কল্যাণ ও সৌভাগ্যের বার্তা মাহে রমজান

সিটিভি নিউজ।।   মোঃ আবদুল আউয়াল সরকার:লেখক।
রমজান (আরবি: رمضان‎‎ রামাদান, [ভিন্ন রূপ]) হল ইসলামী বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস, যেই মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলিমগণ রোজা পালন করে থাকে।[২] রমজান মাসে রোজাপালন ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়তম। রমজান মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ অথবা ৩০ দিনে হয়ে থাকে যা নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
এই মাসে মুসলমানগণ ধর্ম চর্চার অংশ হিসেবে ভোর থেকে সুর্যাস্তের পর পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও যৌনক্রিয়াদি বর্জন করে থাকেন। একে আরবীতে ‘সিয়াম’ বলে; বাংলাদেশে যা মুলতঃ ‘রোযা’ বলে পরিচিত। ইসলামি বর্ষপঞ্জির ১২ টি মাসের মধ্যে শুধুমাত্র এই মাসের নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রহমত, বরকত ও অফুরান কল্যাণ-সৌভাগ্যের বারতা নিয়ে পুণ্য বৈভবে এলো মাহে রমজান। এটি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাস। পরস্পর ভালোবাসার পরাগ ছড়ানোর মাস। বদান্যতার বিভা ও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হওয়ার মাস। সহমর্মিতা ও সহযোগিতার আলো ছড়ানোর মাস। অমূল্য রতন তাকওয়া অর্জনের মাস এবং আল্লাহপ্রেমে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হওয়ার মাস। ক্ষমা-মার্জনা ও অনুকম্পায় সিক্ত হওয়ার মাস।
রমজানের রোজা হিজরি দ্বিতীয় সালে ফরজ হলেও রোজার ইতিহাস কিন্তু বেশ প্রাচীন। মুসলমানদের আগেও অন্যান্য ধর্মে রোজার বিধান প্রচলিত ছিল। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। নিঃসন্দেহে তোমরা (এ রোজার মাধ্যমে) মুত্তাকি (খোদাভীরু) হতে পারবে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
রোজার গুরুত্ব আল্লাহর কাছে এত বেশি যে অন্যান্য আমলের সাওয়াব আল্লাহ তাআলা নির্দিষ্ট পরিমাণে দেবেন। কিন্তু রোজার সাওয়াব দেবেন অগণিত-অসংখ্য। আল্লাহ নিজ কুদরতি হাতে তা বান্দাদের দান করবেন।
নবী করিম (সা.) বহু হাদিসে মাহে রমজানের রোজার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। এক হাদিসে এসেছে—‘যে ব্যক্তি সাওয়াবের প্রত্যাশা ও বিশ্বাস নিয়ে রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী জীবনের  পাপরাশি মোচন করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি-মুসলিম)
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং এর রাত্রিগুলোতে ঈমান ও ইহতিসাবের (সাওয়াবের প্রত্যাশা ও বিশ্বাস নিয়ে) সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগি করে, সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্যোভূমিষ্ঠ সন্তানের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
হাদিস শরিফে আরো উল্লেখ আছে যে রমজান মাস রহমত, বরকত, গুনাহ মাফ হওয়া ও দোয়া কবুলের মাস। এই পবিত্র মাসে ফেরেশতারা মানুষের উদ্দেশে প্রতিদিন বলেন, ‘হে কল্যাণপ্রত্যাশী! আল্লাহ তাআলার কথা স্মরণ করো, তাঁর ইবাদত-বন্দেগিতে রত হও এবং একনিষ্ঠ মনে তাওবা করো। তোমরা এই মাসে যা কামনা করবে ও প্রার্থনা করবে—আল্লাহ তাআলা তা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন—‘রমজানের প্রতিটি দিন-রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক মুসলমানের একটি করে দোয়া কবুল করা হয়।’ (তারগিব)
রোজাদারের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন—‘রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মেশকে-আম্বরের সুঘ্রাণ অপেক্ষা অধিকতর পছন্দনীয়।’ (আহমদ-বায়হাকি)
আরেক হাদিসে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন—‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশি। একটি ইফতারের সময়। অন্যটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। (বুখারি ও মুসলিম)
এক হাদিসে আছে, ‘যদি বিনা কারণে কিংবা রোগাক্রান্ত হওয়া ছাড়া কেউ রোজা পালন না করে, তাহলে সারা জীবন রোজা রাখলেও তার ক্ষতিপূরণ হবে না।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)
রমজান মাসের রোজা মানুষকে যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়, মানুষের মন থেকে কুপ্রবৃত্তির প্রভাব দূর করে দেয়। আত্মাকে ধুয়ে-মুছে পূত-পবিত্র করে দেয় এবং হৃদয়কে ঈমানের শাখা-প্রশাখায় ভরিয়ে তোলে। সর্বোপরি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
রমজানে সংযম ও আত্মত্যাগের অনুশীলন এবং সে সঙ্গে ইসলামভিত্তিক ন্যায়নিষ্ঠা, সত্য ও সততা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করা প্রয়োজন। নৈতিকতা, শালীনতা ও একত্রে ইফতার গ্রহণের মাধ্যমে সহমর্মিতার সদভ্যাস গড়ে তুলে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক কল্যাণ সাধনের পথ প্রশস্ত করার অনুশীলন করার মাস রমজান। বাঙালি মননে চিরায়ত ইসলামী মূল্যবোধ, চিন্তা-ধারণা, ধর্মবিশ্বাস ও চরিত্র-আদর্শ এবং সর্বগ্রাসী অপরাধপ্রবণতা রোধের অনুশীলনের চেতনা জোরদার করার দারুণ উপলক্ষ তৈরি হয় এ মাসে।
রমজানের সব কল্যাণ, সৌভাগ্য ও মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে সকাতর আর্তি জানানো প্রয়োজন, যাতে তিনি আমাদের মাহে রমজানের সামগ্রিক কল্যাণ ও সৌভাগ্য অর্জনের পাশাপাশি রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার তৌফিক দান করেন এবং তাঁর অফুরান অনুকম্পা, ক্ষমা ও করুণার বারিধারায় আমাদের সিক্ত করেন।
আসলে মাহে রমজানকে যথার্থভাবে উদযাপনের জন্য একটু আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সময়ে রমজান যতই ঘনিয়ে আসত, রমজান নিয়ে তাঁর আগ্রহ, আলোচনা ও আমলের মাত্রা ততই বেড়ে যেত এবং তিনি সাহাবিদের রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিতেন। রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে রমজানকে স্বাগত জানাতে মুমিনদের অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। স্বাগতম মাহে রমজান।

লেখক : চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ, শিক্ষক ও গনমাধ্যমকর্মী।সংবাদ প্রকাশঃ ২৪০৩২০২৩ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ