা হলেও মূল পেশার আড়ালে তারা মূলত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় চুরি, ডাকাতির চেষ্টা, অপহরণ পূর্বক মুক্তিপণ আদায়, মারামারি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, দস্যুতা, অস্ত্র ও হত্যা চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

সংবাদ প্রকাশঃ ১৮০৩২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like>  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ